সাগরে সৃষ্টি হওয়া গভীর নিম্ন চাপের কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে দিনভর ভারী বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়া জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। উপকূলীয় এলাকায় স্বাভাবিকের চেয়ে পাঁচ-ছয় ফুট উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাস বা জোয়ারের আঘাতে ভেঙে গেছে ঘরবাড়ি। ভেসে গেছে মাছের ঘের। বৈরী আবহাওয়ার কারণে বন্ধ রয়েছে নৌ-যোগাযোগ। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা। রাজধানীতে সকাল থেকে ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টিপাতের ফলে বিভিন্ন রাস্তাঘাটে পানি জমে মানুষের দুর্ভোগ চরম পর্যায়ে পৌঁছায়। সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই।
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া গভীর নিম্ন চাপটি গতকালই বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করেছে। এর প্রভাবে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, ভোলা, হাতিয়া, সন্দ্বীপ, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ দুই থেকে পাঁচ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়। সেন্টমার্টিনে সকাল থেকে স্বাভাবিকের চেয়ে পানির উচ্চতা পাঁচ ফুট বৃদ্ধি হওয়ায় জোয়ারের আঘাতে দ্বীপের চারপাশে ভেঙে গেছে। যার কারণে সেন্টমার্টিনের অন্তত অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। এ ছাড়া জোয়ারের আঘাতে ঘাটে নোঙরে থাকা পাঁচটি মাছধরা ট্রলার বিধ্বস্ত হয়েছে। মহেশখালীতে জোয়ারের পানিতে ডুবে নিহত হয়েছেন একজন। কুতুবদিয়ায় লবণের ট্রলার ডুবে নিখোঁজ আটজন।
এর প্রভার পড়েছে রাজধানীতেও। সকাল থেকে টানা বৃষ্টির কারণে সড়কে যেমন গাড়ি চাপ বেড়েছে, তেমনি যানবাহন চলাচলে ধীরগতি রয়েছে। এতে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে। সকালে ভোগান্তি নিয়ে কর্মজীবী মানুষ অফিসে পৌঁছালেও অফিস শেষে ফেরার পথে ভোগান্তি বেড়েছে দিগুণ। বিকেল ৪টার পর নামে মুষলধারে বৃষ্টি। এতে অলিগলিতে পানিবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। রাজধানীর প্রধান সড়কগুলোতে গাড়ির গতি প্রায় থেমে যায়। আসাদ গেট, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, সায়েন্সল্যাব, নিউমার্কেট, শাহবাগসহ রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে যানজট দেখা যায়। যানজটে আটকে রিকশা, সিএনজি না পেয়ে অনেককে বৃষ্টিতে ভিজে গন্তব্যে পৌঁছাতে হয়েছে।
বৈরী আবহাওয়ার কারণে ঢাকার প্রধান নদীবন্দর সদরঘাট নৌ-টার্মিনাল থেকে অভ্যন্তরীণ নৌপথের সব ধরনের লঞ্চ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ফলে বিপাকে পড়েছেন ঘাটে আসা যাত্রীরা। লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় তাদের কেউ কেউ ফিরে যাচ্ছেন, কেউ কেউ ছুটে যাচ্ছেন বাস টার্মিনালে। বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি)। পদ্মা নদী উত্তাল থাকায় দুর্ঘটনা এড়াতে কর্তৃপক্ষ এ সিদ্ধান্ত নেয়। বৈরী আবহাওয়ায় পর্যটকশূন্য হয়ে পড়েছে কক্সবাজার ও কুয়াকাটাসহ বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্র। যারা কক্সবাজার গেছেন তাদেরকেও হোটেলে বন্দি অবস্থায় দিন পার করতে হয়েছে।
এদিকে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র দেশের ১১ জেলায় স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলে সতর্কতা জারি করেছে। পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, শুক্রবার পর্যন্ত ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকায় দেশের উত্তরে রংপুর, নীলফামারি, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রাম, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, নেত্রকোনা এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ফেনী জেলায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
