শেখ নাজমুল ইসলাম (শার্শা ) যশোর :
প্রতি বছরের ন্যায় এ বছর ৩১মে ২০২৫ বাংলাদেশ সহ সারা বিশ্বে পালিত হলো বিশ্ব ধুমপান মুক্ত দিবস (World No-Tobacco Day) . বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’র (WHO)সদস্য দেশ গুলো নিয়ে ১৯৮৮ সাল থেকে পালিত হয়ে আসছে দিবসটি ৷ ২৪ যন্টা সময়সীমা ধরে তামাক ও তামাকজাত দ্রব্য সেবনের সকল প্রক্রিয়া থেকে বিরত থাকতে উৎসাহিত করার উদ্দেশ্যে দিবসটি প্রচলিত হয় ৷এ বছর বিশ্ব তামাক মুক্ত দিবসের স্লোগান হলো ” তামাক কোম্পানীর কুট কৌশল উন্মোচন করি, তামাক ও নিকোটিন মুক্ত বাংলাদেশ গড়ি “|
Smoking বা ধুমপান আসলে কি?
ধুমপান হলো তামাক জাতিয় দ্রব্য বিশেষ উপায়ে প্রক্রিয়াজাত করে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে তার ধোয়া শ্বাস নালীর ভিতর দিয়ে শশীরে প্রবেশ করানো ৷ ধুমপান যে একটি মারাত্বক ক্ষতিকারক বদ অভ্যাস তাতে কোন সন্দেহের অবকাশ নাই ৷ কারন আজ পর্যান্ত কোন গবেষক বা বিজ্ঞানী ধুমপানের পক্ষে কোন পজেটিভ যুক্তি দাড় করাতে পারে নাই ৷
ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নাল পত্রিকা ১৯৫০ সালে রিচার্ড ডোল ( Richard Doll) নামক এক বিজ্ঞানীর ধুমপান নিয়ে গবেষনার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে ৷ সেখানে তিনি ধুমপান ও ফুসফুসের ক্যান্সারের সাথে একটি সস্পর্কের কথা উল্লেখ করেন ৷ তার ঠিক চার বছর পর ব্রিটিশ ডক্টর স্টাডি নামে আর একটি গবেষনা প্রকাশ করা হয় ৷ গবেষনাটি ছিলো ৪০ হাজার ডক্টরের ২০ বছরের গবেষনার ফলাফল ৷ সেখানে ধুমপানের কারনে ফুসফুসের ক্যান্সারের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয় ৷ আর সেই গবেষনার পরে সরকার ঘোষনা করে ধুমপানের ফলে ফুসফুসেক ক্যান্সারের হার বৃদ্ধি পায় ৷
ওয়াল্ড পপুলেশন রিভিউ ( WPR) দেওয়া তথ্য মতে পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় ২২% লোক ধুমপানে আসক্ত ৷ বিশ্বের শীর্ষ ধুমপায়ী দেশের তালিকায় দেশের মোট জনসংখার ৫২ শতাংশ লোক ধুমপান করায় শীর্ষ স্থানে আছে পৃথিবীর অন্যতম ক্ষুদ্র দেশ নাউরু ৷ বাংলাদেশে আছে ৮ম অবস্থানে ৷ বাংলাদেশে প্রায় ৪ কোটি ধুমপায়ীর মধ্যে ৭% নারী ৷ দিন দিন নারী ধুমপায়ীর সংখ্যা উদ্বেগ জনক হারে বৃদ্বি পাচ্ছে ৷ বিশেষ করে পাবলিক এবং প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে নারীদের ধমপান করতে বেশী দেখা যায় ৷ শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি মাসে কোটি টাকার বেশী সিগারেট বিক্রি হয় ৷ ঢাবি’র টিএসসি তে ধুমপান নিষিদ্ধ সাইনবোর্ড ঝুলানো থাকলে ও নারী ধুমপায়ীদের জন্য অভায়অরন্যে পরিনত হয়েছে ৷ ঢাবির ছাত্রীরা ছাড়া ও বহিরাগত অনেক নারী নির্বিঘ্লে খোলামেলা পরিবেশে ধুমপান করার জন্য টিএসসি চত্তর বেছে নেয় ৷
তামাক ও তামাকজাত দ্রব্য নিয়ন্রনে বিভিন্ন আইন করা হয়েছে ৷ সিগারেটের প্যাকেটে ছবি সস্মিলিত সতর্কীকরন প্রচার বাধ্যতামুলক করা হয়েছে ৷ প্রতি বছর শুল্কহার বৃদ্ধি করা হচ্ছে ৷ ধুমপানকে নিরুৎসাহিত করার জন্য প্রতি বছর দাম বাড়ানো হচ্ছে ৷ তারপর ও ধুমপায়ীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে ৷ বাংলাদেশের সর্ব বৃহৎ সিগারেট কোম্পানী বৃটিশ আমেরিকান টোবাকো কোং একাই প্রতি বছর প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার সিগারেট বিক্রি করে থাকে ৷ ২০১৯~২০ থেকে ২০২৪~২৫ এই ৬ অর্থ বছরে প্রতেক বাজেটে অল্প অল্প করে সিগারেটের দাম বাড়ানো হয়েছে ৷ দেশের ১৮লক্ষের বেশী তরুন কিশোরদের ধুমপানে নিরুৎসাহিত করার জন্য ২০২৫-২০২৬ অর্থ বছরের বাজেটে সিগারেটের সর্ব নিম্ম দাম সলাকা প্রতি ১০ টাকা করার সুপারিশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা ৷ এই দাম বাড়ানোর ফলে একদিকে তরুনরা ধুমপানে নিরুৎসাহিত হবে , অন্য দিকে রাজস্ব আয় বেড়ে পৌছাতে পারে ৬৮ হাজার কোটি টাকায় ৷
প্রযুক্তির উন্নয়নের ছোয়া থেকে পিছিয়ে নেই তামাক শিল্প ৷ অন্যান্য সেক্টরের সাথে তাল মিলিয়ে বাজারে এসেছে ই-সিগারেট বা ইলেট্রিক সিগারেট ৷ আজকাল তরুনদের মধ্যে খূব জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এই স্টাইলিং ই-সিগারেট ৷ এক গবেষনায় দেখা গেছে সাধারন সিগারেটের চেয়ে ও ১০ গুন ক্ষতিকর এই ই- সিগারেট ৷ ই- সিগারেট ব্যাবহারের কারনে স্টোক, হার্ট এটাক ,সাডেন কার্ডিয়াক ডেথের শিকার হতে পারেন ৷ শিশু ও গর্ভবতীদের জন্য খুবই বিপজ্জনক ই-সিগারেটের নিকোটিন ৷
তামাক ও ধুমপান জনিত কারনে বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় ৮ লক্ষ লোক মারা যায় ৷ তার ভিতর শুধু বাংলাদেই মারা যায় ১লক্ষ ৬১ হাজার লোক ৷ তামাকের এই ভয়ংকর আগ্রাসি থাবা থেকে আমাদের পরবর্তী জেনারেশনকে রক্ষা করতে শুধু সরকারী প্রচার প্রচারনার দিকে তাকিয়ে না থেকে পরিবারের অভিভাবকদেরকে তাদের সন্তানদের প্রতি সজাক দৃষ্ঠি রাখা দরকার ৷
আপনার মতামত লিখুন :