নিজস্ব প্রতিবেদক: বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারত থেকে চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩১৫ কোটি ২৩ লাখ টাকা কম রাজস্ব আদায় হয়েছে।
ওই ছয় মাসে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ হাজার ৩৩৭ কোটি ৪ লাখ টাকা। সেখানে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৩ হাজার ২২ কোটি ১৭ লাখ টাকা। তবে গত অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর ৩ মাসে রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি পেয়েছে। ওই তিন মাসে রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক হাজার ৭৯৪ কোটি এক লাখ টাকা। সেখানে আদায় হয়েছে এক হাজার ৯১৮ কোটি ২৯ লাখ টাকা। জানা যায়, দেশের মোট ২৪টি স্থলবন্দরের মধ্যে ভারতের সাথে বাণিজ্য হয় ১৬ টি বন্দরের। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাণিজ্য হয় বেনাপোল- পেট্রাপোল বন্দরের মধ্যে। তবে দেশ করোনা ভাইরাসের কবলে পড়ে ২০১৯ সাল থেকে বৈশ্বিক মন্দায় ডলারের দাম ঊর্ধ্বগতিতে কমে আসছে আমদানির পরিমাণ। এছাড়া দ্রুত পণ্য ছাড়করণ ও অবকাঠামোগত নানান সমস্যাও বানিজ্য ঘাটতির কারণ হয়ে ওঠে। তবে অন্তবর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর বাণিজ্য সম্প্রসারণে নানা উদ্যোগ নেয়। গত দুই মাসে বেনাপোল বন্দরের শূন্য রেখায় চালু করা হয় বন্দর কার্গো ভেহিকেল টার্মিনাল ও বন্দরে বসানো হয় স্ক্যানিং মেশিন। দ্রুত পণ্য খালাস ও বাণিজ্য সম্প্রসারনে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এনবিআরের উদ্যেগে কমিটি গঠন করে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়। এতে বর্তমানে বাণিজ্যে অনেকটা গতি ফিরে হয়রানি কমেছে। যা সামনের দিনে প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে আমদানি, রফতানি বাড়াতে বড় ভূমিকা রাখবে।
এপথে আমদানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে শিল্পকলকারখানার কাঁচামাল, তৈরী পোশাক, গার্মেন্টস, শিশু খাদ্য, মাছ কেমিক্যালসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য। আর রফতানি পণ্যের মধ্যে পাট, পাটের তৈরী পণ্য, গার্মেন্টস, তৈরী পোশাক, কেমিকেল, বসুন্ধারা টিসু, মেলামাইন, মাছ উল্লেখযোগ্য।
বেনাপোল কাস্টমস সূত্রে জানা যায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাইয়ে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৪১৩ কোটি ৯৯ লাখ, আয় হয়েছে ৪১৩ কোটি ২২ লাখ টাকা। আগস্টে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫২০ কোটি ৯৯ লাখ, আয় হয়েছে ৪০১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। সেপ্টেম্বরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬০৮ কোটি ৩২ লাখ, আয় হয়েছে ৪৮৯ কোটি ১১ লাখ টাকা। অক্টোবরে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৫৯৮ কোটি ১ লাখ, আয় হয়েছে ৫২৪ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। নভেম্বরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৯৯ কোটি, আয় হয়েছে ৬১৪ কোটি ৭১ লাখ টাকা। ডিসেম্বরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৯৭ কোটি, সেখানে আয় হয়েছে ৭৭৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের দপ্তর সম্পাদক মোস্তাফিজ্জোহা সেলিম জানান, বছরে ভারত থেকে আমদানি হয় ৫০ হাজার কোটি টাকার বিভিন্ন ধরনের পণ্য এবং ৮ হাজার কোটি টাকার বিভিন্ন ধরনের পণ্য রফতানি হয়ে থাকে।যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেশির ভাগ আমদানিকারকেরা বেনাপোল বন্দর ব্যবহারে আগ্রহী। তবে দ্রুত পণ্য খালাস নানান প্রতিবন্ধকতায় হয়রানি হতে হয়। বাণিজ্য সহজীকরণ ব্যবস্থা নিশ্চিত হলে আমদানি ও রাজস্ব বাড়বে।
বেনাপোল বন্দরের সহকারী পরিচালক কাজী রতন জানান, ইতোমধ্যে বেনাপোল বন্দরে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ সমাপ্ত হয়েছে। পুরো বন্দরে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। অবকাঠামোগত উন্নয়ন কাজ অব্যাহত রয়েছে। আশা করছি সবকাজ শেষ হলে বাণিজ্য বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে।
যশোর চেম্বার অব কমার্সের নির্বাহী সদস্য আলহাজ্ব নুরুজ্জামান লিটন জানান, ডলার সংকটসহ নানা প্রতিকূল পরিবেশে গত কয়েক বছর ধরে দেশে ব্যবসায়ীক মন্দাভাব বিরাজ করছে। আমদানি কম হলে রাজস্ব আদায়ও কম হবে। তবে বেনাপোল বন্দরেও রয়েছে অনেক সমস্যা। বেনাপোল বন্দরে নেই প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম। এতে করে পণ্য খালাসে গতি কমে যাচ্ছে।
বেনাপোল কাস্টম কমিশনার মো: কামরুজ্জামান জানান, আমদানি কমলে রাজস্বও কম হলে এটা স্বাভাবিক। তবে গেল তিন মাসে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) আমাদের আমদানি ও রাজস্ব আদায়ের হার ভালো। আশা করছি সামনের মাসগুলোতে আমাদের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়ে যাবে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বন্দর কর্তৃপক্ষ সহ ব্যবসায়ী সহযোগী সরকারি দপ্তর গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপে ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধিতে সহায়ক বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।