বরিশাল ব্যুরো জানায়, নিম্ন চাপের প্রভাবে বরিশালসহ সন্নিহিত এলাকাজুড়ে দিনভর লাগাতার বর্ষণ হয়েছে। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে বরিশাল নদী বন্দরসহ পুরো দক্ষিণাঞ্চলের অভ্যন্তরীণ রুটে সকাল থেকে সব যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। সকাল থেকে বরিশাল মহানগরীসহ দক্ষিণাঞ্চলের বেশির ভাগ এলাকায়ই বিদ্যুৎ সরবারহ ও বিতরণ ব্যবস্থাও লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। দিনভরই বিদ্যুৎ নিয়ে নগরবাসীসহ এ অঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগের শেষ ছিল না। বরিশাল মহানগরী সংলগ্ন কির্তনখোলা বাদে সন্নিহিত তেঁতুলিয়া, মেঘনা, সুরমা, কঁচা, বলেশ্বর, বিষখালী, সন্ধ্যা ও সুগন্ধ্যাসহ এ অঞ্চলের বেশির ভাগ নদ-নদীর পানি জোয়ারের সময় স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বৃদ্ধি পাচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের ২৩টি গেজ স্টেশন থেকে সার্বক্ষণিকভাবে নদ-নদীসমূহের প্রবাহ ও পানির উচ্চতা পর্যবেক্ষণ করছে।
কক্সবাজার ব্যুরো জানায়, নিম্ন চাপের কারণে সারা দেশের মতো কক্সবাজারের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। উত্তাল রয়েছে সাগর। পানি বেড়েছে উপকূলীয় এলাকায়। সেন্টমার্টিন থেকে কুতুবদিয়া পর্যন্ত উপকূলীয় এলাকায় দুই থেকে তিন ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। কক্সবাজার শহরের সমিতি পাড়া এলাকায় প্লাবিত হয়েছে ঘরবাড়ি। উপকূলে ভাঙা বেড়িবাঁধ থেকে পানি ঢুকে প্লাবিত হয়েছে ব্যাপক এলাকা, ক্ষতি হয়েছে স্তূপ করা লবণ ও চিংড়ি ঘেরের। জোয়ারের পানিতে ভেসে গিয়ে মহেশখালীতে নিহত হয়েছেন একজন এবং কুতুবদিয়ার অদূরে বঙ্গোপসাগরে লবণের ট্রলার ডুবে নিখোঁজ রয়েছে আরো আটজন লবণ শ্রমিক। জানা গেছে, চট্টগ্রাম যাওয়ার পথে কুতুবদিয়ার অদূরে বঙ্গোপসাগরে ছয় হাজার মণ লবণ বোঝাই একটি বোট ডুবে যায়। এসময় সাথে থাকা আটজন লবণ শ্রমিক নিখোঁজ রয়েছেন। নিম্ন চাপের প্রভাবে মহেশখালী ও কুতুবদিয়ার বিভিন্ন এলাকায় স্তূপ করা ব্যাপক লবণের ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে। বাংলাদেশ লবণ-চাষি কল্যাণ সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি অ্যাডভোকেট শাহাবুদ্দিন এ প্রসঙ্গে বলেন, বিভিন্ন এলাকায় খোলা জায়গায় স্তূপ করে রাখা ১০ থেকে ২০ হাজার মণ লবণ পানিতে ভেসে গেছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
খুলনা ব্যুরো জানায়, গভীর নিম্ন চাপের কারণে উপকূলীয় জেলার বিভন্ন এলাকা চার ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়েছে। এর প্রভাবে খুলনা মহানগরীতে দিনভর বৃষ্টি হয়েছে। ফলে সকাল থেকে শিক্ষার্থী ও কর্মজীবী মানুষেরা পড়েন বিপাকে। আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, এ অবস্থা থাকতে পারে আরো পাঁচদিন। নগরীর গল্লামারী এলাকার রন্টি রায় জানান, বৃষ্টির কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারে প্রভাব পড়েছে। সকাল বেলার কাঁচাবাজারে ক্রেতা সমাগম ছিল কম। সবজি ও মাছের দাম সামান্য বেড়ে গেছে। সকাল থেকে এমন বৃষ্টি মানুষ ঘর থেকে বাইরে বের হতে পারছে না। অমাবস্যা ও গভীর নিম্ন চাপের কারণে উপকূলীয় জেলা খুলনার কয়রা, দাকোপ, পাইকগাছা ও চরসমূহ দুই থেকে চার ফুট অধিক উচ্চতার বায়ুতাড়িত পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
স্টাফ রিপোর্টার চাঁদপুর থেকে জানান, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্ন চাপের প্রভাবে চাঁদপুর-ঢাকা নৌপথের সব ধরনের লঞ্চ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এদিকে গভীর নিম্ন চাপের কারণে চাঁদপুরে নদ-নদীর পানি কিছুটা বেড়েছে। উপকূলীয় জেলা চাঁদপুরের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সঙ্কেতের আওতায় আনা হয়েছে। গতকাল ভোর ৫টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত ৯৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
নোয়াখালী জেলা সংবাদদাতা জানান, গভীর নিম্ন চাপের কারণে নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়া, নিঝুমদ্বীপ, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চর এলাহি, মুছাপুর, চরফকিরা, চরহাজারী ও চরপার্বতি ইউনিয়নের অংশবিশেষ প্রবল সামুদ্রিক জোয়ার, দমকা হাওয়া ও টানা ভারী বর্ষণের ফলে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে। এতে নিঝুম দ্বীপ, নলচিরা, তমরোদ্দি, বাংলাবাজার, চরচেঙ্গা, হরনি ও চানন্দি ইউনিয়নের বহু এলাকা পানির নিচে চলে গেছে। একই সঙ্গে গত ৩৬ ঘণ্টা ধরে হাতিয়ার সঙ্গে সারাদেশের সব ধরনের নৌ ও স্থল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। এতে করে চেয়ারম্যান ঘাট এলাকায় অন্তত পাঁচ শতাধিক যাত্রী আটকা পড়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, সৃষ্ট নিম্নাঞ্চলের প্রভাবে সমুদ্র উত্তাল রয়েছে। তীব্র জোয়ারের পানিতে পুকুরের মাছ ভেসে গেছে, রাস্তা-ঘাট পানির নিচে চলে গেছে এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা চরম ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।
ভোলা জেলা সংবাদদাতা জানান, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্ন চাপের প্রভাবে ভোলার মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদী ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছে। স্বাভাবিকের তুলনায় নদীর পানি চার থেকে পাঁচ ফুট বেড়ে যাওয়ায় ভোলার অনেক নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে বিচ্ছিন্ন চর এবং বাঁধের বাইরের হাজারো ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। নদীর তীরবর্তী মানুষদের মধ্যে দেখা দিয়েছে উৎকণ্ঠা ও আতঙ্ক। মেঘনা ও তেঁতুলিয়ার পানি ভয়াবহভাবে উত্তাল থাকায় জেলেরা নৌকা নিয়ে নদীতে নামতে পারেনি। অনেকেই এখন নদীর তীরে সময় কাটাচ্ছেন। অন্যদিকে, তজুমদ্দিন উপজেলার স্লুইসগেট এলাকায় চলতি মৌসুমে নির্মিত রিংবাঁধের উপর দিয়ে নদীর পানি প্রবেশ করে লোকালয় প্লাবিত করেছে। এদিকে পাঁচটি নৌ-রুটে লঞ্চ ও দু’টি রুটে ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা। রোগী বহনকারী পাঁচ-ছয়টি অ্যাম্বুলেন্স ফেরিঘাটে ফেরির অপেক্ষায় থাকতে দেখা গেছে। রোগীর স্বজনরা রয়েছেন আশঙ্কায়। জরুরি কাজ ছাড়া কেউ ঘর থেকে তেমন একটা বের হতে দেখা যায়নি।
ঝিনাইদহ জেলা সংবাদদাতা জানান, লঘুচাপের প্রভাবে ঝিনাইদহে সকাল থেকেই থেমে থেমে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। সঙ্গে বইছে দমকা হাওয়া। হঠাৎ এমন আবহাওয়ায় জনজীবনে নেমে এসেছে স্থবিরতা। বৃষ্টির কারণে শহরের ব্যস্ত সড়কগুলো হয়ে পড়েছে ফাঁকা। প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। যারা বের হয়েছেন, তারা ছাতা ও রেইনকোট ব্যবহার করে গন্তব্যে পৌঁছাতে চেষ্টা করছেন। তবে যানবাহনের সংখ্যা ছিল তুলনামূলকভাবে কম। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন খেটে খাওয়া দিনমজুর, রিকশাচালক ও ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা। সকালে শহরের পায়রা চত্বর এলাকায় দেখা যায়, অনেক রিকশাচালক অলস বসে সময় কাটাচ্ছেন। ব্যাপারিপাড়ার রিকশাচালক খোকন মণ্ডল বলেন, সকালে বের হইছি রিকশা নিয়ে, কিন্তু যাত্রী নাই। বৃষ্টি আর ঠাণ্ডা বাতাসে কেউ রাস্তায় বের হচ্ছে না। সকাল থেকে এখন পর্যন্ত ঠিকমতো ভাড়া পাইনি। বৃষ্টির দিনে ঘরে বসে থাকলে তো পেট চলবে না, তাই নামছি রাস্তায়ন।
মোরেলগঞ্জ (বাগেরহাট) সংবাদদাতা জানান, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্ন চাপের প্রভাবে বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের উপকূলীয় বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে টানা বৃষ্টিপাত হচ্ছে, জোয়ারের অতিরিক্ত পানিতে পৌরশহরসহ ২০ গ্রাম প্লাবিত হয়ে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। হুমকির মুখে পড়ছে রাস্তা-ঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বেড়িবাঁধসহ বেশ কিছু বাড়িঘর। পৌর শহরের কাপুড়িয়া পট্টির কাঁচাবাজার কলেজ রোড, কেজি স্কুল সডক, উপজেলা প্রশাসনিক চত্বর পানিতে তলিয়ে গিয়ে শহরের দোকানিদের ক্রয়-বিক্রয় দিনে বন্ধ হয়ে পড়েছে। জনজীবন হয়ে পড়েছে বিপর্যস্ত।
মোংলা সংবাদদাতা জানান, বৈরী আবহাওয়ায় মোংলা বন্দরে অবস্থানরত দেশি-বিদেশি ১০টি বাণিজ্যিক জাহাজের সারসহ বিভিন্ন পণ্য খালাস ও বোঝাই কাজ ব্যাহত হচ্ছে। এ ছাড়া পশুর নদীর জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে তিন ফুট বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে সুন্দরবনের কিছু নিম্নাঞ্চল পানিতে তলিয়ে গেছে।
বন্দর (নারায়নগঞ্জ) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, নারায়ণগঞ্জের বন্দরে অতিরিক্ত ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে নি্মনাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে করে চরম দুর্ভোগের শিকার হয়েছে সাধারণ জনগণ। অতিমাত্রায় বৃষ্টিপাতের কারণে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন ওয়ার্ডে আবারো পানিবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এ ছাড়াও বন্দর উপজেলার কলাগাছিয়া ইউনিয়নের শান্তিনগর, চর ধলেরশ্বরী, মুছাপুরের চর ইসলামপুর, মহনপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় নতুন করে প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে বন্দরে শীতলক্ষ্যা, ধলেরশ্বরী ও ব্রহ্মপুত্র নদীর পানি অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে।
দাউদকান্দি (কুমিল্লা ) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, দাউদকান্দি পৌর সদরে অপরিকল্পিতভাবে ঘরবাড়ি নির্মাণ করায় এবং পানি নিষ্কাশনের ড্রেনের ব্যবস্থা না থাকায় এক দিনের ব্যাপক বৃষ্টিপাতে অনেক বাড়িতে পানি জমে পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এলাকার কিছু প্রভাবশালী মহল দীর্ঘদিন পৌরসভার আইন কানুন তোয়াক্কা না করে অপরিকল্পিতভাবে ঘরবাড়ি নির্মাণ করায় এবং পানি নিষ্কাশনের জন্য ড্রেনের ব্যবস্থা না থাকায় পৌরবাসীর দুর্ভোগ দেখা যাচ্ছে। বৃষ্টির পরিমাণ একটু বেশি হলেই হাঁটু পানি ঝাঁপিয়ে চলাচল করতে হয়। পৌর এলাকার অনেকেই বিগত দিনে সরকারি নিয়ম-নীতি মানছে না। ফলে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি সৃষ্টি হয়। গতকালের এক দিনের বৃষ্টিতে অনেক বাড়িতে পানি জমে পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া ব্যাপক বৃষ্টির কারণে দাউদকান্দির নিম্নাঞ্চল, সরকারি উন্নয়নমূলক কাজের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
কলাপাড়া (পটুয়াখালী) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় গত তিন দিন ধরে থেমে থেমে বৃষ্টি হলেও গতকাল সন্ধ্যা থেকে শুরু হয়েছে মুষলধারে বৃষ্টিপাত। গতকাল বুধবার সকাল ৯টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ৭৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অফিস। টানা বৃষ্টিতে বিভিন্ন নিচু স্থানে সৃষ্টি হয়েছে পানিবদ্ধতা।
আপনার মতামত লিখুন :