ইয়াসমিনের বয়স তখন সাড়ে ৬ বছর। ফুফুর সঙ্গে ঢাকা বেড়াতে গিয়ে ১২ বছর আগে নিখোঁজ হয় সে। দিশাহারা হয়ে পরিবারের লোকজন ইয়াসমিনকে অনেক খোঁজাখুঁজি করে। কিন্তু কোথাও তার সন্ধান মেলেনি তখন। একপর্যায় তার আশা ছেড়ে দিয়েছিল পরিবার। অবশেষে দীর্ঘ এক যুগ পর ইয়াসমিন ফিরেছেন তার স্বজনদের কাছে।
ছোট্ট ইয়াসমিন এসেছেন স্বপ্না নাম নিয়ে। বয়স এখন তার প্রায় ১৯ বছর। স্বামী আর পাঁচ বছরের এক ছেলেকে নিয়ে সংসার তার। দীর্ঘদিন পর পরিবারের কাছে ফিরে আবেগাপ্লুত ইয়াসমিন ও তার পরিবার।
গতকাল সকালে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের গহিনখালী গ্রামে অবস্থিত নিজ জন্মভূমিতে স্বামী-সন্তান নিয়ে এসেছেন ইয়াসমিন। হারিয়ে যাওয়া সেই ইয়াসমিনের ফিরে আসার খবর পেয়ে প্রতিবেশীরা বাড়িতে ভিড় করছেন। বাড়িতে আবেগঘন এক পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালে নিজ গ্রামের বাড়ি রাঙ্গাবালী থেকে ইয়াসমিন তার ফুফু মিনারা বেগমের সঙ্গে ঢাকার কেরানীগঞ্জ বেড়াতে যান। ওই ফুফুর বাসা সংলগ্ন বালুর মাঠে খেলতে গিয়ে সে নিখোঁজ হয়।
পরে তাকে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও পাওয়া যায়নি। ইয়াসমিনের সন্ধান পাওয়ার পর পরিবার জানতে পারে যে, খেলাধুলা করতে গিয়ে ওই সময় ইয়াসমিন অপহরণ হয়। পরে অপহরণকারীদের কাছ থেকে তাকে উদ্ধার করে কয়েকজন লোক।
সেখান থেকে নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের নূরপুর মালঞ্চ গ্রামে বসবাসরত মৃত সিরাজ মণ্ডলের পরিবারে আশ্রয় পায় ইয়াসমিন।
সেখানেই সে বড় হয়, কেটে যায় এক যুগ। এর মধ্যে তার বিয়েও হয় একই উপজেলার পার্শ্ববর্তী ইউনিয়ন জামনগরের রাঙামাটি গ্রামের খাইরুল ইসলামের সঙ্গে। এক যুগ পর নিজ বাড়িতে ফিরে আসা ইয়াসমিন (স্বপ্না) বলেন, ‘আমি ছোটবেলায় ফুফুর সঙ্গে বেড়াতে ঢাকায় যাই। ওই সময় বালুর মাঠে খেলতে গিয়েছিলাম।
পেছন থেকে একজন মহিলা মুখ চেপে ধরে আমাকে নিয়ে যায়। এরপর আমি অচেতন হয়ে পড়ি, ওই সময় কি হয়েছে আমি কিছুই বলতে পারি না। পরে নাটোরে একটি পরিবারে আমি বড় হই।
প্রায় ১২ বছর পর আমার জন্মদাতা বাবা-মায়ের খবর পাই। তারাই আমাকে রাঙ্গাবালীতে নিয়ে আসছে। বাবা-মাকে পেয়ে আমার অনেক ভালো লাগছে।’
ইয়াসমিনের জন্মদাতা বাবা ইউসুফ প্যাদা বলেন, ‘আমার মেয়ে যখন হারানো যায় তখন ওর বয়স ৬ বছর ৬ মাস। ওরে অনেক খোঁজাখুঁজি করেছি। কিন্তু কোথাও পাইনি। আমার এক আত্মীয়ের কাছ থেকে হারিয়ে যাওয়া মেয়ের খবর পাই। পরে নাটোরে গিয়ে আমার মেয়েকে শনাক্ত করি।
তার দুই হাঁটুর কাটা চিহ্ন এবং ছোটবেলার কিছু স্মৃতি শুনে আমি নিশ্চিত হয়েছি যে, সে-ই আমার হারিয়ে যাওয়া মেয়ে ইয়াসমিন। পরে নাটোর সদর আদালতে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য আবেদন করি। নমুনা দেয়া হয়।
দুই মাস পর আদালতের মাধ্যমে ডিএনএর ফলাফল পাবো।’ এ ব্যাপারে রাঙ্গাবালী থানার ওসি দেওয়ান জগলুল হাসান বলেন, আমাকে এ বিষয়ে কেউ অবহিত করেনি।
আপনার মতামত লিখুন :