১৪ বছর আগে চট্টগ্রামের খুলশী এলাকার সেগুন বাগান তা'লীমুল কুরআন মাদ্রাসার সামনে থেকে অপহরণ হন ১০ বছর বয়সী ছফওয়ান। ছেলেকে ফিরে পেতে তাঁর পিতা মাওলানা আবু তাহেরের থানায় সাধারণ ডায়েরি থেকে শুরু করে প্রশাসনিক দপ্তরে দপ্তরে অভিযোগ কিছুই বাদ রাখেননি। তবুও কোন সন্ধান পাননি নিখোঁজ ছেলের।
‘১০ বছর’ বয়সী ছফওয়ান ১৪ পর বছর ৮ই জুলাই চট্টগ্রামে বাঁশখালী তাঁর নিজ বাড়িতে ফিরেছেন। অপহরণ ও বাড়ি ফেরার গল্প জানিয়েছেন তিনি।
অপহরণের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ছফওয়ান জানান, ২০০৮ সালে আমাদের মাদ্রাসার সামনে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিলাম। তখন একটা গাড়ি আসলো, তখন তারা বললো তোমার নাম কি? তখন আমি বললাম আমার নাম ছফওয়ান। এরপর তারা জানতে চাইলো আমার বাড়ি কোথায়? আমি বললাম, আমার বাড়ি বাাঁশখালী। তারপর তারা আবার বললো বাঁশখালী ইকোপার্ক কোনদিকে তুমি চিনো, তখন আমি বললাম চিনি।
এরপর তারা আমাকে তাদের গাড়িতে তুলে ইকোপার্ক নিয়ে গেল। পরবর্তীতে আমি মনে করেছিলাম তারা আমাকে বাড়ির সামনে রাস্তায় নামিয়ে দিবে। কিন্তু তা না করে নিয়ে গেল ঢাকায়। এরপর তারা আমার পাঞ্জাবি খুলে পেন্ট শার্ট পরিয়ে ভারতের কলকাতায় নিয়ে যায়।
বাংলাদেশে ফেরার বর্ণনা দিতে গিয়ে ছফওয়ান বলেন, কলকাতায় দীর্ঘ ১৩-১৪ বছর তারা আমাকে দিয়ে রেস্টুরেন্টে কাজ করায়। পরবর্তীতে আমি ভারতে থাকা অবস্থায় এ.কে খান গ্রুপের মাধ্যমে বাংলাদেশের নাগরিকতা নিয়ে স্মার্ট কার্ড করে আল্লাহর রহমতে অনেক কষ্টে দেশে আসি। এরপর বাংলাদেশে এসে এ. কে. খান গ্রুপে ৬-৮ মাস চাকরি করি। পরবর্তীতে আমি আমার মা-বাবা বাড়িঘরের খবর নিয়ে আস্তে আস্তে আমি মালিককে বলে ছুটি নিয়ে ঢাকা থেকে সরাসরি চট্টগ্রাম আসি।
চট্টগ্রামে এসে কিছুই চিনতে পারছি না। একটা সিএনজিকে বললাম- আমি বাঁশখালী যাবো কত টাকা নিবে। তখন সিএনজি ড্রাইভার আমাকে কর্ণফুলী নতুন ব্রিজ নামিয়ে দেয়। এরপর দেখলাম কর্ণফুলীতে তক্তার (গাছের) ব্রিজ নেই। কিছুই চিনতে পারছি না। আরেকটি সিএনজি ড্রাইভারকে বললাম আমি বাঁশখালী যাব। তখন সে আমার কাছ থেকে ৮০০ টাকা নিয়ে বাঁশখালী নিয়ে আসল। তবুও আমি কিছুই চিনতে পারছি না।
ড্রাইভারকে বললাম- আমাদের বাড়ির একটা মাদ্রাসা আছে, পরপর জিজ্ঞাসা করে আমি মাদ্রাসার সামনে আসি। এরপর থেকে এসে কিছুই চিনতে পারছি না। সব দেখি এলোমেলো। বিকেলে আমার ভাই মিজানের বাড়ি কোনটা, জিজ্ঞাসা করে বাড়িতে আসলাম। তখন কেউ দেখি আমাকে চিনছে না। পরবর্তীতে সবাই কে চিনেছি।
তারাও আমাকে চিনেছে। আমি আল্লাহ পাকের দরবারে হাজারো শুকরিয়া আদায় করি। আমি আমার মা-ভাই-বোন আত্মীয়স্বজন সবাইকে চিনতে পারছি। আজ আমি আমার দেশ গ্রামের মানুষকে পেয়ে অনেক আনন্দিত হয়েছি। সবাই আমি এবং আমার মায়ের জন্য দোয়া করবেন।
ভাইকে খুঁজে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা পরিবারের সদস্যরা। ছফওয়ানের মেঝভাই সাংবাদিক মুহাম্মদ মিজান বিন তাহের বলেন, ‘অনেক বছর ভাইয়ের অপেক্ষায় ছিলাম। বাবাও তার খোঁজে এদ্বার ওদ্বার ঘুরেছে। শুক্রবার বিকেলে আমার ভাই বাড়ি ফিরেছে। আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া।
উল্লেখ্য, ছফওয়ান দক্ষিণ চট্টগ্রামের দ্বীনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আল জামিয়া আল ইসলামিয়া জলদী মখজনুল উলুম (বাইঙ্গাপাড়া) বাঁশখালী বড় মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা মরহুম মাওলানা মোহাম্মদ আলীর নাতি। তার বাবা মাওলানা আবু তাহের লন্ডন ‘মসজিদুল আবরার’জামে মসজিদের খতিব, আল জামিয়াতুল আরবিয়া মদিনাতুল উলুম রাউজান দেওয়ানপুর মাদ্রাসার সাবেক মোহতামিম, সিএমবি আল মাদ্রাসাতুল ইসলামিয়া তানজিমুল উম্মাহ মাদ্রাসাসহ অসংখ্য দ্বীনি প্রতিষ্ঠানে যুক্ত ছিলেন।