ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্টের ষড়যন্ত্রই জাতীয় ঐক্যকে সুদৃঢ় করেছে- জামায়াতের আমির


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : ডিসেম্বর ১৩, ২০২৪, ৪:৪৭ অপরাহ্ণ /
ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্টের ষড়যন্ত্রই জাতীয় ঐক্যকে সুদৃঢ় করেছে- জামায়াতের আমির

সিলেটে জামায়াতের কর্মী সম্মেলন

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘পতিত ফ্যাসিস্ট শক্তি ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্টের ষড়যন্ত্র বিভক্তির বদলে জাতীয় ঐক্য সুদৃঢ় করেছে। তাদের সকল ষড়যন্ত্র নস্যাৎ হয়েছে। জামায়াত কোনো অপশক্তির কাছে মাথা নত করেনি, কেবলই আল্লাহর কাছে মাথা নত করেছে। যার ফলাফল ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্টের পতন হয়।’

শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) সকালে দীর্ঘ দেড় যুগ পর সিলেটের ঐতিহাসিক আলিয়া মাদরাসা ময়দানে সিলেট জেলা জামায়াতের কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা চাঁদাবাজি-দুর্নীতি করব না, কাউকে করতেও দেবো না। এ জন্য জনসাধারণকে সম্পৃক্ত করে সর্বত্র গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। আমরা ছাত্র-জনতার স্বপ্নের সাম্যের বাংলাদেশ গড়তে চাই।’

তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ ১৬ বছর আমরা অনেক ত্যাগ শিকার করেছি, আরো ত্যাগ শিকারে প্রস্তুত। তবুও ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সাম্যের বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে চাই। পতিত ফ্যাসিবাদী সরকার আমাদের শীর্ষ ১১ নেতাদের কাউকে ফাঁসি দিয়েছে ও কাউকে হত্যা করেছে। জামায়াতের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি এ টি এম আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধেও ফাঁসির রায় দিয়েছে। আল্লাহর ফয়সালায় তিনি জীবিত রয়েছেন। দ্রুততম সময়ের মধ্যে ন্যায়বিচার পেয়ে তিনি মুক্ত আকাশের নিচে ফিরবেন, ইনশাআল্লাহ।’

জামায়াত আমির বলেন, ‘২০০৬ সালে লগি-বৈঠার তাণ্ডবের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ বর্বর হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছিল। দীর্ঘ ১৬ বছরে তারা ইতিহাসের বর্বর ও আগ্রাসী শক্তি হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করে গণধিকৃত একটি দলে পরিণত হয়েছে। তাদেরকে জনগণ চায় কি না সেটা শহীদ ও আহতদের এবং তাদের পরিবারকে জিজ্ঞেস করলেই বুঝা যাবে। পতিত ফ্যাসিবাদী শক্তি কখনো আনসার লীগ, কখনো রিকশালীগ, কখনো চাকরিলীগ, আবার কখনো ইসকনলীগ রূপে ফিরে এসে দেশকে অস্থিতিশীল করতে চেয়েছি। তারা শেষমেষ ধর্মীয় দাঙ্গার ষড়যন্ত্র করেছিল। কিন্তু দেশপ্রেমিক জনগণ ধর্ম-বর্ণ, দল-মত নির্বিশেষ আরো বেশি ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাদের ষড়যন্ত্র প্রতিহত করেছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘এই দেশ ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের দেশ। স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে ভিন্নধর্মের নেতারা যে ধরনের ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছেন সে জন্য তাদের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ।’

তিনি বলেন, ‘ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকে ব্যর্থ করতে প্রতিবেশী দেশ সংখ্যালঘু কার্ড খেলতে চেয়েছিল। আমরা বার বার বলেছি, এ দেশে সংখ্যালঘু-সংখ্যাগুরুর নামে আর কোনো বিভক্তি চাই না। এর প্রতিফলন গোটা বিশ্ববাসী দেখতে পেয়েছে। ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্টের ষড়যন্ত্র বিভক্তির বদলে জাতীয় ঐক্য সুদৃঢ় করেছে।’

জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি জয়নাল আবেদীন, সহকারী সেক্রেটারি নজরুল ইসলাম ও মাওলানা মাশুক আহমদের যৌথ পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সম্মেলনে বিপুল সংখ্যক লোকজন উপস্থিত ছিলেন। সকাল ১০টায় সম্মেলনের কার্যক্রম শুরু হলেও ভোর থেকেই লোকে লোকারণ্য হয়ে যায় আলিয়া ময়দান। সম্মেলন শুরুর আগেই আলিয়া মাঠ কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে জনস্রোত ছড়িয়ে পড়ে রাস্তায়।

সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহছানুল মাহবুব জোবায়ের, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক ফজলুর রহমান, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও সিলেট মহানগর জামায়াতের আমির মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম।

এতে আরো বক্তব্য রাখেন সুনামগঞ্জ জেলা আমির মাওলানা তোফায়েল আহমদ খান, মৌলভীবাজার জেলা আমির ইঞ্জিনিয়ার শাহেদ আলী, সিলেট জেলা নায়েবে আমির অধ্যাপক আব্দুল হান্নান ও হাফেজ আনওয়ার হোসাইন খান, হবিগঞ্জ জেলা জামায়াত নেতা মহসিন আহমদ, সাবেক দক্ষিণ সুরমা উপজেলা চেয়ারম্যান মাওলানা লোকমান আহমদ, উপাধ্যক্ষ সৈয়দ ফয়জুল্লাহ বাহার, সিলেট মহানগর ছাত্রশিবির সভাপতি শরীফ মাহমুদ, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবির সভাপতি তারেক মনোয়ার, সিলেট জেলা পশ্চিম ছাত্রশিবির সভাপতি মারুফ আহমদ, সাবেক ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান সাইফুল্লাহ আল হোসাইন, সাবেক গোলাপগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান হাফিজ নজমুল ইসলাম।