দুই মাস ধরে আইসিইউতে অচেতন শিশুটির আশায় প্রহর গুনছেন মা–বাবা


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২৪, ৯:১৯ অপরাহ্ণ /
দুই মাস ধরে আইসিইউতে অচেতন শিশুটির আশায় প্রহর গুনছেন মা–বাবা

ঢাকার (সিএমএইচ) আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ৭ বছরের শিশু বাসিত খান মুসা-ছবি: সংগৃহীত

বাসিত খান মুসার বয়স সাত বছরের কাছাকাছি। কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় ১৯ জুলাই গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকে তাঁর জীবনটা প্রায় থেমে গেছে। দুই মাসের বেশি সময় ধরে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) অচেতন সে। একমাত্র ছেলে কবে চোখ মেলে তাকাবে, সেই অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন মা–বাবা।

রাজধানীর রামপুরা থানার সামনে মেরাদিয়া হাট এলাকার ছয়তলা বাসা থেকে মুসা ওই দিন দুপুরে দাদির সঙ্গে নিচে নেমেছিল আইসক্রিম কিনতে। তখন আন্দোলন চলছিল। হঠাৎ গুলি এসে লাগে মুসার মাথার সামনের দিকে। সেই গুলি মাথার পেছন দিয়ে বের হয়ে মুসার দাদি মায়া ইসলামের (৬০) তলপেটে ঢুকে যায়। এতে মৃত্যু হয় মায়া ইসলামের। আর মুসাকে ভর্তি করা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ)। সেখান থেকে গত ২৬ আগস্ট তাকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) আইসিইউতে নেওয়া হয়।

আজ সোমবার মুসার বাবা মুস্তাফিজুর রহমান মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, মুসা কাউকে চিনতে পারে না। দুই হাসপাতাল মিলে এখন পর্যন্ত তার মাথায় ছয়টি অস্ত্রোপচার হয়েছে। কবে ছেলের জ্ঞান ফিরবে, তা চিকিৎসকেরাও বলতে পারছেন না।

নিরুপায় মুসার বাবা বললেন, ‘ছেলেটাকে আইসিইউ থেকে কবে বের করতে পারব, কবে বাড়ি ফিরতে পারব জানি না। ছেলের জন্য হাসপাতালেই থাকতে হচ্ছে, ফলে নিজের কাজকর্মও সব বন্ধ।’ তিনি জানালেন, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে হাসপাতালে চিকিৎসায় কোনো খরচ লাগছে না। তবে এর আগেই চিকিৎসায় খরচ হয়ে গেছে ৩ লাখ টাকা।

মুস্তাফিজুর বলেন, ‘হাসপাতালে চিকিৎসার পেছনে খরচ না হলেও হাসপাতালে দুজন মানুষের খাওয়াসহ অন্যান্য খরচ তো আছেই। কাজকর্ম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন মানুষের কাছে আর্থিক সাহায্য চাওয়া ছাড়া আর তো কোনো উপায় দেখছি না। আর কত দিন হাসপাতালে থাকতে হবে, তা তো অজানা।’মুস্তাফিজুর রহমান মেরাদিয়া হাট এলাকায় স্ত্রী, একমাত্র ছেলে ও মা-বাবাকে নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকতেন। শিশু মুসা খিলগাঁও তালতলায় শহীদ বাবুল একাডেমি পল্লীমা সংসদে নার্সারিতে (ইংলিশ ভার্সন) পড়ে। মুস্তাফিজুর মালিবাগে ইলেকট্রনিক পণ্যের ব্যবসা করেন। ১৯ জুলাইয়ের পর থেকে তাঁর বাবা মাহবুব ইসলাম (মুসার দাদা) শুধু দোকানে আসা–যাওয়ার কাজ করছেন। ব্যবসা বলতে গেলে বন্ধই হয়ে গেছে।

২৮ জুলাই প্রথম আলো অনলাইনে ‘মা একটু পরপর ছেলের বুকের কাছে গিয়ে বোঝার চেষ্টা করছিলেন, নিশ্বাস নিচ্ছে কি না।’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়। ওই দিন মুসার মা নিশামনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছিলেন, ছেলে বাঁচলেও ভবিষ্যতে সে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে কি না, তা-ও অনিশ্চিত।

মুস্তাফিজুর রহমান সিএমএইচের আইসিইউতে থাকা মুসার একটি ছবি পাঠিয়েছেন প্রথম আলোকে। তাতে দেখা যাচ্ছে, ছোট্ট মুসার মাথা ব্যান্ডেজে মোড়ানো। মুখে নল ঢোকানো। তিনি জানান, মুসার ডান পা অবশ হয়ে গেছে। বাঁ পা একটু নড়ে। চোখ আধখোলা থাকলেও সে কাউকে চিনতে পারে না।

ছেলের মুখে আবার বাবা-মা ডাক শুনতে পারবেন, সে আশায় দিন গুনছেন মুসারা মা–বাবা।