পলাতক শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় আফগানিস্তানের (২০ বছর) মতো বাংলাদেশের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল ভারত। এ লক্ষ্যে জুডিশিয়াল ক্যুসহ নানাভাবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করেছে। কিন্তু নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দৃঢ় নেতৃত্বে দিল্লির সব অপচেষ্টাই ভণ্ডুল হয়ে যায়। জাতিসংঘের ৭৯তম অধিবেশনে ওয়াশিংটনে বিশ্বনেতাদের ড. ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাতের দীর্ঘ তালিকাই বুঝিয়ে দেয় নেতা হিসেবে তার অবস্থান কোন পর্যায়ে।
ড. ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশ পুনর্গঠনে সহায়তার জন্য প্রভাবশালী দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো উঠেপড়ে লেগেছে। ফ্যাসিস্ট হাসিনার হাতে প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত বাংলাদেশের অর্থনীতি, গণতন্ত্র, আইনের শাসন, মানবাধিকার, মত প্রকাশের স্বাধীনতাসহ সার্বিক অগ্রগতি দেখতে চায় তারা।
আবার ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা’ অর্জনের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার ছাত্র-জনতার সার্বিক জীবনযাপন কতটুকু স্বস্তিদায়ক করতে পারছে সে প্রশ্নও আছে। ত্রায়োদশ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ভোট নিশ্চিতকরণ, পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, বিদ্যুৎ-গ্যাস সংকটের সুরাহা, আর্থিক খাতে উন্নয়ন, নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির চেষ্টা, শিল্পায়ন, নতুন বিনিয়োগ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, আইনশৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ, নির্বিঘ্নে ব্যবসা-বাণিজ্যের সংকটের সুরাহা করতে পেরেছে বা সুরাহার যৌক্তিক পদক্ষেপ গ্রহণে কতটুকু সফল হয়েছে? অন্তর্বর্তী সরকারের তিন মাস সময়ে সঙ্গত কারণে এ বিতর্ক সামনে চলে এসেছে।
প্রশ্ন হচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার তিন মাসে কতদূর এগোলো নাকি পেছালো? সরকার সফল নাকি ব্যর্থ ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জন্ম নেয়া অন্তর্বর্তী সরকারের তিন মাস মেয়াদে নির্মোহ পর্যালোচনা অপরিহার্য। কারণ তিন মাস যেকোনো নির্বাচিত সরকারের জন্য ‘হানিমুন পিরিয়ড’ হলেও অন্তর্বর্তী বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য নয়। কারণ শেখ হাসিনা আদালতকে ব্যবহার করে এবং জাতীয় সংসদে সংবিধান থেকে যে ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল’ করেছে; সেখানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে তিন মাসের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা ছিল।
১৯৯১ সালে অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট বিচারপতি সাহাবুদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, ’৯৬ সালে বিচারপতি হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার, ২০০১ সালে বিচারপতি লতিফুর রহমানের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রশাসনিক নিত্যদিনের কাজের পাশাপাশি তিন মাসের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন করেছেন। প্রশ্ন হচ্ছে ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার তিন মাসে কোন পথে?
আবার ভারতকে খুশি করতে দিল্লির স্বার্থে একের পর এক সিদ্ধান্ত নেয়া এবং প্রশাসনে ভারতের দালাল তৈরির পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশের অনুগত ব্যক্তিদের প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানোয় গোটা প্রশাসনযন্ত্র কার্যত দিল্লির মুখাপেক্ষী হয়ে পড়েছিল। এ অবস্থায় জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী অল্প সময়ের মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে জঞ্জাল পরিষ্কার করে দেশ পুনর্গঠন খুবই দুরূহ কাজ।
কিন্তু ড. ইউনূস সেটা শুরু করেছেন, তিনি দৃঢ়তা এবং দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতৃেত্বর পরিচয় দিয়েছেন। সংযুক্ত আরব আমিরাতে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেয়া অর্ধশতাধিক প্রবাসীর কারাদ- দেয়া হয়। কিন্তু ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রধান উপদেষ্টা পদে শপথ নিয়েই এক ফোনেই বন্দি ওই প্রবাসী বাংলাদেশিদের দেশে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হন। ড. ইউনূস ছাড়া অন্য রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধানের পক্ষে এটা ছিল একেবারে দুরূহ।
সময় কারো জন্য অপেক্ষা করে না। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর সময় গড়াচ্ছে। মোটা দাগে দেখা যাক অন্তর্বর্তী সরকারের তিন মাসের সাফল্যগুলো। হাসিনা সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন এ মর্মে অপপ্রচার চালানো হয় আওয়ামী লীগ ক্ষমতা থেকে সরে গেলে এ দেশে রক্তের গঙ্গা বইবে। বিরোধী দলগুলো প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে লাখো মানুষ হত্যা করবে।
ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, ‘এক রাতে ১০ লাখ লোক হত্যা করা হবে’। কিন্তু তা হয়নি। হাসিনার পলায়নের পর দীর্ঘদিনের পুঞ্জিভূত গণক্ষোভ থেকে বিক্ষুব্ধ জনতা জেলায় জেলায় আওয়ামী লীগের অফিস, মুজিবের মূর্তি ভাঙচুর করেছে। বাদ পড়েনি গণভবন এবং জাতীয় সংসদের মতো রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান। কিন্তু রক্তের গঙ্গা বয়নি। বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া লাশ পড়েনি। এ যুগের ঘসেটি বেগম হাসিনা জুটিশিয়াল ক্যু, সংখ্যালঘু নির্যাতন, গার্মেন্টসে বিশৃঙ্খলা, পাহাড়ে অশান্তি, আনসারদের দিয়ে সচিবালয় ঘেরাও, কর্মচারীদের আন্দোলনসহ বেশ কিছু ইস্যু সৃষ্টির মাধ্যমে সরকারকে বিপদে ফেলার চেষ্টা করেছে।
ড. ইউনূসের সরকার তা প্রতিহত করেছে। হাসিনা ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি চট করে দেশে ঢুকবেন এবং ড. ইউনূস সরকার এক মাসও টিকবে না। অন্তর্বর্তী সরকার এটা ট্যাকেল দিয়েছে। হাসিনা ঢুকতে পারেনি এবং সরকারও কার্যকর রয়েছে। ইতোমধ্যেই কয়েকটি সেক্টরে সংস্কারের লক্ষ্যে সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ যেসব দেশ হাসিনা রেজিমে বাংলাদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল, সেসব দেশ এখন বাংলাদেশ পুনর্গঠনে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।
ডলার সংকট দূর করেছেন এবং ব্যাংকিং সেক্টরকে গ্রাহকদের আস্থাশীল করে তুলেছেন। হিন্দুত্ববাদী ভারত শেখ হাসিনার পক্ষ নিয়ে বাংলাদেশে জঙ্গি উত্থানের ‘ফেইক তথ্য’ প্রচার করে আন্তর্জাতিক মহলকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্ররোচিত করেছে। কিন্তু ড. ইউনূসের কারণে দিল্লির সেই অপচেষ্টা ভ-ুল হয়েছে। বরং হাসিনা পালানোর পর রেমিট্যান্স বেড়েছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রিজার্ভ বেড়েছে এবং বাণিজ্য প্রসারের পথ খুলেছে। হাসিনা ও তার দোসরদের বিদেশে পাচার করা টাকা ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
তিন মাসেও কয়েকটি মন্ত্রণালয় গতিশীল করা যায়নি। মূল কারণ ওই সব মন্ত্রণালয়ে হাসিনা অনুগতরা এখনো প্রশাসনে সর্বেসর্বা হয়ে বসে আছেন। সিভিল প্রশাসন, পুলিশ, র্যাব, বিজিবিতে কিছু পরিবর্তন, বাধ্যতামূলক অবসর এবং রদবদল আনা হলেও এখনো যাদের দিয়ে হাসিনা ১৫ বছর ‘জনগণকে দমন’ করে পাতানো নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় ছিলেন তাদের প্রশাসন থেকে মাইনাস করা যায়নি।
যারা বিগত তিনটি পাতানো নির্বাচনে অঘোষিত ডিকটেশন অনুযায়ী কাজ করে সরকারের ইচ্ছা পূরণ করেছে, বিনিময়ে দেশে অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছে ও বিদেশে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে। এমনকি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার গণরোষ মোকাবিলায় যারা শত শত মানুষ হত্যার নির্দেশ দিয়েছে এবং হত্যা করেছে তাদের প্রশাসন থেকে বিদায় করা হয়নি। এতদিনেও কেন সেটা সম্ভব হয়নি নেপথ্যের সে রহস্য ডালপালা ছড়াচ্ছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে পাহাড়সম প্রত্যাশার সমান্যতম না পাওয়ায় কিছু মানুষের মধ্যে অস্থিরতা এবং হতাশা বাড়ছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় এ সুযোগ নিয়ে হাসিনার অলিগার্ক বুদ্ধিজীবীরা অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছেন। নেটিজেনরা তাদের নাম দিয়েছে ‘আফসোস লীগ’। তারা ‘আগের সরকারই ভালো ছিল’ প্রচার করছেন। কিন্তু কি করছেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা? ভারত গণহত্যাকারী হাসিনাকে আশ্রয় দিয়েছে। হাসিনার মতো খুনিকে আশ্রয় দেয়ার পরও ভারতের গণমাধ্যমগুলো বাংলাদেশ নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে।
প্রশাসনে ড. মুহাম্মদ ইউনূস একাই একশ’ নক্ষত্রের মতো জ্বললেও উপদেষ্টাদের অবস্থা নিভু নিভু। অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর অর্থ মন্ত্রণালয় ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কিছু সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় তারা ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতে বিশৃঙ্খলা রোধ করতে সক্ষম হয়েছেন। হাসিনার রেখে যাওয়া ঋণের কিছু বকেয়া সুদও পরিশোধ করেছেন। অর্থ মন্ত্রণালয় সাফল্য দেখালেও ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একেবারে নিষ্প্রভ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. আসিফ নজরুল আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার উদ্যোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্র্রাইব্যুনালে বিচার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। কিন্তু তিনি এরই মধ্যে নানা কারণে বিতর্কিত হয়ে পড়েছেন। তিনি যেন কোন অদৃশ্য সুতার টানে চলছেন। তাকে সংস্কৃতি ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়ায় ওই মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ বাংলা একাডেমি, শিল্পকলা একাডেমি, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রসহ প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে তিনি তথাকথিত বাম ও ভারতীয় চেতনাধারীদের বসিয়েছেন, যা নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে।
তিনি অন্তর্বর্তী সরকারকে বিব্রত করে প্রেসিডেন্ট মো. সাহাবুদ্দিনকে পদচ্যুত ইস্যুতে ফাউল কথা বলে বিতর্কের সৃষ্টি করেন। ভারতে বসে হাসিনা অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে একের পর এক ষড়যন্ত্র করছেন। অথচ বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নীরব দর্শক? পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌফিক হোসেনের কথা বলার স্টাইল ও ‘বডি ল্যাঙ্গুয়েজ’ দেখে মনে হয় উনি ‘নিরীহ গোবেচারা’ স্বভাবের। সংখ্যালঘু নির্যাতন ইস্যুসহ নানা ফেইক ইস্যুতে ভারত অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।
