পহেলা জুন রবিবার থেকে তিন মাসের জন্য সুন্দরবনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : মে ৩১, ২০২৫, ৬:৪৪ অপরাহ্ণ /
পহেলা জুন রবিবার থেকে তিন মাসের জন্য সুন্দরবনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি

পহেলা জুন রবিবার থেকে ৩১শে আগস্ট পর্যন্ত তিন মাসের জন্য সুন্দরবনে প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বনবিভাগ। ফলে বিপাকে পড়েছে সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল মানুষেরা। জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে সুন্দরবন ভ্রমণ, মাছ-কাঁকড়া শিকার ও মধু আহরণ সহ সব ধরনের অনুমতি বাতিল করা হয়েছে।

৯২ দিনের জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি থাকবে।তবে এ নিষেধাজ্ঞায় বনের ওপর নির্ভরশীল জেলে, ট্যুর অপারেটর ও বোটচালক সহ সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল বনজীবীরা বিপাকে পড়বেন জানিয়েছেন স্থানীয়রা। নিষেধাজ্ঞায় কীভাবে সংসার চালাবেন, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।

বনজীবীরা বলেন, বন্ধের দিনগুলোয় তাদের জন্য সরকারি যে সহায়তা দেওয়া হয়, তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। সরকারি সহায়তার বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি তাদের। শনিবার ৩১ মে সকালে সুন্দরবন সংলগ্ন খোলপেটুয়া নদীর তীরে গিয়ে দেখা গেছে, সুন্দরবন থেকে লোকালয়ে ফিরেছে শতাধিক মাছ ধরা নৌকা। নৌকা থেকে মাছ ধরার জালসহ অন্যান্য মালামাল সরিয়ে নিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন জেলেরা।

কেউ কেউ আবার নৌকা মেরামত করার জন্য বেড়িবাঁধের রাস্তার ওপর উঠিয়ে রাখছেন।বুড়িগোয়ালিনী নীলডুমুর এলাকার বাসিন্দা সুন্দরবনের মাছধরা জেলে বলেন, টানা ছয় দিন সুন্দরবনের নদী ও খালে মাছ ধরে সকালে লোকালয়ে ফিরেছেন। খুব বেশি মাছ ধরতে পারেননি। সামনের ৯২ দিন বন্ধের সময় সংসার চালানোর মতো সঞ্চয় করা টাকা নেই। এ নিয়ে বিপদে আছেন।

বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সাতক্ষীরা রেঞ্জের আওতায় বুড়িগোয়ালিনী, কদমতলা, কৈখালী ও কবাদক স্টেশন রয়েছে। আর এসব ষ্টেশনের আওতায় ২ হাজার ৯০০টি নৌকার সুন্দরবনে প্রবেশের বিএলসি (বোট লাইসেন্স সার্টিফিকেট) রয়েছে। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, শ্যামনগরে নিবন্ধিত জেলে রয়েছে ২৩ হাজার ৯২৮ জন। তবে নিষেধাজ্ঞার সময় ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় সরকারি সহায়তার চাল পাবে মাত্র ৮ হাজার ৩২৪ জন।

এসব জেলেদের ৩ মাসে দুই ধাপে ৭৭ কেজি চাল দেওয়া হবে।দাঁতিনাখালী গ্রামের সুন্দরবনের মাছ ধরা জেলে বলেন, এই তিন মাস পাস বন্ধ হওয়ার কথা না। জীবনেও বন্ধ হওয়ার কথা না। কিসের জন্য এই তিন মাস পাশ বন্ধ হবে, এসময় কাঁকড়া ডিম ও দেয় না, বাচ্চা ও ফোটায় না। পাস বন্ধ হবে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি ঐসময় কাঁকড়া ডিম দেয় ও বাচ্চা ফোটায়। এই তিন মাস ফরেস্টারা ইচ্ছাদি মতো বন্ধ করে। এই তিন মাস পাশ বন্ধ থাকলে সমিতি থেকে না হয় সুদ করে টাকা নিতে হয়।

আমাদের দিন আনা দিন খাওয়া খুব কষ্ট হয়ে যায়। বন্ধের সময় সরকারিভাবে যাদের জেলে কার্ড ও বিএলসি রয়েছে তাদেরকে দুই ধাপে ৭৭ কেজি করে চাল সহায়তা দেওয়া হবে। তার দাবি সরকারি সহায়তায় যাদেরকে চাল দেয়া হয় সেটিও অনেক প্রকৃত জেলে পান না। মূলত যাদের বিএলসি আছে তাদের অধিকাংশই সুন্দরবনে যায় না। বিএলসি ধারীরা অধিকাংশই প্রভাবশালী ও বিত্তবান। ওই প্রভাবশালী ও বিত্তবানরা প্রভাব খাটিয়ে নামে-বেনামে একাধিক বিএলসি করে রেখেছে। আর তারা ওই বিএলসি ভাড়া দিয়ে খায়।

আর যারা প্রকৃত বনজীবী তারা কোনরকম সরকারি সহায়তা পায় না।এদিকে এই নিষেধাজ্ঞা লোক দেখানো উল্লেখ করে সুন্দরবন নির্ভরশীল বনজীবী জীবন ও জীবিকা নির্বাহ করেন, এমন একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, যে কারণে সুন্দরবনের প্রবেশ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয় সেই কাজ শতভাগ হয় না, হয় লোক দেখানো কিছু কাজ।স্থানীয় বলেন, নিষেধাজ্ঞাটা কিন্তু গোটা সুন্দরবনে। এ কারণে বনের ভেতরের নদী-খালে সাধারণ জেলেরা যেতে পারেন না।

কিন্তু যারা গভীর সুন্দরবনের অভয়ারণ্যে মাছ ধরেন, তাদের জন্য কিন্তু এ সময়টা সুবর্ণ সুযোগ। কারণ, তখন সাধারণ জেলেরা থাকে না, মানুষ থাকে না। সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের রেঞ্জ সহকারী হাবিবুর রহমান জানান জুন, জুলাই ও আগষ্ট মাস সুন্দরবন থেকে সব ধরনের সম্পদ আহরণ ও ইকো ট্যুরিজম বন্ধ থাকবে। বনবিভাগের সকল অফিস হতে ২৬ মে থেকে সুন্দরবনে প্রবেশের পাশ(অনুমতিপত্র) প্রদান বন্ধ করা হয়েছে।

একই সাথে আগে পাশ নিয়ে এখনো যারা সুন্দরবনে অবস্থান করছে তাদের ৩১ মে’র মধ্যে লোকালয়ে ফিরতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সুন্দরবনের বিশ্রাম দেয়ার মাধ্যমে সেখানকার প্রকৃতিও জীব-প্রাণ বৈচিত্র্য রক্ষার জন্য প্রতি বছর তিন মাস এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। এসময় বেকার সময় কাটানো সুন্দরবনে যাতায়াতকারী জেলেরা নির্দিষ্ট পরিমান চাউল পাবে বলেও তিনি নিশ্চিত করেন।