প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ দাবিতে গভীর রাতেও বঙ্গভবনের সামনে কয়েক শ’ মানুষের বিক্ষোভ!


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : অক্টোবর ২৩, ২০২৪, ৭:২৩ পূর্বাহ্ণ /
প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ দাবিতে গভীর রাতেও বঙ্গভবনের সামনে কয়েক শ’ মানুষের বিক্ষোভ!

ব্যারিকেড ভেঙে বঙ্গভবনে ঢোকার চেষ্টা বিক্ষোভকারীদের

প্রেসিডেন্ট মোঃ সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) দুপুর থেকে বঙ্গভবনের সামনের সড়কে বিক্ষোভ করছিলেন কয়েক শ’ মানুষ। বিক্ষোভকারীদের একটি অংশ রাত সাড়ে ৮টার দিকে হঠাৎ বঙ্গভবনের সামনের ব্যারিকেড (প্রতিবন্ধক) ভেঙে এগোনোর চেষ্টা করে। পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের ধাক্কাধাক্কিও হয়। একপর্যায়ে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়লে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পরে সেনাবাহিনীর সদস্যরা বিষয়টি সামাল দেন।

শেষ পর্যন্ত ব্যারিকেড ভেঙে বিক্ষোভকারীদের কেউ বঙ্গভবনের গেটের কাছে যেতে পারেননি। ব্যারিকেডের উল্টো পাশেই অবস্থান নেন বিক্ষোভকারীরা। এ সময় তাঁরা রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবিতে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিতে থাকেন।

বিক্ষোভকারীরা একাধিক ব্যানারে সেখানে অবস্থান করেন। বিক্ষোভকারীদের বিভিন্ন অংশ নিজেদের মতো করে রাষ্ট্রপতিকে পদত্যাগের জন্য আলটিমেটাম (সময় বেঁধে দেওয়া) দেন। কেউ আধা ঘণ্টা, কেউ এক ঘণ্টা, কেউ ছয় ঘণ্টা, কেউবা ২৪ ঘণ্টার সময় বেঁধে দেওয়ায় সেখানকার পরিস্থিতি আরো উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। গত রাত সাড়ে ৮টা থেকে ১২টা পর্যন্ত এ অবস্থা চলে। উল্লেখ্য, বঙ্গভবন একই সঙ্গে রাষ্ট্রপতির কার্যালয় ও বাসভবন।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য রাত সাড়ে ১০টার পর দুই দফায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চারজন প্রতিনিধি বঙ্গভবনের সামনে যান। বিক্ষোভকারীদের দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করেন এবং প্রেসিডেন্ট মোঃ সাহাবুদ্দিনকে পদচ্যুত করা হবে, এমন প্রতিশ্রুতি দেন। তাঁদের কথায় আশ্বস্ত হয়ে বিক্ষোভকারীদের বড় একটি অংশ রাত সাড়ে ১২টার দিকে বঙ্গভবন এলাকা ছেড়ে যায়। বিক্ষোভকারীদের আর একটি অংশ বঙ্গভবনের সামনের সড়কে অবস্থান করছিল। পরে রাত পৌনে ২টার দিকে তাঁরা বঙ্গভবন এলাকা ছেড়ে যান।

বিক্ষোভকারীদের বুঝিয়ে বঙ্গভবনের সামনে থেকে সরিয়ে নিতে গত রাত সাড়ে ১০টার দিকে প্রথমে সেখানে যান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যসচিব আরিফ সোহেল ও মুখ্য সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসউদ (গত রাতে কমিটি ঘোষণা করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন)। তাঁরা বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আলোচনা করেন।

পরে রাত ১১টার দিকে সড়কের রাখা লোহার প্রতিবন্ধকের ওপর দাঁড়িয়ে বক্তব্য দেন আব্দুল হান্নান। তিনি বলেন, বঙ্গভবনের সামনের পরিস্থিতি কারো নিয়ন্ত্রণে নেই। এমন পরিস্থিতি থাকলে সুবিধাবাদীরা সুযোগ নেবে। ্প্রেসিডেন্ট মোঃ সাহাবুদ্দিন শপথ ভঙ্গ করেছেন। তিনি পদে থাকতে পারবেন না। তাঁকে চলে যেতে হবে। সুতরাং বঙ্গভবনের সামনে আর অবস্থান করার কিছু নেই। যাঁরা এখানে থাকবেন, তাঁদের নিজ দায়িত্বে থাকতে হবে।

আব্দুল হান্নান ও আরিফ সোহেলের সঙ্গে কিছু বিক্ষোভকারী চলে যান। তবে বিক্ষোভকারীদের বড় অংশই তখনো সেখানে অবস্থান করছিল। এমন পরিস্থিতিতে রাত সোয়া ১১টার দিকে বঙ্গভবনের সামনে আসেন যান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ এবং ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের’ সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম। দুজনই বঙ্গভবনের সামনের সড়কে লোহার প্রতিবন্ধকের ওপর দাঁড়িয়ে বক্তব্য দেন।

প্রথমে বক্তব্য দেন হাসনাত আব্দুল্লাহ। তিনি বলেন, বর্তমান ্প্রেসিডেন্টকে অবশ্যই পদত্যাগ করতে হবে। কিন্তু পরবর্তী প্রেসিডেন্ট চূড়ান্ত হওয়ার আগে যদি এই রাষ্ট্রকে রাষ্ট্রপতিহীন করে ফেলা হয়, তাহলে বিদেশি শক্তিরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। তা হতে দেওয়া যাবে না। তাই আগামী দুই দিন বুধ ও বৃহস্পতিবার সবার সঙ্গে পরামর্শ করে এমন একজনকে রাষ্ট্রপতি/প্রেসিডেন্ট করা হবে, যাঁকে নিয়ে কোনো বিতর্ক থাকবে না। তারপর মোঃ সাহাবুদ্দিনকে পদচ্যুত করা হবে।

এ সময় বিক্ষোভকারীদের সরে যাওয়ার অনুরোধ করেন হাসনাত আব্দুল্লাহ। পরে বক্তব্য দেন সারজিস আলম। তিনি বলেন, পদত্যাগের জন্য রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিনকে বুধ ও বৃহস্পতি, এই দুই দিন সময় দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রাষ্ট্রপতি পদত্যাগ না করলে ছাত্র-জনতা এক হয়ে আবার আন্দোলনে নামবে। তিনিও বিক্ষোভকারীদের সরে যাওয়ার অনুরোধ করেন।

হাসনাত ও সারজিসের বক্তব্যের পর বিক্ষোভকারীদের বড় অংশই চলে যায়। রাত পৌনে ২টার দিকে বাকিরাও বঙ্গভবন এলাকা ছেড়ে যান।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিক্ষোভ-স্লোগানের এক পর্যায়ে রাত ৮টা ২০ মিনিটের দিকে হঠাৎ বিক্ষোভকারীদের একটি অংশ বঙ্গভবনের বাইরের ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা বাধা দেন। একপর্যায়ে বিক্ষোভকারীরা ব্যারিকেডের বাইরে থাকা পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলার চেষ্টা করেন। এমন পরিস্থিতির মধ্যে রাত ৮টা ২৫ মিনিটের দিকে পুলিশ একটি সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে। পুলিশের সঙ্গে ধাক্বাধাক্বি ও সাউন্ড গ্রেনেডের আঘাতে আহত হন কয়েকজন। তাঁদের মধ্যে পাঁচজন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। আহতদের মধ্যে দুজন শিক্ষার্থী।

সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ার পর বঙ্গভবনের সামনে বিক্ষোভকারীদের মধ্যে উত্তেজনা আরো ছড়িয়ে পড়ে। তাঁরা পুলিশের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। তখন সেনাবাহিনীর সহায়তায় পুলিশ সদস্যদের ব্যারিকেডের ভেতরে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে বঙ্গভবনের ব্যারিকেডের বাইরের সড়কে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন তাঁরা।

পরে রাত ৮টা ৪০ মিনিটের দিকে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে একজন হ্যান্ডমাইক নিয়ে বিক্ষোভকারীদের চলে যাওয়ার অনুরোধ জানান। তবে বিক্ষোভকারীরা বঙ্গভবনের সামনে থেকে সরে যেতে অস্বীকৃতি জানান। তাঁদের কেউ কেউ রাষ্ট্রপতিকে পদত্যাগের জন্য সময় বেঁধে দিয়ে বক্তব্য দিচ্ছিলেন। কেউ আধা ঘণ্টা, কেউ এক ঘণ্টা, আবার কেউ ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়ে আলটিমেটাম দিচ্ছিলেন। এর মধ্যেই বঙ্গভবনের বাইরে সড়কে রাখা লোহার প্রতিবন্ধকের ওপর এক তরুণীসহ কয়েকজন উঠে পড়েন এবং হ্যান্ডমাইকে রাষ্ট্রপতিকে পদত্যাগের জন্য আলটিমেটাম ঘোষণা করছিলেন।

রাত ৯টা ৫০ মিনিটের দিকে অন্তত ৫০ জন পুলিশ সদস্য রাজউক ভবনের উল্টো দিকের ফুটপাত ধরে বঙ্গভবন-সংলগ্ন গুলিস্তানের দিকে এগোচ্ছিলেন। এ সময় বিক্ষোভকারীদের একটি অংশ পুলিশ সদস্যদের ধাওয়া দেয় এবং হামলা করে। বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে পেটানো হয়। অতর্কিত আক্রমণের মুখে পুলিশ সদস্যরা দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেন। এর কিছুক্ষণ পর বঙ্গভবনের কাছে পুলিশের একটি গাড়িতেও হামলা চালানো হয়। বিক্ষোভকারীরা পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে ইট ছুড়তে থাকেন। তবে বিক্ষোভকারীদের মধ্যে কয়েকজন পুলিশকে রক্ষা করার চেষ্টা করেন।

এর আগে গতকাল দুপুরের দিকে রাজউক ভবন পেরিয়ে বঙ্গভবনে যাওয়ার সড়কের মুখে বিক্ষোভকারীরা অবস্থান নেন। তাঁরা বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে গুলিস্তানমুখী সড়কের এক পাশ বন্ধ করে দেন। রাত ৮টার দিকে দুই পাশের সড়কই বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতে বঙ্গভবনের আশপাশ এলাকায় যানজট তৈরি হয়।

বিকেলে বঙ্গভবনের সামনে জড়ো হওয়া বিক্ষোভকারীদের কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন পোস্টের মাধ্যমে বঙ্গভবনের সামনে আসার জন্য আহ্বান জানান। সন্ধ্যায় বিভিন্ন এলাকা থেকে ছোট ছোট মিছিল নিয়ে আরো লোক বঙ্গভবনের সামনে জড়ো হন। সন্ধ্যার দিকে বিক্ষোভকারীদের সংখ্যা ছিল কয়েক শ। তাঁরা স্লোগান দেন, ‘এক দফা এক দাবি, চুপ্পু তুই কবে যাবি’। এসময় বিক্ষোভকারীরা বলেন, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শপথ ভঙ্গ করেছেন। আর এ কারণে এখন তিনি রাষ্ট্রপতির পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন।