মোহাম্মদ মাসউদুর রহমান ও হাসনাইন সারওয়ার- ছবিঃ সংগৃহীত
হাসনাইন সারওয়ার এবং মোহাম্মদ মাসউদুর রহমান দুজনের স্বপ্নই সুদূরপ্রসারী। তারা উভয়েই হাদীসের খেদমতে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করতে চান। ইসলামের প্রাথমিক যুগে সাহাবারা, অতঃপর তাবেঈন, তাবে তাবেঈনসহ তাদের পরবর্তী যুগেও অনেক মনীষী হাফেজে হাদীস ছিলেন। কালপরিক্রমায় হাদীস শরীফ মুখস্তের এই ধারা কমতে থাকে। আর বর্তমানে হাফেজে হাদীসের সংখ্যা খুবই নগণ্য। ঠিক এমন সময়ে হাদীসের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য গ্রন্থ বুখারী শরীফ মুখস্ত করে বিরল কীর্তি গড়েছেন দুইজন মাদরাসাছাত্র।
শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তারা নিজেরাই। বুখারী শরীফ মুখস্তকারী ওই দুইজন ছাত্র হলেন- ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলার তারাটি চরপাড়া গ্রামের তাজুল ইসলামের ছেলে মোহাম্মদ মাসউদুর রহমান ও কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার ইন্দা গ্রামের আব্দুল করিমের ছেলে হাসনাইন সারওয়ার।
তারা দুজনেই নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থানার পানাম সিটির পার্শ্ববর্তী বাগমুছা এলাকায় অবস্থিত আল মারকাজুল ইসলামীতে পড়াশোনা করেন। মোহাম্মদ মাসউদুর রহমান এই মাদরাসাটির ‘হিফজুল হাদীস’ বিভাগে ও হাসনাইন সারওয়ার ‘উলুমুল হাদীস’ বিভাগে অধ্যয়নরত। মাসউদুর রহমান এখান থেকেই মাত্র ৮ মাস ৯ দিনে এবং হাসনাইন ৮ মাস ৭ দিনে বুখারী শরীফ হিফজ সম্পন্ন করেন।
এ প্রসঙ্গে মোহাম্মদ মাসউদুর রহমান নয়া দিগন্তকে বলেন, শৈশবে নুরানীতে পড়ার সময় ৪০টি হাদীস মুখস্থ করি। তখন থেকেই হৃদয়ের গহীনে হাদীসের প্রতি মহব্বতের বীজ বপন হয়ে যায়। পরবর্তীকালে ক্লাসে হাদীসের কিতাব পড়ার সময়ে উস্তাদদের উৎসাহ পেয়ে বুখারী শরীফ হিফজের সংকল্প করি এবং সফল হই আলহামদুলিল্লাহ।
তিনি আরো বলেন, এটি আমার কাছে খুবই সহজ মনে হয়েছে। কওমি মাদরাসার শিক্ষার্থীরা জালালাঈন জামাত থেকেই এটি শুরু করলে আরো সহজভাবে মুখস্থ করতে সক্ষম হবে। আর আমাদের মাদরাসায়, বিশেষত বুখারী শরীফ মুখস্ত করার একটি ভিন্ন পরিবেশ আছে। ‘হাফেজী বোখারী শরীফ’ নামের একটি প্রতিলিপি সামনে নিয়ে আমি হিফজ সম্পন্ন করেছি।
নয়া দিগন্তকে নিজের অভিজ্ঞতা জানিয়ে হাসনাইন সারওয়ার বলেন, প্রাথমিক ক্লাসগুলোতে পড়ার সময়ই আমি হাদীস মুখস্ত শুরু করি। এক্ষেত্রে আমার বড় ভাই মুফতি শফিউল্লাহ আমাকে বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত করেন। মুহাদ্দিসদের জীবনী পড়তে পড়তে বুখারী শরীফ হিফজের কথা ভাবি এবং সেই ভাবনা বাস্তবে রূপ দেয়ার তাওফিক পেলাম। আলহামদুলিল্লাহ।
তিনি আরো বলেন, পূর্ববর্তী আলেমরা লক্ষ লক্ষ হাদীস মুখস্ত করতেন, কিন্তু বর্তমানে হাদীস মুখস্তের বিষয়টি উপেক্ষিত। এটি আমাকে ভেতর থেকে বেশ নাড়া দেয়- এটিও আমাকে বুখারী শরীফ মুখস্ত করতে তাগাদা দিয়েছে। আসলে আগ্রহ থাকলে হাদীসের কিতাব মুখস্ত করাটা কঠিন কিছু না, সহজই মনে হয়েছে আমার কাছে।
হাসনাইন সারওয়ার এবং মোহাম্মদ মাসউদুর রহমান দুজনের স্বপ্নই সুদূরপ্রসারী। তারা উভয়েই হাদীসের খেদমতে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করতে চান। তারা বলেন, আমরা মানুষের হেদায়েতের কারণ হতে চাই এবং আল্লাহ যেন আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট থাকেন- আমাদের প্রার্থনা শুধু এতটুকুই।
আপনার মতামত লিখুন :