হাসিনার আয়নাঘরের বর্ণনায় ব্যারিস্টার আরমান – সংগৃহীত
মীর আহমেদ বিন কাসেম ওরফে ব্যারিস্টার আরমান বলেন, বদ্ধ ও আলোহীন এই কক্ষে দিনের সাথে রাতের কোনো পার্থক্য ছিল না। একজন গড়পড়তা মানুষ…
‘বদ্ধ ও আলোহীন এই কক্ষে দিনের সাথে রাতের কোনো পার্থক্য ছিল না। একজন গড়পড়তা মানুষ সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না- এতটাই ছোট কক্ষটি। এটা ছিল যেন জীবন্ত কবর,’ কথাগুলো বলছিলেন মীর আহমেদ বিন কাসেম ওরফে ব্যারিস্টার আরমান।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত ও পলাতক হাসিনা সরকারের একজন সমালোচক হিসেবে পরিচিত ছিলেন তিনি। এজন্য দীর্ঘ আট বছর গোপন বন্দিশালায় (আয়নাঘর) আবদ্ধ করে রাখা হয় তাকে। সেই নির্মম দিনগুলোর বর্ণনা দিয়েছেন বিবিসির কাছে।
বুধবার (১৬ এপ্রিল) বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ বিষয়ে বলা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, যখন তড়িঘড়ি করে তৈরি করা একটি প্রাচীর ভাঙা হলো তখনই তদন্তকারীদের সামনে উন্মোচিত হলো এক গোপন বন্দীশালা। প্রথমে মনে হয়েছিল, এটি হয়তো স্রেফ নতুন করে গাঁথা কোনো দেয়াল। কিন্তু সেটি ছিল আসলে একটি দরজা- যা ইচ্ছাকৃতভাবে ইট দিয়ে বন্ধ করে রাখা হয়েছিল, যেন এর পেছনের ভয়ানক বাস্তবতা সবার চোখ এড়িয়ে যায়।
দেয়ালের ওপাশে ছিল একটি সরু করিডোর। তার দ ‘পাশে ছোট ছোট ঘর। ঘরগুলো ছিল সম্পূর্ণ অন্ধকার, কোথাও সামান্য আলোও প্রবেশ করে না।
এই গোপন বন্দিশালার সন্ধান হয়তো কখনোই মিলত না, যদি না মীর আহমেদ বিন কাসেম ও অন্য সাবেক বন্দীরা তাদের স্মৃতি থেকে এর বর্ণনা না দিতেন।
কারণ বন্দী অবস্থায় বেশিভাগ সময় আরমানের চোখ বাঁধা থাকত। নিজের চারপাশের অবস্থা বুঝতে শব্দের ওপর নির্ভর করতেন তিনি। বিমানের ওঠা-নামার শব্দ তার স্মৃতিতে গেঁথে ছিল। সেই শব্দই শেষ পর্যন্ত তদন্তকারীদের পৌঁছে দেয় ঢাকার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের খুব কাছের একটি সামরিক ঘাঁটিতে।
গত আগস্টে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারকে গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত করার পর মুক্তি পান বহু বন্দী। এর পর থেকেই শত শত ভুক্তভোগীর সাথে কথা বলছেন তদন্তকারীরা। অনেকেরই দাবি, তাদের সহকর্মীরা এখনো বেঁচে নেই না হলে অনেককে অবৈধভাবে হত্যা করা হয়েছে।
তদন্তকারীদের ভাষ্য অনুযায়ী, এসব গোপন বন্দীশালা পরিচালনা করতেন র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সদস্যরা। তাদের কাজের নির্দেশনা সরাসরি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকেই আসত।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান কৌঁসুলি তাজুল ইসলাম বিবিসিকে বলেন, ‘এই যে গুমের ঘটনা, সবকিছুই হয়েছে সোবেক প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার অনুমোদন, আদেশ কিংবা নির্দেশে।’
তবে শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগ বলছে, এই অপরাধগুলোর সাথে সরকারের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। তারা দাবি করছে, এসব অপারেশন হয়েছে সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে, যার দায়ভার সরকার নেয় না। যদিও সেনাবাহিনীও এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে।
এদিকে সাত মাস কেটে গেলেও, মীর আহমেদ বিন কাসেমসহ অনেকেই আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। কারণ যারা এই গোপন কারাগার চালাতেন- তারা এখনো মুক্ত, বহাল তবিয়তে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য হিসেবে কাজ করছেন।
মীর আহমেদ বিন কাসেম বলেন, ‘আমি বাইরে গেলে সবসময় টুপি আর মাস্ক পরে থাকি। আমাকে যেকোনো মুহূর্তে আবার তুলে নিয়ে যেতে পারে- এই ভয়টা মাথা থেকে যায় না।’
‘বিস্তৃত ও নিয়মতান্ত্রিক’ জেল নেটওয়ার্ক
মীর আহমেদ বিন কাসেম বিবিসিকে নিয়ে গিয়েছিলেন সেই কারাগারে যেখানে তিনি বন্দী ছিলেন। সিঁড়ি বেয়ে উঠে, ভারী এক লোহার দরজা ঠেলে, ছোট একটি কক্ষে ঢুকে দেখান আট বছরের বন্দীজীবনের স্মৃতি।
৪০ বছর বয়সী মীর আহমেদ বিন কাসেম একজন আইনজীবী। এর আগে বিভিন্ন সময় সাক্ষাৎকার দিলেও এই প্রথমবার তিনি নিজ হাতে সাংবাদিকদের দেখালেন সেই নির্যাতনকক্ষ।
গ্রীষ্মকালে ছিল অসহনীয় গরম। আরমান দরজার নিচে মুখ রেখে হাওয়া নেয়ার চেষ্টা করতেন। তিনি বলেন, এটা ছিল মৃত্যুর চেয়েও খারাপ। আবার সেখানে ফিরে যাওয়া তার জন্য কষ্টকর হলেও আরমান চান, বিশ্ববাসী যেন এই নির্যাতনের বাস্তবতা প্রত্যক্ষ করে। যারা এই ফ্যাসিবাদী শাসনকে সহায়তা করেছে, তারা এখনো ক্ষমতায় আছে।
কষ্টের স্মৃতিগুলোকে যেন আবার নতুন করে অনুভব করেই বর্ণনা করছিলেন মীর আহমেদ বিন কাসেম। বন্দীত্বের সেই সময় তিনি কীভাবে দিন কাটিয়েছেন, তা দেখাতে ঘরজুড়ে ঘুরে বেড়িয়ে একের পর এক বিস্তারিত বর্ণনা দিচ্ছিলেন।
তিনি বলেন, আমরা চাই আমাদের গল্প বিশ্ব জানুক, যারা ফেরেনি তাদের জন্য ন্যায়বিচার হোক, আর যারা এখনো বেঁচে আছে তারা যেন স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারে।
মীর আহমেদ বিন কাসেম জানান, প্রথম ১৬ দিন ছাড়া পুরো সময় তাকে রাখা হয়েছিল র্যাবের ঘাঁটিতে। প্রথম স্থান ছিল ঢাকার গোয়েন্দা পুলিশের হেফাজত।
তিনি মনে করেন, পরিবারের রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণেই তাকে গুম করা হয়। ২০১৬ সালে তিনি ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতা তার বাবার পক্ষের আইনজীবী- যিনি পরে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হন।
প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, আমরা দেশের বিভিন্ন স্থানে ৫০০ থেকে ৭০০ এমন সেল খুঁজে পেয়েছি, যা প্রমাণ করে এটি ছিল একটি পরিকল্পিত, পদ্ধতিগত বন্দিশালা নেটওয়ার্ক।
