জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সংকটে বাস্তবসম্মত দূরদর্শী পরিকল্পনা প্রয়োজন


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : জুলাই ১৬, ২০২২, ৯:১৪ পূর্বাহ্ণ /
জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সংকটে বাস্তবসম্মত দূরদর্শী পরিকল্পনা প্রয়োজন

গত দুই মেয়াদে বর্তমান সরকার দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা এতটাই বাড়িয়েছে যে, তা বর্তমান চাহিদাকেও ছাড়িয়ে গেছে। তবে অধিকাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র চলে গ্যাসের সাহায্যে এবং বাংলাদেশের গ্যাস উৎপাদন ক্ষমতা দিনে দিনে কমছে। গ্যাসের জন্য আমাদের আমদানির ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। কিন্তু ইউক্রেন-রুশ যুদ্ধের জেরে সারাবিশ্বের জ্বালানি সংকট নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে।

ইউরোপ এবং কিছু অংশে উত্তর আমেরিকা গ্যাস ও তেলের জন্য রাশিয়ার ওপর নির্ভরশীল ছিল। আবার ইউরোপে রুশ তেল-গ্যাস সরবরাহের পাইপলাইন গেছে ইউক্রেনের ভেতর দিয়ে। ফলে এই যুদ্ধ জটিল এক জ্বালানি সংকটে ঠেলে দিয়েছে বিশ্বের সব দেশকেই। তারই জের ধরে বিশ্ববাজারে তেল ও এলএনজির দাম বেড়েছে এবং তা বেড়েই চলেছে।

তদুপরি এ দুই পণ্য এখন এতই মহার্ঘ যে, তা দাম দিয়েও সহজে পাওয়া যাচ্ছে না। আমাদের সময়ের এক প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশও জ্বালানির চরম অনিশ্চয়তা ও গভীর সংকটের মধ্যে পড়েছে।

বলা যায়, দুই দশক ধরে বাংলাদেশ গ্যাস উত্তোলনের সক্ষমতা বৃদ্ধির দিকে মনোযোগ দেয়নি। নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার এবং পুরনো ক্ষেত্রে নতুন কূপ খননের বিষয়েও সরকারের আগ্রহ দেখা যায়নি। সমুদ্রসীমাসংক্রান্ত মামলায় বিজয়ের পর আমাদের অধিকারভুক্ত বিস্তীর্ণ সমুদ্রে গ্যাস অনুসন্ধানের বিষয়ে আগ্রহ দেখা গেলেও অর্ধযুগ পরে দেখা যাচ্ছে এর কোনো ফলাফল নেই, অগ্রগতিও নেই।

ফলে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত বহুলাংশে আমদানিনির্ভর হয়ে পড়েছে। এখন বিদ্যুতের সরবরাহ পরিস্থিতি দিনে দিনে খারাপ হচ্ছে, লোডশেডিংয়ের হার কেবল বেড়ে চলেছে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের শুরুতেই এর প্রভাব যে এত প্রকট ও ব্যাপক হবে তা কেউই ধারণা করতে পারেননি। এখানেই নেতৃত্বের আরও দূরদর্শিতার প্রয়োজন। আরও বেশি দামে জ্বালানি কিনতে হলে ভর্তুকির পরিমাণ বাড়াতে হবে, তাতে রিজার্ভের ওপর চাপ বাড়বে। এভাবে দেশের অর্থনীতিও অনিশ্চয়তার পথে যাবে।

সরকার শেষ মুহূর্তে নানান উদ্যোগ নিচ্ছে জ্বালানি ও অর্থ সাশ্রয়ের জন্য। বেশকিছু উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায়নও আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণ ও সরকারের নানা কেনাকাটায়ও নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে। কিন্তু খাদ্য ও জ্বালানির আমদানি কমানোর সুযোগ কম। আবার এসব খাতে আমদানিতে ব্যয় বাড়তে থাকবে। ফলে দেশের ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে এখনই দূরদর্শী পরিকল্পনায় হাত দিতে হবে।

আমাদের সামনে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে বাস্তবসম্মত ধারণা ছাড়াই উন্নয়নে অধিক ব্যয়ের পরিণতির একটি দৃষ্টান্ত হলো সাম্প্রতিক শ্রীলংকা। আমরা মনে করি সরকার পরিস্থিতি এবং এর ভবিষ্যৎ গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে ধারণা রাখে। এসব মাথায় রেখেই সরকারকে পরিকল্পনায় হাত দিতে হবে। মনে রাখতে হবে নিজেদের সার্বিক সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং পরনির্ভরতার বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসার অন্য কোনো বিকল্প আমাদের জন্য নেই।