ইভিএম নিয়ে মত বিনিময়ের পর নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ইতিমধ্যে কমিশনের পক্ষ থেকে দলগুলোকে চিঠি দেয়া শুরু হয়েছে। তবে এই সংলাপে অংশ না নেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে মাঠের ‘প্রধান বিরোধী দল’ বিএনপি। দলটির নেতাদের ভাষ্য, বর্তমান কমিশন পক্ষপাতদুষ্ট। তাদের প্রায় সবাই বিভিন্ন সময়ে সরকারের সুবিধাভোগী এবং সরকার সমর্থক।
দলটির নেতারা বলছেন, বর্তমান নির্বাচনি ব্যবস্থায় একটি অবাধ ও সুষ্ঠু ভোট করার ক্ষেত্রে কমিশনের তেমন কিছু করার নেই। দলীয় সরকারের ইচ্ছামতোই হবে ভোট। তাই বিএনপির কাছে এই মুহূর্তে ইসির কর্মকাণ্ড মুখ্য নয়। তাদের একমাত্র লক্ষ্য নির্বাচনকালীন একটি নিরপেক্ষ সরকার। সেই সরকার নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের আয়োজন করবে। তাই বর্তমান নির্বাচন কমিশনের সংলাপে অংশ নেয়া মানে তাদের বৈধতা দেয়া।
তাদের কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে বিএনপি ইসিকে বৈধতা দিতে চায় না। তাই সবকিছু বিবেচনা করে এ সংলাপে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। এদিকে বিএনপির পাশাপাশি ২০ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোরও ইসির সংলাপে অংশ নেয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। শরিক দলগুলো যাতে ইসির সংলাপে না যায় সে ব্যাপারে বিএনপির পক্ষ থেকে তাদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। বিএনপির আহ্বানে শেষ পর্যন্ত জোট শরিকদের সংলাপে অংশ নেয়ার সম্ভাবনা কম।
২০ দলীয় জোটে বিএনপিসহ চারটি দল নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত। দলগুলো হলো-লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ। আর জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপা ২০ দলীয় জোটে থাকলেও আদালতের নির্দেশে দলটির নিবন্ধন স্থগিত রয়েছে। এর আগে ইভিএম নিয়ে ইসির মত বিনিময়ে অংশ নেয়নি এলডিপি, কল্যাণ পার্টি, মুসলিম লীগ। এছাড়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির মতো দলগুলোও আসন্ন সংলাপে অংশ নেয়ার বিষয়ে এখনো কোন সিদ্ধান্ত নেয়নি বলে জানিয়েছে।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন মানবজমিনকে বলেন, এটাতো গত সংলাপে দেখেছেন আমরা অংশ নেইনি। এই নির্বাচন কমিশন আমাদের কাছে কোন গুরুত্বপূর্ণ না। এরা কি করলো না করলো ইটস নট এট অল আওয়ার কনসার্ন।
আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আমরাতো তাদের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন করছি। এটি একটি অবৈধ সরকারের একটি অবৈধ নির্বাচন কমিশন, তাই তাদের সঙ্গে কিসের আলোচনা। তাদেরকেতো মাঠে নামানো হয়েছে আওয়ামী লীগের খেলোয়াড় হিসেবে। আগামীর নির্বাচনে এই সরকারের ভোট চুরির যে প্রকল্প সেই প্রকল্পের অংশ হিসেবে তাদের মাঠে নামানো হয়েছে।
আর সেই প্রকল্পের অংশ হিসেবেই ইসি এসব কাজ করছে। কথা একটাই, দেশে নিরপেক্ষ সরকার আসতে হবে আর সকলের মতের ভিত্তিতে নতুন নির্বাচন গঠিত হলে তাদের সঙ্গে আমাদের সব আলোচনা হবে। বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম (বীর প্রতীক) বলেন, এ বিষয়ে আমরা এখনো কোন সিদ্ধান্ত নেইনি। আলোচনা করে পরে জানানো হবে।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, এ বিষয়ে আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে কোন চিঠি পাইনি। সংলাপে যাবো কিনা, গেলে কি বলবো এ বিষয়ে ঈদের পর পর বসে সিদ্ধান্ত নেবো। আর এটা আপনাদের জানাবো। আর আমরা গেলেতো নির্বাচন পদ্ধতি যেভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে, নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পরিচালনা প্রক্রিয়ায় যে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে এসব সহ সামগ্রিক বিষয়েই কথা বলবো।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান বলেন, এটা আমরা মিডিয়ায় দেখেছি কিন্তু আনুষ্ঠানিক কোন চিঠি পাইনি। আরঐ চিঠি পেলে আমরা এ বিষয়ে বৈঠক করবো তারপরে আমাদের দলীয় সিদ্ধান্ত কি হয় তার উপরে আমরা অগ্রসর হবো।
উল্লেখ্য, আগামী ১৭ই জুলাই থেকে ৩৯টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করবে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন।
আপনার মতামত লিখুন :