মাটিতে ছড়িয়ে থাকা ভাঙা নীল টাইলস দেখে নিশ্চিত হওয়া যায় এটি নিহত জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর ছেলে ব্যারিস্টার আরমানের সেল। অন্য কক্ষগুলোর চেয়ে একটু বড়- প্রায় ১০ বাই ১৪ ফুট, পাশে ছিল একটি বসে ব্যবহারযোগ্য টয়লেট।
‘ভাবতাম, কখনো বের হতে পারব না’
ব্যারিস্টার আরমান ছাড়াও বিবিসি আরো পাঁচজনের সাথে কথা বলেছে, যারা প্রত্যেকেই অন্ধকার কক্ষে, চোখ বাঁধা অবস্থায় দিনের পর দিন আটক ছিলেন। অনেকেই দাবি করেছেন, মারধর ও বৈদ্যুতিক শকের মতো নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
বিবিসি এটিও জানিয়েছে, তাদের পক্ষে স্বাধীনভাবে এসব ঘটনার সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি। তবে অধিকাংশ ভুক্তভোগী জানিয়েছেন, তারা এখনো আতঙ্কে দিন কাটান। তারা ভাবেন, হয়তো একদিন হঠাৎ করে রাস্তায় বা বাসে নিজের কোনো নির্যাতকের সামনে পড়ে যাবেন।
নির্যাতনের শিকার ৩৫ বছর বয়সী আতিকুর রহমান রাসেল বলেন, ‘এখন গাড়িতে উঠলে বা বাড়িতে একা থাকলে ভয় লাগে। ভাবি, আমি তো ওই জায়গায় ছিলাম! আমি কিভাবে বেঁচে ফিরলাম, সত্যিই কি বাঁচার কথা ছিল আমার?’
রাসেল বলেন, নির্যাতনের সময় আমার নাক ভেঙে যায়, এখনো হাতে ব্যথা রয়েছে। ওই সময় হাতকড়া পরিয়ে আমাকে প্রচণ্ড মারধর করা হয়েছিল।তাকে ২০২৩ সালের জুলাইয়ে, ঢাকার পুরান ঢাকায় একটি মসজিদের সামনে থেকে ধরে গাড়িতে তুলে নেয় কিছু লোক, যারা নিজেদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়েছিল। এরপর তাকে একটি ভবনে নিয়ে যাওয়া হয়, চোখ বাঁধা অবস্থায় জিজ্ঞাসাবাদ ও মারধর করা হয়।
রাসেলের বিশ্বাস, রাজনৈতিক কারণে তাকে আটক করা হয়েছিল। তিনি ছিলেন বিএনপির ছাত্রনেতা, তার বাবা ছিলেন দলটির একজন জ্যেষ্ঠ নেতা। আর প্রবাসে থাকা তার ভাই প্রায়ই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সমালোচনামূলক পোস্ট দিতেন।
রাসেল বলেন, আমি কোথায় ছিলাম তা জানার কোনো উপায় ছিল না। তবে চলতি বছর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস যখন তিনটি গোপন বন্দীশিবির পরিদর্শন করেন, তখন ওইগুলোর ফুটেজ দেখে আমার ধারণা হয়েছে, আমি ঢাকার আগারগাঁও এলাকায় আটক ছিলাম।
তিনি আরো বলেন, ‘আমাকে বলা হয়েছিল, তোমাকে গায়েব করে দেয়া হবে’।
খোলাখুলিই সবাই জানত, রাজনৈতিক ভিন্নমত শেখ হাসিনা সহ্য করতেন না। সাবেক বন্দীদের, বিরোধীদের এবং তদন্তকারীদের ভাষ্য মতে, তাকে সমালোচনা করলেই আপনি হঠাৎ করেই ‘নিখোঁজ’ হয়ে যেতে পারতেন, কোনো চিহ্ন না রেখেই। তবে কতজন মানুষ আসলে নিখোঁজ হয়েছেন, সেই প্রকৃত সংখ্যা হয়তো কখনোই জানা যাবে না।
