মানুষ তুলনা পছন্দ করে। খেলাধুলায় আরও বেশি। কে কার চেয়ে ভালো, এ নিয়ে তর্ক-বিতর্কের শেষ নেই। লামিনে ইয়ামালের কথাই ধরুন। পরশু রাতে বার্সেলোনার হয়ে ১০০তম ম্যাচ খেলেছেন ১৭ বছর বয়সী এই উইঙ্গার। তখন থেকেই প্রশ্ন উঠছে, ১৭ বছর বয়সে ইয়ামাল যে উচ্চতায় পৌঁছেছেন, অতীতে আর কেউ সেখানে ছিলেন কি না?
স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম মুন্দো দেপোর্তিভো উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছে। তাঁদের বিশ্লেষণে বেরিয়ে এসেছে, ইয়ামাল এই বয়সে যতটুকু অর্জন করেছেন, তা পেলে ছাড়া আর কেউ ওই বয়সে পারেননি। চ্যাম্পিয়নস লিগে পরশু রাতে সেমিফাইনাল প্রথম লেগে ইন্টার মিলানের বিপক্ষে ৩-৩ গোলে ড্র করে বার্সেলোনা। এ ম্যাচে চোখধাঁধানো একটি গোল করেন ইয়ামাল। পাশাপাশি গোটা ম্যাচেই ইন্টারের ডিফেন্ডারদের তটস্থ রেখেছিলেন এই স্প্যানিশ তারকা।
বার্সার বয়সভিত্তিক দল থেকে ২০২৩ সালে মূল দলে জায়গা করে নেন ইয়ামাল। ট্রান্সফারমার্কেট জানাচ্ছে, বার্সার হয়ে এ পর্যন্ত ১০০ ম্যাচে ২২ গোল করার পাশাপাশি ৩৩টি গোল বানিয়েছেন ইয়ামাল। তাঁর ক্লাবের ১২৫ বছরের ইতিহাসেই সেরা খেলোয়াড় লিওনেল মেসি ১৭ বছর বয়স পর্যন্ত ৯ ম্যাচ খেলে ১ গোল করেছেন। গোলে সহায়তা নেই। একই বয়স পর্যন্ত আরেক কিংবদন্তি ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ১৯ ম্যাচে ৫ গোল করার পাশাপাশি ৪ গোলে সহায়তা করেছেন।

আরেকটু পেছনে ফেরা যাক। সর্বকালের সেরাদের কাতারে থাকা আরও দুজন কিংবদন্তি হলেন প্রয়াত ইয়োহান ক্রুইফ ও ডিয়েগো ম্যারাডোনা। ডাচ কিংবদন্তি ক্রুইফ আয়াক্সের হয়ে ১৭ বছর বয়স পর্যন্ত ১০ ম্যাচ খেলেছিলেন। ৪ গোল করার পাশাপাশি গোলে সহায়তা ছিল দুটি। ’৮৬ বিশ্বকাপে কিংবদন্তি ম্যারাডোনা আর্জেন্টিনোস জুনিয়র্সের হয়ে একই বয়স পর্যন্ত ৬০ ম্যাচ খেলে ২১ গোল করার পাশাপাশি ১৫ গোলে সহায়তা করেছিলেন। গোল করা ও করানো বিচারে ম্যারাডোনাই ইয়ামালের সবচেয়ে কাছাকাছি। তবে শিরোপা জয় বিচারে ইয়ামালের ধারেকাছে কেউ নেই। ১৭ বছর বয়সেই স্পেনের হয়ে ইউরো জয় এবং বার্সার হয়ে লিগ, কোপা দেল রে ও সুপার কাপ জিতেছেন ইয়ামাল। ব্রাজিলের প্রয়াত কিংবদন্তি তিনবার বিশ্বকাপজয়ী পেলে ১৭ বছর বয়সেই জিতেছিলেন বিশ্বকাপ। ১৯৫৮ বিশ্বকাপে বিশ্বকে নিজের আগমনী বার্তা দেন পেলে। সুইডেনের সোলনায় ১৯৫৮ বিশ্বকাপের ফাইনাল অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২৯ জুন। সে বছরের ৩০ অক্টোবর ১৮ বছর পূর্ণ হয় পেলের। ১৯৫৬ সালের ৭ সেপ্টেম্বর সান্তোসের মূল দলে ১৫ বছর বয়সে অভিষেক কিংবদন্তির। ঘরোয়া প্রতিযোগিতায় সে বছর একটি ম্যাচই খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন পেলে। একটি গোলও করেন।
পরের বছর সান্তোসের একাদশে নিয়মিত হন পেলে। ১৬ বছর বয়সী পেলে ১৯৫৭ সালের সে মৌসুমে ৩৮ ম্যাচে ৪১ গোল করেছিলেন। ইয়ামালের ১০০ ম্যাচে ২২ গোলের চেয়ে পেলে ওই বয়সে গোল করায় এগিয়ে।
১৭ বছর বয়সী ইয়ামাল এখন কোন উচ্চতায় উঠে থামেন সেটাই দেখার বিষয়। এরই মধ্যে বার্সায় তাঁর খেলার ধরনের সঙ্গে মেসির খেলার মিল খুঁজে পাচ্ছেন অনেকেই। ইন্টারের বিপক্ষে দুর্দান্ত গোলের পর ইংল্যান্ড ও লিভারপুলের সাবেক ডিফেন্ডার এবং বিশ্লেষক জেমি ক্যারাঘার সিবিএস স্পোর্টসে বলেছেন, ‘যেন সেরা সময়ের মেসিকে দেখছি। বল তার পায়ে গেলে গোটা খেলাই যেন থেমে যায়, লোকে তার কাছ থেকে কিছু দেখার অপেক্ষায় থাকে।’