হাসিনার পুত্র গণহত্যার ইন্ধনদাতা সজীব ওয়াজেদ জয় ওয়াশিংটন ডিসিতে পাচার করা টাকা ব্যয়ে লবিং ফার্ম ‘স্ট্রেক গ্লোবাল ডিপ্লোম্যাসিকে’ নিয়োগ করেছেন। ভারতও সে দেশের গণমাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণা ঠেকাতে কূটনৈতিক চ্যানেলে কোনো উদ্যোগ নেননি পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশের দূতাবাস মিশনগুলোকে কাজে লাগিয়ে ভারতীয় অপপ্রচারের জবাব দেয়া যেত তিনি সে উদ্যোগ নেননি। বিদেশে বাংলাদেশবিরোধী অপপ্রচারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিবকে বিভিন্ন সময় বক্তব্য দিয়েছেন।
দীর্ঘ তিন মাসেও তিনি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে পারেননি এ কথাটা একেবারেই সত্য নয়। সেনা, বিজিবি, র্যাব ও পুলিশের সমন্বয়ে যৌথ অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। সেনাসদস্যদের বিচারিক ক্ষমতাও দেওয়া হয়।
শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান নীরবে কাজ করে যাচ্ছেন। মানবাধিকার কর্মী এই আইনজীবী উপদেষ্টা কথার চেয়ে কাজকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ, উবিনীগের নির্বাহী পরিচালক ফরিদা আখতার, ব্রতীর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন মুর্শিদ প্রশাসন চালাচ্ছেন চলনসই। আশার কথা অনভিজ্ঞ দুই ছাত্রনেতা উপদেষ্টা পরিষদে নিজ নিজ মন্ত্রণালয়কে গতিশীল করতে সক্ষম হয়েছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মো. নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া পূর্বঅভিজ্ঞতা না থাকলেও তারা নিজ নিজ মন্ত্রণালয়ে কাজের গতি এনেছেন। এরই মধ্যে সুনামও কুড়িয়েছেন।
৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস কয়েক দফায় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে আগামী নির্বাচন, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার, রাজনৈতিক দলগুলোর প্রত্যাশা ও দাবি-দাওয়া নিয়ে আলোচনা করেছেন। রাজনৈতিক দলগুলো তাদের মতামত দিয়েছেন এবং বিভিন্ন দাবি, প্রস্তাবনা তুলে ধরেছেন। নির্বাচন কমিশনসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে সংস্কার আনতে সংস্কার কমিশন গঠন করেছেন।
ড. ইউনূস ঘোষণা দিয়েছেন দ্রুত সংস্কার করে নির্বাচনের পথে হাঁটবেন। দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি চায় দ্রুত সংস্কার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর। বেশির ভাগ দলই সেটা চায়। কিন্তু ভারতের ফাঁদে পা দিয়ে কেউ কেউ আনুপাতিক হারে জনপ্রতিনিধিত্বের নির্বাচন চাচ্ছেন। তাদের ভাবখানা আওয়ামী লীগকে সংসদের প্রতিনিধিত্বের সুযোগ দিতে হবে। এ ফাঁদে পা দিয়ে জামায়াতসহ কয়েকটি দল শোরগোল করলেও তা ধোপে টেকেনি। সংস্কার কমিশনগুলো কার্যক্রম শুরু করেছে। আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে তারা রিপোর্ট জমা দেবে।
ভারত বার্তা পেয়ে গেছে ড. মুহাম্মদ ইউনূস স্বমহিমায় বাংলাদেশকে এগিয়ে নেবেন; হাসিনার মতো দিল্লির দাসত্ব করবেন না। উপদেষ্টাদের মধ্যে যাদের পতিত আওয়ামী লীগের তাঁবেদারি ও দিল্লিকে খুশি করার মানসিকতায় ভুগছেন তাদের দ্রুত দালালির পথ পরিহার করা উচিত। মূলত আবু সাঈদ, মুগ্ধসহ হাজারো শিক্ষার্থী-জনতা বন্দুকের সামনে বুক পেতে দিয়েছিল ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতন ঘটিয়ে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে। সেই সঙ্গে চেয়েছে প্রশাসনিক কাজে নাগরিকের দৈনন্দিন সমস্যার সমাধান। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার প্রথমেই হোঁচট খায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে।
পুলিশ অফিসারদের বেশির ভাগই হাসিনার একান্ত অনুগত ছিল। তারা অন্যায়-অত্যাচার-ঘুষ-দুর্নীতি করে টাকার পাহাড় গড়েছে। গ্রেফতারের ভয়ে তারা কাজে যোগদান না করে পালিয়েছে। তারপরও গোটা বিশ্ব যাকে এক নামে চেনেন সেই আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব ড. মুহাম্মদ ইউনূস সুচিন্তিত দৃঢ়তার সঙ্গে জনগণের ভোটের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার পথে এগিয়ে চলছেন।
আপনার মতামত লিখুন :