২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশে গুমের ঘটনা অনুসরণ করে আসা একটি বেসরকারি সংস্থা বলছে, এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৭০৯ জন মানুষ জোরপূর্বক নিখোঁজ হয়েছেন বলে তারা নথিভুক্ত করতে পেরেছে। এর মধ্যে এখনো ১৫৫ জনের কোনো খোঁজ মেলেনি। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে গঠিত তদন্ত কমিশনের কাছে ইতোমধ্যে ১ হাজার ৬৭৬ জন অভিযোগ দাখিল করেছেন বলে জানা গেছে। আরো অনেকেই অভিযোগ নিয়ে সামনে আসছেন।
কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি মোট সংখ্যার প্রতিফলন নয়, আসলে নিখোঁজের সংখ্যা আরো অনেক বেশি। তবে ব্যারিস্টার আরমানের মতো মানুষের সাক্ষ্যই তদন্তকারীদের সাহায্য করছে শেখ হাসিনাসহ বন্দীশালার পেছনে থাকা কর্তাব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা তৈরিতে।
যদিও নিখোঁজ ব্যক্তিদের আটকের জায়গাগুলো ভিন্ন ভিন্ন ছিল, কিন্তু তাদের অভিজ্ঞতার বর্ণনা ছিল আশ্চর্যজনকভাবে একরকম।
অবশ্য, এসব অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করেছে আওয়ামী লীগ। দলটির মুখপাত্র মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেন, যদি কেউ নিখোঁজ হয়ে থাকে, তাহলে সেটি শেখ হাসিনা বা তার কোনো মন্ত্রীর নির্দেশে হয়নি।
তিনি দাবি করেন, ‘যদি এমন কোনো গোপন আটক হয়েও থাকে, সেটি হয়তো অভ্যন্তরীণ জটিল সামরিক কর্মকাণ্ডের ফল হতে পারে। এসবের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ বা সরকারের কোনো রাজনৈতিক লাভ হয় না।’
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবদুল্লাহ ইবনে জায়েদ বিবিসিকে বলেন, সেনাবাহিনীর এসব গোপন আটককেন্দ্রের সাথে কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তিনি বলেন, ‘সেনাবাহিনী এ ধরনের অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার করছে।’
তবে তদন্ত কমিশনের প্রধান তাজুল ইসলাম বিশ্বাস করেন, এই বন্দীশালাগুলোতে যাদের আটক রাখা হয়েছিল, তারা সাক্ষ্য দিচ্ছে- এগুলো ছিল ক্ষমতাসীনদের হাতিয়ার। তার ভাষায়, ‘যাদের আটক করা হয়েছিল, তারা সবাই ছিল ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের। তারা শুধু তখনকার সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলেছিল, আর সে কারণেই তাদের এখানে আনা হয়েছিল।’
‘আমাকে বলা হয়েছিল যে আমি নিখোঁজ হয়ে যাব’
এখন পর্যন্ত ১২২টি গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে, কিন্তু এখনো কাউকে বিচারের মুখোমুখি করা যায়নি।
এ কারণেই ৭১ বছর বয়সী ইকবাল চৌধুরীর মতো অনেকে মনে করেন, এখনো তারা নিরাপদ নন। ইকবাল চান, তিনি যেন বাংলাদেশ থেকে চলে যেতে পারেন। ২০১৯ সালে মুক্তি পাওয়ার পর বহু বছর তিনি বাসা থেকে বের হননি, কোনো বাজার করতেও না। তাকে হুঁশিয়ার করা হয়েছিল, এই বন্দীত্বের কথা যদি তিনি কখনো বলেন, আবার যদি ধরা পড়েন, তাহলে কেউ তাকে আর খুঁজে পাবে না।
