শেখ হাসিনা রেহানা জয় কাদেরসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : অক্টোবর ১৮, ২০২৪, ১০:০৬ পূর্বাহ্ণ /
শেখ হাসিনা রেহানা জয় কাদেরসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠনের পরই গতকাল আনুষ্ঠানিক বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। শুরুর দিনেই সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। শেখ হাসিনা ছাড়াও শেখ রেহানা, সজিব ওয়াজেদ জয়, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন এই ট্রাইব্যুনাল। ১৮ নবেম্বরের মধ্যে তাদেরকে আটক করে এই ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। 

গতকাল বৃহস্পতিবার পৃথক দুটি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এই গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন। ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে চলা হত্যাকা-ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সকালে বিচারকাজ শুরু হয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে বিচারকাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। ট্রাইব্যুনালের বিচারিক প্যানেলের অপর দুই সদস্য হলেন-বিচারপতি শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মহিতুল হক এনাম চৌধুরী। বেলা ১১টা ২০ মিনিটে ট্রাইব্যুনালের বিচারকাজ শুরু হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন চিফ প্রসিকিউটর এডভোকেট মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।

যাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, শেখ হাসিনার মন্ত্রী পরিষদের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক তথ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, সাবেক মন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, শেখ সেলিম, ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস, শেখ ফজলে শামস পরশ, সাবেক আইজিপি আবদুল্লাহ আল মামুন, সাবেক ডিবিপ্রধান হারুন অর রশিদ, পুলিশের সাবেক কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার সরকার, প্রলয় কুমার জোয়ার্দার, ঢাকা মহানগর পুলিশের সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক র‌্যাব ডিজি হারুন অর রশিদ, সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসান, শেখ হাসিনার সাবেক উপদেষ্টা তারেক আনাম সিদ্দিকী, সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, ড. জাফর ইকবাল, সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম। বাকিদের নাম তদন্তের স্বার্থে প্রকাশ করেনি প্রসিকিউশন টিম।

এর আগে ৪৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন জানান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম। পরোয়ানা জারির আবেদনের সময় আওয়ামী লীগ সরকারের আমল এবং জুলাই আগস্টে তাঁদের ভূমিকা তুলে ধরা হয় ।

এই অপরাধগুলো বিস্তৃত মাত্রায়, সারা বাংলাদেশ জুড়ে সংঘটিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর আইনজীবী মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আদালতের কাছে আবেদন জানিয়েছিলাম এই অপরাধের আসামী যাঁরা, তাঁরা অসম্ভব রকমের প্রভাবশালী, তাঁদের গ্রেপ্তার করা না হলে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করাটা অসম্ভব কঠিন। তাঁদের ভয়ে সাধারণ মানুষ, এমনকি শহীদ পরিবারের সদস্যরা কথা বলতে সাহসী হচ্ছেন না। সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আমরা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন জানিয়েছিলাম।

ট্রাইব্যুনাল আবেদন মঞ্জুর করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান তাজুল ইসলাম। ১৮ নবেম্বরের মধ্যে শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করে এই ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

গত ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর প্রথমবারে মতো বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার কাজ শুরু হয়। এদিন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কোর্টের কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর চিফ প্রসিকিউটর মামলার আবেদন পড়ে শোনান। এসময় সংবিধানের বিভিন্ন সংশোধনী, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পর থেকে গুম, খুন, তথ্যপ্রযুক্তি আইনে হওয়া মামলার পরিসংখ্যান, শাপলাচত্বরে হত্যা, আয়নাঘর, কানাডার বেগম পাড়াসহ অর্থপাচারের পরিসংখ্যান এবং সর্বশেষ ছাত্র আন্দোলনে বল প্রয়োগের তথ্য তুলে ধরেন।

চিফ প্রসিকউটর আদালতে বলেন, আসামীর বিরুদ্ধে তদন্তে গণহত্যার প্রাথমিক অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। আসামী প্রভাবশালী। এখনো দেশের বিভিন্ন স্থানে আসামীর লোকজন বিভিন্ন পজিশনে আছে। তাই আলামত নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া মামলার তদন্ত কাজ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। তাই আসামীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন করছি।

এক পর্যায়ে আদালত জানতে চান, রাষ্ট্রীয়ভাবে আসামীর অবস্থান জানেন কি না। জবাবে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, না। তারপর আদালত চিফ প্রসিকিউটরের আবেদন মঞ্জুর করে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আদেশ দেন। আর ১৮ নবেম্বর মামলার পরবর্তী তারিখ রেখে এ সময়ের মধ্যে আসামীকে আদালতে হাজির করতে বলেন।

গণহত্যার অভিযোগে এ পর্যন্ত অর্ধশতাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে শেখ হাসিনা, তার মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, ১৪ দলীয় জোটের শরীক দলের নেতা, পুলিশের তৎকালীন আইজিসহ বেশ কয়েকজন সদস্য, র‌্যাবের তৎকালীন ডিজি, আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে।