মালয়েশিয়ায় কর্মী নেওয়ার ক্ষেত্রে কথিত ২৫ সিন্ডিকেটের হোতা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মালয়েশিয়ান নাগরিক দাতো শ্রী আমিনকে দফায় দফায় কঠোর জিজ্ঞাসাবাদ করেছে মালয়েশিয়ান দুর্নীতি দমন কমিশন। কথিত এই ২৫ রিক্রুটিং এজেন্সির বিষয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তার ‘বেস্টিনেট’ অফিসে তল্লাশি চালিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গ্রেপ্তার করা হয়।
এ ছাড়া বাংলাদেশ হাইকমিশনের মালয়েশিয়া অফিসেও ২৫ এজেন্সি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। এসব এজেন্সির তালিকা বাংলাদেশ সরকার দিয়েছে কিনা এবং কিসের ভিত্তিতে এসব লাইসেন্স তালিকাভুক্ত করা হয়েছে, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। কিন্তু এসব প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এদিকে এই খবর বাংলাদেশ সরকারের প্রবাসীকল্যাণ ও কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমেদ জানেন না বলে জানিয়েছে আমাদের সময়কে। ইমরান আহমেদ বলেন, মালয়েশিয়ায় ২৫ এজেন্সির তালিকা বাংলাদেশ পাঠায়নি। তারা কোত্থেকে
নির্ধারণ করল, তা আমার জানা নেই। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এক হাজার ৫২০টি এজেন্সির তালিকা পাঠানো হয়েছে। এক প্রশ্নে ইমরান আহমেদ বলেন, মালয়েশিয়ার পক্ষ থেকে এখনো ডিমান্ড লেটার বা চাহিদাপত্র পাঠায়নি। এ ছাড়া বিএমইটির ডেটাবেজে কর্মীদের তালিকা থাকতে হবে। একই সঙ্গে কোনো মেডিক্যাল সেন্টারকে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে অনুমোদন দেওয়া হয়নি বলেও জানান তিনি।
এদিকে সরকারের অনুমোদন ছাড়াই মালয়েশিয়াগামী কর্মীদের অবৈধভাবে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছে মেডিক্যাল সেন্টারগুলো। যদিও এখনো মালয়েশিয়ার পক্ষ থেকে ডিমান্ড লেটার আসেনি। পাশাপাশি জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর পক্ষ থেকে ডেটাবেজ তৈরি করা হয়নি। ওই ডেটাবেজে মালয়েশিয়াগামী কর্মীর নাম থাকা শর্তে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে পারবে। কিন্তু ডাটাবেজে নাম না থাকা সত্ত্বেও গরিব ও অসহায় কর্মীদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে এসব মেডিক্যাল সেন্টার।
এদিকে খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, কর্মীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হলে প্রথমে বাংলাদেশ হাইকমিশন সত্যায়িত করবে। এর পরে প্রবাসীকল্যাণ ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় অনুমোদন দেবে। এর পর পত্রিকায় বিজ্ঞাপন যাবে। তার পর বিএমইটির ডেটাবেজ থেকে কর্মী বাছাই করা হবে। এসব নিয়ম না মেনেই মেডিক্যাল সেন্টার কীভাবে কর্মীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাচ্ছে, এমন প্রশ্ন তাদের।
কথিত ২৫ সিন্ডিকেটের হোতা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মালয়েশিয়ান নাগরিক দাতো শ্রী আমিন ও তার বাংলাদেশে ব্যবসায়ী অংশীদার ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী রুহুল আমিন স্বপন চক্র এভাবে অসহায় গরির মানুষের পকেট কেটে হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। মালয়েশিয়ায় দাতো শ্রী আমিনকে আইনের আওতায় আনলেও বাংলাদেশি রুহুল আমিন স্বপনকে কেন আইনের আওতায় আনা হচ্ছে না- এমন প্রশ্ন তাদের। অবিলম্বে রুহুল আমিন স্বপনকেও আইনের আওতায় এনে গ্রেপ্তার করার দাবি জানান তারা।
এদিকে গতকাল রাজধানীর গুলশানের স্বাস্থ্য পরীক্ষাকেন্দ্র ‘গুলশান মেডিকেয়ারে’ মালয়েশিয়াগামী কর্মীদের অবৈধভাবে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে দেখা গেছে। জানতে চাইলে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে আসা কর্মীরা আমাদের সময়কে বলেন, মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য এখানে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে এসেছি। স্থানীয় প্রতিনিধি (দালাল) স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে পাঠিয়েছেন। বাকি কাজ উনি (দালাল) করবেন।
অন্যদিকে রাজধানীর কাকলীর গ্লোবাল মেডিক্যাল সেন্টারেও একই অবস্থা দেখা গেছে। স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে আসা কর্মীরা জানান, সাত হাজার টাকার বিনিময়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছে। তবে কবে নাগাদ তারা যেতে পারবেন তার কোনো খবর তাদের কাছে নেই।
স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য সরকারের কোনো অনুমোদন আছে কিনা- এমন প্রশ্ন করলে মেডিক্যাল সেন্টারগুলো সরাসরি অস্বীকার করে। গ্লোবাল মেডিক্যাল সেন্টারের ম্যানেজার বলেন, মালয়েশিয়ার জন্য স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে না। অন্য দেশের জন্য স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে। কিন্তু সেখানে প্রায় সবাই মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে দেখা গেছে।
জানতে চাইলে বিএমইটির মহাপরিচালক মো. শহীদুল আলম আমাদের সময়কে বলেন, স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হলে বিএমইটির ডেটাবেজে মালয়েশিয়াগামী কর্মীর নাম থাকতে হবে। যেসব কর্মীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে, তাদের নাম কি ডেটাবেজে আছে? তা হলে ওইসব কর্মীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে কোনো লাভ নেই। এ পরীক্ষা কোনো কাজে আসবে না। বিএমইটির ডেটাবেজে নাম থাকতে হবে শুরুতে। তার পর স্বাস্থ্য পরীক্ষা। তিনি বলেন, এসব গরির লোকের পকেট কাটা ছাড়া কিছুই হচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, মন্ত্রণালয়ে যেসব মেডিক্যাল সেন্টার তালিকা পাঠিয়েছে, তাদের বিষয়ে যাচাই-বাছাই হচ্ছে। এখনো ঠিক করা হয়নি। তা হলে কীভাবে তারা স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাচ্ছে, তা আমার জানা নেই।
সূত্র বলছে, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য পরীক্ষায় কথিত ২৫ সিন্ডিকেটের কালো থাবা পড়েছে। নজর পড়েছে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবসার দিকে। সম্পাদিত সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী বাংলাদেশ থেকে ১০ লাখ শ্রমিক নেবে মালয়েশিয়া। তাদের সবাইকে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। এই ১০ লাখ শ্রমিকের স্বাস্থ্য পরীক্ষাকে হাতিয়ার বানিয়ে ব্যবসায়িক ফায়দা হাসিলের জন্যই ২৫ সিন্ডিকেট মালয়েশিয়া সরকারকে ম্যানেজ করে নিজেদের মতো করে পরীক্ষা করতে চায়।
২৫ সিন্ডিকেটের মধ্যে অধিকাংশ নতুন প্রতিষ্ঠান। একদিকে এসব প্রতিষ্ঠানের পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই, অন্যদিকে নিজস্ব মেডিক্যাল সেন্টারও নেই। ফলে সরকারের পক্ষ থেকে কর্মীর স্বার্থরক্ষার কথা বলা হলেও বাস্তবে তা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। বরং আগের চেয়েও অনেক বেশি অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এদিকে খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, মালয়েশিয়া সরকারের একচেটিয়া দেওয়া শর্ত মেনে নিয়েছে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক মন্ত্রণালয়, যা কেবল গুটিকয়েক ব্যবসায়ীকে লাভবান করবে। অধিকাংশকে বঞ্চিত করবে। এটি কোনো স্বচ্ছ প্রক্রিয়া হতে পারে না।
জনশক্তি রপ্তানিকারী এজেন্সির মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজের (বায়রা) একটি বড় অংশ বরাবরই এ সিন্ডিকেটের হোতা হিসেবে মালয়েশিয়ান কোম্পানি বেস্টিনেটের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে আসছেন। অভিযোগ রয়েছে- ঢাকা ও কুয়ালালামপুরে প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন অপতৎপরতায় লিপ্ত। এ অপকর্মে নেপথ্য থেকে মদদ দিচ্ছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মালয়েশিয়ান নাগরিক দাতো শ্রী আমিন ও তার বাংলাদেশের ব্যবসায়িক অংশীদার রুহুল আমিন স্বপন।
সাড়ে তিন বছর আগে বিপুল পরিমাণ রেমিট্যান্সের সম্ভাবনাময় এ শ্রমবাজার বন্ধও হয়ে গিয়েছিল এ সিন্ডিকেটের অপতৎপরতায়। যে ৩৫টি মেডিক্যাল সেন্টার নিয়ে সিন্ডিকেশনের চেষ্টা চলছে, তার মধ্যে একাধিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নামে-বেনামে সরাসরি রুহুল আমিন স্বপন জড়িত। চক্রটি মেডিক্যাল সেন্টারের স্বত্বাধিকারীদের কাছ থেকে নিবন্ধনের নামে হাতিয়ে নিচ্ছে বিপুল অঙ্কের টাকা। বিতর্কিত সব কিছুই হচ্ছে বাংলাদেশ সরকারের কোনো প্রকার অনুমোদন ছাড়া।
২০১৯ সালে বিদেশগামী শ্রমিকের স্বাস্থ্য পরীক্ষায় নিয়োজিত মেডিক্যাল সেন্টারগুলোকে যোগ্যতার ভিত্তিতে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নথিভুক্ত করার জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। তখন তড়িঘড়ি করে মান যাচাইয়ের জন্য কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি অনেক মেডিক্যাল সেণ্টারও পরিদর্শন করে। কিন্তু বিগত প্রায় আড়াই বছরেও এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয় কোনো প্রজ্ঞাপন জারি করেনি বা সিলেক্টেড তালিকাও প্রকাশ করেনি। মন্ত্রণালয় এখনো পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি। সরকারের সিদ্ধান্তহীনতা ও বিলম্বের সুযোগ নিয়ে ফায়দা লুটার চেষ্টা করছে মালয়েশিয়ার বিতর্কিত আইটি প্রতিষ্ঠান বেস্টিনেট। তাদের কিছু কর্মকর্তা ঢাকায় অবস্থিত বেশ কয়েকটি মেডিক্যাল সেন্টার ভিজিট করে।
এখন বেস্টিনেট মালয়েশিয়া সরকারের অনুমোদনের প্রলোভন দেখিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা। অথচ মালয়েশিয়ায় বিদেশি কর্মীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য একমাত্র অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান ফোমেমা, যার সঙ্গে বেস্টিনেটের কোনো ধরনের চুক্তি বা সম্পর্কই নেই। ১৪ দেশের সব শ্রমিকের মালয়েশিয়া যাওয়ার পর দ্বিতীয়বার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হয়, যার পুরোটাই ফোমেমার মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়। বাংলাদেশের মেডিক্যাল সেন্টারগুলোর স্বাস্থ্য পরীক্ষার পদ্ধতি ও মান ফোমেমার সমমান না হওয়ায় অনেক কর্মীকে মেডিক্যালি আনফিট হয়ে শূন্য হাতে দেশে ফিরতেও হয়েছে। যদি স্বাস্থ্য পরীক্ষার মান ফোমেমার সমমান হতো, তা হলে শত শত কর্মী দেশে ফেরত আসত না।
জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক এবং রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) চেয়ারপারসন ড. তাসনীম সিদ্দিকী আমাদের সময়কে বলেন, যে প্রক্রিয়ায় মেডিক্যাল করার কথা শোনা যাচ্ছে, তাতে কোনোভাবেই শ্রমিকের স্বার্থরক্ষা হবে না। কম খরচে মেডিক্যাল করা সম্ভব হবে না। এই প্রক্রিয়াটাই অন্যায়। অন্যায়েরই জয় হচ্ছে। কতিপয় ব্যক্তির স্বার্থ, তাদের অর্থশালী করার সুযোগ তৈরি করেছে অসাদু প্রক্রিয়া অবলম্বন করে। মালয়েশিয়াতে কাউকে অপব্যবহার করে এমন করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমি মনে করি এ বছর মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোরই প্রয়োজন নেই। কারণ এ বছর বিভিন্ন দেশে ১০ লাখের বেশি কর্মী পাঠানো হয়েছে। সুতরাং অন্যায়ের কাছে মাথানত করে অভিবাসনের প্রয়োজন নেই। বাংলাদেশ যদি কর্মী না পাঠায়, তাতেও সমস্যা নেই। কারণ মালয়েশিয়া ঠিকই দুই মাসের মাথায় বাংলাদেশের শর্ত অনুযায়ী কর্মী নিত।