ইকবাল চৌধুরীর ভাষায়, ‘আমার হাতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট করে আঘাত করা হয়েছিল। এখন আমার একটি আঙুল প্রায় অকেজো। আমার পা দুর্বল হয়ে গেছে, শরীরের শক্তি কমে গেছে।’তিনি এখনো মনে করতে পারেন, আশপাশে থাকা অন্য বন্দীদের চিৎকার, কান্না আর আর্তনাদ, যা প্রতিনিয়ত তাকে তাড়া করে।
‘আমি এখনো ভয় পাই,’ বলেন চৌধুরী।
‘মৃত্যুর আগ পর্যন্ত হয়তো এই ভয় থেকেই যাবে’
২৩ বছরের রহমাতুল্লাহ এখনো আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। তার কথায়, ‘তারা আমার দেড় বছরের জীবন কেড়ে নিয়েছে। সেই সময় আর কখনো ফিরে আসবে না। আমাকে এমন জায়গায় ঘুমাতে বাধ্য করা হয়েছিল, যেখানে কোনো মানুষের থাকা উচিতই না।’
২০২৩ সালের ২৯ আগস্ট রাতের বেলা রাজধানীর একটি বাসা থেকে র্যাবের সদস্যরা কেউ পোশাকে, কেউ সাদা পোশাকে তাকে তুলে নিয়ে যায়। পাশের এক শহরে রাঁধুনির কাজ করতেন তিনি, পাশাপাশি ইলেকট্রিশিয়ান হিসেবে প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলেন।
বারবার জিজ্ঞাসাবাদের পর রহমাতুল্লাহ বুঝতে পারেন, তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভারতবিরোধী ও ইসলামপন্থী পোস্টের কারণেই তাকে আটক করা হয়েছে।
এক টুকরো কাগজে তার সেলের নকশা এঁকে দেখান তিনি যেখানে ছিল একটি খোলা নালা, সেটাই ব্যবহার করতে হতো প্রাকৃতিক প্রয়োজন মেটানোর জন্য।
তিনি বলেন, ‘ঢাকার সেই জায়গার কথা ভাবলেই ভয় লাগে। ঠিকভাবে পা ছড়িয়ে শোয়ার জায়গা ছিল না, তাই গুটিশুটি হয়ে শুয়ে থাকতে হতো। পুরো শরীর বিছানায় ফেলতে পারতাম না।’
বিবিসি আরো দু’জন সাবেক বন্দীর সাক্ষাৎকার নিয়েছে। যারা হলেন- মাইকেল চাকমা ও মাসরুর আনোয়ার। তারা বিভিন্ন তথ্য দিয়ে এসব গোপন বন্দীশালায় কী ঘটেছে, তার সত্যতা যাচাইয়ে সাহায্য করেছেন। এই নির্যাতনের শারীরিক ক্ষত এখনো বয়ে বেড়াচ্ছেন কেউ কেউ। আর মানসিক যন্ত্রণা তো যেন নিত্যসঙ্গী।
এতসব ঘটনার পর বাংলাদেশ এখন এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে লম্বা সময়ের স্বৈরশাসনের পর নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। গণতন্ত্রের পথে কতটা অগ্রসর হচ্ছে দেশ, তার বড় একটি পরীক্ষা হবে এসব অপরাধের বিচার কতটা ন্যায়সঙ্গতভাবে হয়।
তদন্তপ্রধান তাজুল ইসলাম বিশ্বাস করেন, বিচার হওয়া সম্ভব এবং সেটি হওয়া জরুরি। তার ভাষায়, ‘এই ধরনের অন্যায় ভবিষ্যতে যেন আর না ঘটে, সেটাই আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। যারা ভুক্তভোগী, তাদের ন্যায্য বিচার পেতেই হবে। তারা ভীষণ কষ্ট পেয়েছেন।’
বাঁধানো কংক্রিটের সেলে দাঁড়িয়ে থাকা মীর আহমেদ বিন কাসেম বলেন, দ্রুত বিচার হওয়া উচিত, যাতে দেশ এই অধ্যায় শেষ করতে পারে। কিন্তু রহমাতুল্লাহর জন্য বিষয়টি এত সহজ নয়।
তিনি বলেন, ‘ভয় এখনো যায়নি। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত হয়তো থেকেই যাবে।’
আপনার মতামত লিখুন :