বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, আমাদের আগামী দিনের নীতি জনবান্ধব রাজনীতি। আমাদের লক্ষ্য মানুষের বাক্স্বাধীনতা, ভোটের অধিকার নিশ্চিত করা। অর্থনৈতিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। আমাদের এ বার্তা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। জনগণ প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন চায়। জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারলেই আপনি নেতা। জনগণ প্রত্যাখ্যান করলে আপনি নেতা নন।
গতকাল রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন প্রাঙ্গণে জাতীয়তাবাদী যুবদল আয়োজিত ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন ও আমার না বলা কথা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভার্চুয়ালি বক্তৃতায় এসব কথা বলেন তিনি। এ সময় দেশ নিয়ে বিএনপির পরিকল্পনার কথা জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি তাদের আস্থা অর্জনে যুবদল নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। জুলাইয়ের গণ অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে গতকালের অনুষ্ঠানে সংগঠনের ৭৮ শহীদ পরিবারকে সম্মাননা দিয়েছে জাতীয়তাবাদী যুবদল। শহীদ পরিবারের পাশাপাশি অনুষ্ঠানে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে সম্মাননা জানানো হয়েছে।
এ ছাড়া অনুষ্ঠানে শহীদ পরিবারকে সম্মাননা, উপহার এবং আর্থিক অনুদান প্রদান করা হয়। চব্বিশের গণ অভ্যুত্থানকে গতিশীল ও বিভিন্ন দেশে প্রবাসীদের সংগঠিত করে ফ্যাসিবাদের পতন ত্বরান্বিত করতে ভূমিকা রাখা যুবদলের ১২ জন প্রবাসী নেতাকে সম্মাননা দেওয়া হয়। পাশাপাশি যুবদলের ছয়জন নেতাকে মরণোত্তর সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়। জুলাই আন্দোলন চলাকালে দায়িত্ব পালনকারী সব মহানগর ও জেলা ইউনিটের নেতাদেরও সম্মাননা দেওয়া হয়। এ ছাড়াও জুলাই গণ অভ্যুত্থানের ছয়টি বিশেষ স্থানে ইতোমধ্যে যুবদল গ্রাফিতি অঙ্কন করেছে। যুবদলের উদ্যোগে গতকাল ঢাকা মহানগরীর ১০টি আর্ট স্কুলের প্রায় ১ হাজার ৫০০ শিশু-কিশোরদের নিয়ে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী শীর্ষ ৫০ জনকে কৃতিত্বের সনদ ও উপহার সামগ্রী দেওয়া হয়েছে।
যুবদল সভাপতি মোনায়েম মুন্নার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ ছাড়া বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ও যুবদলের সাবেক সভাপতি মির্জা আব্বাসসহ সংগঠনটির সাবেক নেতারা বক্তব্য রাখেন।
তারেক রহমান বলেন, ‘১৭ বছর দেশের মানুষ অত্যাচার, গুম, খুনের শিকার হয়েছেন। অভ্যুত্থানের শহীদদের আমরা যদি সত্যিকারের সম্মানিত করতে চাই, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ যারা নিজেদের অধিকারের কথা বলতে চেয়েছিলেন, তাদের ত্যাগের প্রতি সম্মান জানাতে হবে। দেশের ছাত্র ও যুবসমাজ যারা দেশকে গড়ে তুলবে, এগিয়ে নেবে, যারা শহীদ হয়েছেন তাদের প্রত্যাশিত দেশ গড়ে তুলব আমরা।’
তিনি আরও বলেন, ‘ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প উৎপাদন ও রপ্তানি নিয়েও কাজ চলছে। কীভাবে উৎপাদন বাড়ানো যায় সে চেষ্টা আমরা করব। আমরা যদি ছোট ছোট উদ্যোক্তা তৈরি করতে পারি, তাহলে আরও মানুষের কর্মসংস্থান হবে। আর কর্মক্ষম জনসংখ্যাকে সম্পদে রূপান্তর করা হবে।’ এ সময় তরুণদের জন্য বহু ভাষা শিক্ষার ব্যবস্থা করা হবে বলেও ঘোষণা দেন তিনি। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘জনগণের রায়ে বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে, সারা দেশের স্বাস্থ্য সেবাখাতকে নতুন করে সাজানো হবে। নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হবে। ইউনিয়ন পর্যন্ত প্রতিটি গ্রামে এই সেবা পৌঁছে যাবে। এতে সম্পৃক্ত হবেন নারীরাও।’
এদিকে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় গণতন্ত্রের উত্তরণের পথে অস্থিরতা সৃষ্টির চক্রান্ত চলছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘যখনই দেশ ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়, যখনই অর্থনীতি ধ্বংস হয়ে যায়, তখনই বিএনপি দায়িত্ব নিয়ে সেটাকে আবার পুনর্গঠন করেছে প্রতিটি সময়।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা দীর্ঘ ১৭ বছর সংগ্রাম করেছি, লড়াই করেছি। প্রথমে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে এবং তারপরে প্রায় আট বছর তারেক রহমানের নেতৃত্বে আমরা এই আন্দোলনকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে এসেছি। আজকে একটা ষড়যন্ত্র চলছে, একটা চক্রান্ত চলছে, দেশে আবার একটা অস্থিরতা সৃষ্টি করতে, দেশে একটা ষড়যন্ত্র তৈরি করতে- যেন বাংলাদেশে গণতন্ত্রের উত্তরণ সঠিক মতো না হয়।’ দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘যদি শেখ হাসিনা যথারীতি ক্ষমতা হস্তান্তর করতেন দেশে আজকে এই গোলযোগ সৃষ্টি হতো না। আজকে আরও একটি কথা শুনলাম। সাদিক নামে একজন মেজর দেশে বসে চক্রান্ত করছেন। এই সমস্ত চক্রান্ত কিন্তু আমরা বুঝি। এগুলো একটি বানানো নাটক। যাতে নির্বাচনটা পেছানো যায়, যাতে নির্বাচনটা না হয়।’
আপনার মতামত লিখুন :