৪৮ ঘণ্টায় ৯৭০ ফিলিস্তিনির মৃত্যু! আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জরুরি হস্তক্ষেপ চায় সউদী, নিন্দা রাশিয়ার


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : মার্চ ২০, ২০২৫, ৮:৩৮ পূর্বাহ্ণ /
৪৮ ঘণ্টায় ৯৭০ ফিলিস্তিনির মৃত্যু! আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জরুরি হস্তক্ষেপ চায় সউদী, নিন্দা রাশিয়ার

যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে পবিত্র রমজান মাসেও দখলদার ইসরাইলের গাজায় চালানো নৃশংস হামলায় গত দুদিনে অন্তত ৯৭০ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। গতকাল গাজার ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যানে ইসরাইলি হামলায় প্রাণহানির এই তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের নির্বিচার হামলায় গত ৪৮ ঘণ্টায় ৯৭০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, সোমবার স্থানীয় সময় দুপুর পর্যন্ত গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি যুদ্ধে প্রাণহানির সংখ্যা ৪৮ হাজার ৫৭৭ জনে পৌঁছায়। এরপর বুধবার দুপুরের দিকে এই সংখ্যা বেড়ে ৪৯ হাজার ৫৪৭ জনে দাঁড়িয়েছে। যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করে সোমবার রাত থেকে গাজা উপত্যকায় নির্বিচার হামলা শুরু করেছে ইসরাইলি বাহিনী। গত জানুয়ারিতে শুরু হওয়া এই ভঙ্গুর চুক্তির পর এটাই সবচেয়ে প্রাণঘাতী ইসরাইলি হামলা বলে জানিয়েছে হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

এর আগে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার ‘ডি-ফ্যাক্টো প্রধানমন্ত্রী’ ইসাম দা’আলিস ইসরাইলি বোমা হামলায় নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) এই ঘোষণা দিয়েছে ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। তারা বলেছে, হামাস-নিয়ন্ত্রিত গাজা উপত্যকার ‘ডি-ফ্যাক্টো প্রধানমন্ত্রী’ এবং গোষ্ঠীটির আরও বেশ কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তাকে হত্যা করেছে তারা।

‘সরকারি কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ কমিটি’র প্রধান (প্রধানমন্ত্রীর সমপর্যায়ের) ইসাম দ’আলিসের মৃত্যুর খবর জানায় হামাসও। এছাড়া, গোষ্ঠীটির বিচার মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক আহমেদ আল-খাত্তা, গাজার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রধান মাহমুদ আবু ওয়াতফা এবং হামাসের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বাহিনীর প্রধান বাহজাত আবু সুলতানের মৃত্যুর খবরও জানানো হয়। এক বিবৃতিতে আইডিএফ জানিয়েছে, বিস্তৃত অভিযানের অংশ হিসেবে তারা মঙ্গলবার ভোর থেকে গাজা উপত্যকার কয়েক ডজন লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালায় এবং হামাসের ওই চার জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে ‘টার্গেট করে’ হত্যা করেছে। আইডিএফ বলছে, এই হামলার লক্ষ্য ‘হামাসের সামরিক ও সরকারি সক্ষমতাকে আঘাত করা এবং ইসরাইল ও এর নাগরিকদের জন্য হুমকি দূর করা’।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জরুরি হস্তক্ষেপ চায় সউদী, নিন্দা রাশিয়ার : গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি দখলদার বাহিনীর আগ্রাসন পুনরায় শুরু হওয়ার নিন্দা জানিয়েছে সউদী মন্ত্রী পরিষদ। মঙ্গলবার জেদ্দায় ক্রাউন প্রিন্স এবং প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন সালমানের সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সউদী প্রেস এজেন্সিকে দেয়া এক বিবৃতিতে, গণমাধ্যমমন্ত্রী সালমান আল-দোসারি বলেন যে, মন্ত্রিসভা এই অপরাধ বন্ধ করতে এবং ফিলিস্তিনি জনগণের মুখোমুখি মানবিক সংকটের অবসান ঘটাতে জরুরি ভিত্তিতে হস্তক্ষেপ করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দায়িত্বের উপর জোর দিয়েছে। সভার শুরুতে, ক্রাউন প্রিন্স রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন এবং ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির সঙ্গে টেলিফোনে কথোপকথনের সময় অনুষ্ঠিত আলোচনা সম্পর্কে মন্ত্রিসভাকে অবহিত করেন। মন্ত্রিসভা আরব, আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রের সর্বশেষ উন্নয়ন পর্যালোচনা করে, এ বিষয়গুলিতে রাজ্যের দৃঢ় অবস্থান এবং আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বৃদ্ধির প্রচেষ্টার প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করে।

এদিকে, মঙ্গলবার গাজায় ইসরাইলের সর্বশেষ বিমান হামলায় চার শতাধিক মানুষ নিহত হওয়ার ঘটনায় রাশিয়া ‘গভীর দুঃখ’ প্রকাশ করেছে এবং বলেছে যে বেসামরিক মানুষের মৃত্যুর কারণ হতে পারে এমন যেকোনো পদক্ষেপের তারা নিন্দা জানায়। ‘গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের সামরিক অভিযান পুণরায় শুরু করার বিষয়টি মস্কো গভীর অনুশোচনার সাথে জানতে পেরেছে,’ রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে উভয় পক্ষকে আলোচনায় ফিরে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেছে।

‘অভিজ্ঞতা অনুসারে, বল প্রয়োগের মাধ্যমে জিম্মিদের মুক্ত করার বিষয়টি সমাধান করা অসম্ভব। বেসামরিক মানুষের মৃত্যু এবং সামাজিক অবকাঠামো ধ্বংসের দিকে পরিচালিত করে এমন যেকোনো পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানায় রাশিয়া।’ ক্রেমলিন বলেছে যে, ‘আবারও উত্তেজনা বৃদ্ধি’ নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন। ‘বিশেষ করে বেসামরিক জনগণের মধ্যে বড় ধরনের হতাহতের খবর অবশ্যই উদ্বেগজনক,’ ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, ‘আমরা পরিস্থিতি খুব কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করছি এবং অবশ্যই, আমরা এটি শান্তিপূর্ণ পথে ফিরে আসার জন্য অপেক্ষা করছি।’ সূত্র : এএফপি, আল-জাজিরা, সউদী গেজেট, রয়টার্স।