তিনি বলেন, সুশীল সমাজ শুরু থেকেই দাবি করে আসছে, এমন একটি অন্যায়ের মাধ্যমে কর্মী পাঠানোর দরকার নেই। পুরো প্রক্রিয়াই এক অর্থে অবৈধ। যেখানে বৈধ লাইসেন্সধারী ১৫০০ রিক্রুটিং এজেন্সিকে পাশ কাটিয়ে মাত্র ২৫টি লাইসেন্স কাজ করবে, এটি কোনোভাবেই ঠিক নয়। যা কিছু হচ্ছে তা ব্যক্তিস্বার্থেই হচ্ছে। এখানে অভিবাসন ব্যয় অল্প, মেডিক্যাল খরচ অল্প, এগুলোর কোনো বালাই নেই।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) সাবেক মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান আমাদের সময়কে বলেন, মালয়েশিয়া যেসব রিক্রুটিং এজেন্সিকে বাছাই করবে, ওই সব রিক্রুটিং এজেন্সি ও নিয়োগকর্তা নির্ধারণ করবে কোন মেডিক্যাল সেন্টার কাজ করবে। এক কথায় বোঝা যাচ্ছে- রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকে তারা যেভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে, ঠিক সেভাবেই মেডিক্যাল সেন্টারগুলোকেও নিয়ন্ত্রণ করবে। এটি প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রীর কথায় বোঝা যাচ্ছে- মেডিক্যাল সেন্টার নির্ধারণের ক্ষমতাও মালয়েশিয়াকে দিয়ে দিয়েছেন। এখানে বাংলাদেশ সরকার বা মন্ত্রণালয়ের কোনো কন্ট্রোল নেই। এটি মালয়েশিয়ার হাতে।
তিনি বলেন, গণমাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি, বিগত দিনে অতিরিক্ত টাকা তারা নিয়েছে। একই সঙ্গে বারবার মেডিক্যাল করিয়ে বাড়তি অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। আমরা আশা করেছিলাম, মন্ত্রণালয় থেকে যেহেতু বারবার বলেছে, কর্মীর স্বার্থরক্ষা করে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। কিন্তু যে প্রক্রিয়া চলছে, তাতে কর্মীর স্বার্থ কীভাবে রক্ষা হলো, সেটি আসলে আমরা বুঝতে পারছি না। কর্মীর স্বার্থ বলতে আমরা বুঝি- স্বল্প ব্যয়ে কর্মী প্রেরণ, স্বল্প খরচে হয়রানি না হয়, এমন মেডিক্যালের ব্যবস্থা করা। কিন্তু আমরা দেখছি, গতবার যারা যেভাবে করেছে, তাদের হাতেই সেভাবে চলে গেছে। এখন এখানে কীভাবে কর্মীর স্বার্থরক্ষা হবে, সেটি আমাদের জানা নেই।
সূত্র বলছে, মেডিক্যাল সেন্টারগুলোর মান যাচাই-বাছাই করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় যৌথভাবে মালয়েশিয়াগামী কর্মীদের জন্য মেডিক্যাল সেন্টার নির্বাচন করতে হবে। এখানে বায়ো-মেডিক্যাল নাম দিয়ে কোনো বিদেশি সার্ভিস প্রোভাইডারের কাছে জিম্মি হওয়া যাবে না। গতবার বায়োমেডিক্যাল এবং মালয়েশিয়া ডাক্তারের অনলাইনে এক্সরে রিপোর্ট পরীক্ষাসহ নানা অজুহাতে বিপুল টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বিদেশি সিস্টেম প্রোভাইডার। ব্যবসায়িক ফায়দা লুটতে একটি ভিসার জন্য চারজনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে। তথাকথিত ডিজিটাইজেশন ও উন্নত পদ্ধতির পরও হাজার হাজার লোক মালয়েশিয়া থেকে মেডিক্যালি আনফিট হয়েছে।
গতবারের অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়, এফডব্লিউসিএমএসের বায়োমেডিক্যালে পোর্টালের দুর্বলতার কারণে শত শত কর্মীর রিপোর্ট রেকর্ড থেকে মুছে যায়। হাজার হাজার কর্মীর মেডিক্যাল রিপোর্ট মাস পেরোলেও হাতে পাওয়া যায়নি। ফলে নিয়োগকর্তা অন্য দেশ থেকে কর্মী নিয়ে নেয়। এ স্বাস্থ্য পরীক্ষা নিয়ে ব্যবসা কুক্ষিগত করার অপচেষ্টার কারণেই ভাগ্যবঞ্চিত হন লাখো কর্মী।
সরকারি হিসাব অনুযায়ী, ২০১৭-এর ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৮-এর ডিসেম্বর পর্যন্ত জি-টু-জি প্লাস পদ্ধতিতে ২ লাখ ৭৫ হাজার শ্রমিক মালয়েশিয়া যায়। বিপরীতে এফডব্লিউসিএমএসের কারসাজি ও মেডিক্যাল সেন্টার সিন্ডিকেটের কারণে স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়েছে কয়েকগুণ বেশি। জনপ্রতি ৫ হাজার ৩০০ টাকা বায়োমেডিক্যাল ফি হিসেবে এফডব্লিউসিএমএস লুটে নিয়েছে শতকোটি টাকা।
হাজার হাজার কর্মী মেডিক্যালি ফিট হয়েও এফডব্লিউসিএমএস সিন্ডিকেটের বিভিন্ন জটিলতায় মালয়েশিয়া যেতে পারেনি। তারা সেই সময় কোনো ক্ষতিপূরণও পায়নি। সেই একই সিন্ডিকেটের একই ফর্মুলাকে মেনে নেওয়া মানে দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেওয়া ও শ্রমিকের স্বার্থরক্ষার বিষয়টি উপেক্ষা করা।
আপনার মতামত লিখুন :