‘৯ দফা’ আন্দোলন ঘিরে কাঁটাবনে তৈরি হয়েছিল ‘আন্দোলনের কন্ট্রোলরুম’


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : আগস্ট ১, ২০২৫, ৪:৪২ অপরাহ্ণ /
‘৯ দফা’ আন্দোলন ঘিরে কাঁটাবনে তৈরি হয়েছিল ‘আন্দোলনের কন্ট্রোলরুম’
  • “আমার সাবেক সহকর্মী ইস্রাফিল ফরাজীর সঙ্গে কাঁটাবনের এক ভবনের রুমে ঢুকি। সেখানে দেখি ছাত্র নেতারা তৎপরভাবে কাজ করছেন, কেউ ফোনে যোগাযোগ করছেন, কেউ ল্যাপটপে টাইপ করছেন—প্রস্তুত হচ্ছে ৯ দফার খসড়া। যারা ছিলেন তাদের অনেকের নাম পরে জানতে পারি—আবু সাদিক কায়েম, সিবগাতুল্লাহ সিবগা, শাহেদী, ফরহাদ, মোসাদ্দেকসহ আরও কয়েকজন।”

জুলাইয়ের উত্তাল আন্দোলনের এক গুরুত্বপূর্ণ মোড় ছিল ৯ দফা দাবি, যা ফ্যাসিস্ট দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার ক্ষোভকে সংগঠিত করেছিল। এই সাহসী দাবিগুলোর মাধ্যমে আন্দোলনে নতুন গতি এসেছিল।

৯ দফা দাবির মূল বিষয়বস্তু ছিলঃ

১. শিক্ষার্থী হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে প্রধানমন্ত্রীকে জাতির কাছে দুঃখ প্রকাশ করতে হবে।

২. সড়ক ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি।

৩. হত্যাকাণ্ড সংঘটিত এলাকায় ডিআইজি ও এসপি বরখাস্তের দাবি।

৪. চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রক্টরের পদত্যাগ চাওয়া হয়।

৫. নিহত ও আহতদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

৬. অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য ও রাজনৈতিক দুর্বৃত্তদের গ্রেপ্তার ও মামলার আওতায় আনতে হবে।

৭. দলীয় প্রভাবে পরিচালিত ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করে গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ চালু করতে হবে।

৮. দ্রুত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও আবাসিক হল খুলে দিতে হবে।

৯. আন্দোলনে যুক্ত শিক্ষার্থীদের হয়রানি না করার নিশ্চয়তা চাই।

এই ৯ দফা তৈরির সময়কার অভিজ্ঞতা স্মরণ করেছেন সাংবাদিক অন্তু মুজাহিদ। এক ফেসবুক পোস্টে তিনি জানান, কীভাবে একটি বহুতল ভবনের একটি ঘরে গড়ে উঠেছিল সেই রাতের ‘আন্দোলন কন্ট্রোলরুম’।

তিনি বলেন, “আমার সাবেক সহকর্মী ইস্রাফিল ফরাজীর সঙ্গে কাঁটাবনের এক ভবনের রুমে ঢুকি। সেখানে দেখি ছাত্র নেতারা তৎপরভাবে কাজ করছেন, কেউ ফোনে যোগাযোগ করছেন, কেউ ল্যাপটপে টাইপ করছেন—প্রস্তুত হচ্ছে ৯ দফার খসড়া। যারা ছিলেন তাদের অনেকের নাম পরে জানতে পারি—আবু সাদিক কায়েম, সিবগাতুল্লাহ সিবগা, শাহেদী, ফরহাদ, মোসাদ্দেকসহ আরও কয়েকজন।”

অন্তু জানান, ভাষাগত ও বানান ঠিক করার দায়িত্ব পড়েছিল তার ওপর। এরপরই আসে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত—এই ৯ দফা কোন নেতার নামে প্রকাশিত হবে? সিদ্ধান্ত হয় আব্দুল কাদেরের নামে যাবে, কারণ তিনি নিরাপদে আছেন এবং গণমাধ্যমের সঙ্গে যোগাযোগ সহজ হবে।

সেই মুহূর্তে বিদ্যুৎ চলে গেলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়। বাইরে গোলাগুলির শব্দ, রাস্তায় পুলিশ মোতায়েন। প্রিন্ট করতে হবে, তাই সিদ্ধান্ত হয় মেসেজ ও বাইকযোগে মিডিয়াতে পৌঁছে দেওয়া হবে দাবি। নিচে নামতেই দেখা যায় গেট তালাবদ্ধ, বাইরে বিপজ্জনক পরিস্থিতি। অনেক বোঝানোর পর দারোয়ান গেট খোলে, পুলিশের চোখ এড়িয়ে তারা দ্রুত নিরাপদ স্থানে পৌঁছান।

এরপর দুইটি মোটরসাইকেল ভাগ হয়ে বিভিন্ন টিভি চ্যানেল ও সংবাদপত্রের অফিসে ছড়িয়ে দেয় ৯ দফা। একটি বাইক যায় সময় টিভি, এনটিভি, প্রথম আলো, ডেইলি স্টারসহ মিডিয়ায়, আরেকটি চ্যানেল ২৪, ডিবিসি, যুগান্তরসহ অন্যান্য গণমাধ্যমে।

পথে পথে সেনা-পুলিশের চেকপোস্টে সাংবাদিক পরিচয় দেখিয়ে, নানা বাধা পেরিয়ে ৯ দফা পৌঁছে যায় টিভি চ্যানেল ও সংবাদমাধ্যমে। পরে কালবেলা অফিসেও সফট কপি পাঠানো হয়, যারা আগে থেকেই প্রস্তুত ছিলেন।

অন্তু বলেন, “সেদিন শুধু সাংবাদিকতা নয়, নিজ দায়িত্বে দেশের প্রতি কর্তব্যবোধ থেকেই এই দায়িত্ব পালন করেছি। কেউ যদি আজও ভুল তথ্য ছড়ায়, তাহলে সেটা মেনে নেওয়া যাবে না। জুলাই কোনো দলের নয়—এটা সাধারণ মানুষের, শ্রমিক-কৃষকের, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাস।”

তিনি শেষ করে বলেন, “জুলাইকে পণ্য না বানিয়ে, এর প্রতি যথাযথ সম্মান দেখানো উচিত। এ আন্দোলন সম্মান, ভালোবাসা আর ত্যাগের প্রতীক হয়ে থাকুক।”