আসুন আথ্রাইটিসে ফিজিওথেরাপি বিষয়ে জেনে নিই


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : অক্টোবর ৯, ২০২৪, ১০:০৩ পূর্বাহ্ণ /
আসুন আথ্রাইটিসে ফিজিওথেরাপি বিষয়ে জেনে নিই

সাবা স্বাস্থ্য ডেস্কঃ  আর্থ্রাইটিস দিবস প্রতি বছর ১২ অক্টোবর তারিখে পালিত হয়। ২০২৪ সালের বিশ্ব আর্থ্রাইটিস দিবসের প্রতিপাদ্য হলো ‘Informed Choices, Better Outcomes’। এর মূল লক্ষ্য হলো আর্থ্রাইটিস রোগীদের সঠিক তথ্য পাওয়ার গুরুত্ব তুলে ধরা, যাতে তারা স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারীদের সঙ্গে মিলে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে এবং চিকিৎসা প্রক্রিয়া উন্নত করা যায়। এই প্রতিপাদ্য রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে যথাযথ পরামর্শ এবং সঠিক তথ্যের ওপর জোর দেয়, যা রোগীদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে সহায়ক হতে পারে।

আর্থ্রাইটিসে ফিজিওথেরাপি একটি গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা পদ্ধতি যা জোড়ার ব্যথা, প্রদাহ, এবং কার্যক্ষমতা উন্নত করতে সাহায্য করে। এটি ওষুধ বা অস্ত্রোপচারের বিকল্প নয়, বরং চিকিৎসার একটি সম্পূরক অংশ হিসেবে কাজ করে। ফিজিওথেরাপি মূলত শরীরের চলাচল ও নমনীয়তা বাড়াতে, জোড়ার শক্তি বৃদ্ধি করতে এবং ব্যথা কমাতে ব্যবহৃত হয়।

আর্থ্রাইটিসে ফিজিওথেরাপির ভূমিকা :

১. ব্যথা কমানো: বিশেষ ধরনের ব্যায়াম ও থেরাপিউটিক পদ্ধতি যেমন তাপ বা ঠান্ডা থেরাপি, ইলেকট্রোথেরাপি (TENS), বা আল্ট্রাসাউন্ড থেরাপি ব্যথা ও প্রদাহ হ্রাস করতে কার্যকর।

২. নমনীয়তা বাড়ানো : দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রাইটিসের কারণে অস্থিসন্ধি শক্ত হয়ে যায়। ফিজিওথেরাপি নরমাল স্ট্রেচিং ব্যায়ামের মাধ্যমে জোড়ার চলাচল ক্ষমতা এবং নমনীয়তা বাড়াতে সাহায্য করে।

৩. পেশী শক্তিশালী করা : দুর্বল পেশী জোড়ার ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করতে পারে। ফিজিওথেরাপি বিশেষ পেশী শক্তিশালী ব্যায়াম শেখায় যা জোড়ার চারপাশের পেশীগুলোকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে এবং অস্থিসন্ধির ওপর চাপ কমায়।

৪. জোড়ার কার্যক্ষমতা উন্নত করা : নিয়মিত ব্যায়াম এবং বিশেষ শারীরিক কর্মসূচি জোড়ার গতিশীলতা বৃদ্ধি করে, যা দৈনন্দিন কাজ সহজ করে।

৫. অঙ্গভঙ্গির উন্নতি : সঠিক অঙ্গভঙ্গি বজায় রাখতে ফিজিওথেরাপিস্টের নির্দেশনায় সঠিক চলাচল ও কাজের পদ্ধতি শিখানো হয়, যা জোড়ার ওপর চাপ কমায়।

৬. ব্যালান্স ও স্টেবিলিটি : ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে শরীরের ব্যালান্স ও স্টেবিলিটি (স্থিতিশীলতা) উন্নত করা হয়, যাতে হোঁচট খেয়ে পড়ার ঝুঁকি কমে এবং অস্থিসন্ধি আরও সুরক্ষিত থাকে।

আর্থ্রাইটিসে ব্যবহৃত ফিজিওথেরাপির সাধারণ পদ্ধতি :

১. স্ট্রেচিং ও মবিলিটি ব্যায়াম : – শরীরের বিভিন্ন জোড়াকে সচল ও নমনীয় রাখতে স্ট্রেচিং ব্যায়াম গুরুত্বপূর্ণ। হাঁটু, কোমর, কাঁধ, ও হাতের জোড়ায় বিশেষ স্ট্রেচিং ব্যায়াম প্রয়োগ করা হয়।

২. স্ট্রেন্থেনিং ব্যায়াম : – পেশীগুলো শক্তিশালী করতে ওয়েট ট্রেনিং বা রেজিস্ট্যান্স ব্যায়াম করা হয়। এটি বিশেষ করে হাঁটু, কোমর এবং কাঁধের পেশী শক্তিশালী করতে সহায়ক।

৩. হাইড্রোথেরাপি (পানির মধ্যে ব্যায়াম) : – পানির ভাসমান ক্ষমতার কারণে অস্থিসন্ধিতে কম চাপ পড়ে, ফলে ব্যথা ছাড়াই সহজে ব্যায়াম করা যায়। এটি বিশেষ করে হাঁটুর আর্থ্রাইটিসে বেশ কার্যকর।

৪. হিট এবং কোল্ড থেরাপি : – প্রদাহ এবং ব্যথা কমানোর জন্য তাপ বা ঠান্ডা প্রয়োগ করা হয়। তাপ প্রয়োগে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে, যা পেশী শিথিল করতে সাহায্য করে। ঠান্ডা প্রয়োগে প্রদাহ এবং ফোলা কমে।

৫. ইলেকট্রোথেরাপি : – ফিজিওথেরাপি ক্লিনিকে আথ্রাইটিস চিকিৎসায় বিভিন্ন ইলেকট্রোথেরাপি ইকুইপমেন্ন্টসের ব্যবহার হয়ে থাকে যেমন- আল্ট্রাসাউন্ড থেরাপি, মাইক্রোওয়েভ ডায়াথারমি , শর্টওয়েভ ডায়াথারমি, শকওয়েভ থেরাপি ইত্যাদি জয়েন্টের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।

৬. ম্যানুয়াল থেরাপি :
– ফিজিওথেরাপিস্ট হাত দিয়ে জোড়াগুলোকে হালকা নড়াচড়া করিয়ে অস্থিসন্ধির শক্তি ও গতিশীলতা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেন। এটি বিশেষ করে ঘাড়, পিঠ, ও কোমর ব্যথায় কার্যকর।
ফিজিওথেরাপির উপকারিতা : – জোড়ার কার্যক্ষমতা ও স্বাভাবিক জীবনযাত্রা পুনরুদ্ধার। – ব্যথা ও প্রদাহ হ্রাস। – দৈনন্দিন কাজ সহজ করা। – অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন কমানো। – দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখা।
আর্থ্রাইটিস রোগীরা একজন ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে নিয়মিত ব্যায়াম ও থেরাপি করলে তাদের দৈনন্দিন জীবন অনেক সহজ হয়ে উঠতে পারে।