ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে ভারতে পালিয়ে যাওয়া সাবেক স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ১৫ মার্চ প্রধানমন্ত্রী হিসেবেই ঢাকায় ফিরছেন। তাকে বরণ করার জন্য বিমানবন্দরে লাখ লাখ জনতা ফুল নিয়ে ভিড় করবেন। সেনাপ্রধান নিজে ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে বরণ করে ক্ষমতায় বসিয়ে দিবেন।
আবার কোথাও ছড়ানো হচ্ছে, জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বাংলাদেশ সফরে প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনূসকে হাসিনার পদত্যাগপত্র দেখাতে বলবেন। দেখাতে না পারলে তার কাছ থেকে ক্ষমতা নিয়ে হাসিনাকে বসিয়ে দিবেন সেই চেয়ারে। এমন নির্লজ্জভাবে গুজব ছড়িয়ে নেটদুনিয়ায় হাসিরপাত্রে পরিণত হয়েছে ফ্যাসিবাদের দোসররা।
ইতোমধ্যে ১৫ মার্চ শেষ হতে চলেছে। জাতিসংঘ মহাসচিব ঢাকায় অবস্থান করছেন। বিমানবন্দরও ঠিকঠাক আগের মতোই আছে। ঢাকা সফর অত্যন্ত সফলভাবে এগিয়ে চলেছে গুতেরেসের। কিন্তু আপার তো ফিরে আসার কোনো আলামত পাওয়া যাচ্ছে না। এভাবেই গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগকে কটাক্ষ করছেন নেটিজেনরা।
দ্য দিল্লি স্টারের নামে একটি ফটোকার্ড বানিয়ে সেখানে লেখা হয়েছে, জাতিসংঘ মহাসচিবের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিচ্ছেন ড. ইউনূস। ফটোকার্ডে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাতের পর পরিদর্শন বইয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের স্বাক্ষর করার ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। সেটি ভাইরাল ফেসবুকে। এভাবেই পতিত স্বৈরাচারদের গুজব নিয়ে মাশকারা করছেন নেটিজেনরা।
এরআগেও মোদির আমেরিকা সফরসহ একাধিকবার হাসিনা ফিরে আসবে বলে গুজব ছড়ানো হয়। নেটিজেনরা বলছেন, পতিত স্বৈরাচারকে এভাবে কেবল দুঃস্বপ্নই দেখে যেতে হবে। গণহত্যার বিচার, আত্মসংশোধন কিংবা ক্ষমা প্রার্থনার মতো স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ছাড়া ফ্যাসিস্টদের ক্ষমতায় ফেরার পথ বন্ধ। ভারতের ইন্ধনে সন্ত্রাস-নাশকতার মতো বিকল্পপথে ফেরার চেষ্টা করলে আরও আন্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হতে হবে।
আওয়ামী লীগকে কটাক্ষ করে ফেসবুকে একজন লিখেছেন, ১৫ মার্চ ইফতারের সময় হয়ে যাচ্ছে কই আপাতো এখনো এলো না। বিমানবন্দরের লাখ লাখ নেতাকর্মীর কি অবস্থা কেউ জানেন কী?
এদিকে, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ শনিবার (১৫ মার্চ) নিজের ফেসবুক আইডিতে এক পোস্টে লিখেছেন, আওয়ামী লীগের চ্যাপ্টার ক্লোউজ।
এর আগে গত শুক্রবার (১৪ মার্চ) নিজের ফেসবুক আইডিতে তিনি মন্তব্য করেন, যে পথ দিয়ে আওয়ামী লীগ পালিয়েছে, ঠিক সে পথ দিয়েই আওয়ামী লীগকে ফেরানোর ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের এমন করুণদশা নিয়ে ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক আইডতে লিখেছেন, কেউ এসে কিছু করে দিয়ে যাবে ভেবে, অন্যের মুখাপেক্ষী হয়ে কভু নিজের ভাগ্য ও অবস্থানের পরিবর্তন হয়না। গাছের নিচে সারাদিন হা করে বসে থাকলে ফল নিজে থেকে মুখে এসে পড়ে না, এজন্য যুৎসই ঢিল খুঁজে টার্গেট করে ছুঁড়ে মারতে হয়, সঠিক উচ্চতার কোটা বানিয়ে পাড়তে হয় নয়তো গাছে উঠে ছিঁড়তে হয়।
প্রেক্ষাপট কভু নিজে থেকে পরিবর্তন হয় না, হওয়াইতে হয়!
নাফিজ আমিন লিখেছেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনা আর কখনো বাংলাদেশে আসবে না কেন ৫ (পাঁচ) কারণ:
১) ২৪শে জুলাই আন্দোলনের সময় হাসিনা ১৪০০ জনেরও বেশি ছাত্র ও জনগণকে হত্যা করেছিল!
২) ২০০৯ সালে পিলখানায় বিডিআর হত্যাকাণ্ডে ৫৭ জন প্রতিভাবান সেনা কর্মকর্তা নিহত হয়েছিল! হাসিনা এবং ভারত সেই নৃশংস হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিল!
৩) বর্তমানে দেশে আওয়ামী লীগের কোনও শক্তিশালী উপস্থিতি নেই! আওয়ামী লীগের সমস্ত দুর্নীতিবাজ নেতা-কর্মী দেশ ছেড়ে চলে গেছেন অথবা গর্তে লুকিয়ে আছেন!
৪) পৃথিবীতে এমন কোনও নজির নেই যে কোনও ফ্যাসিস্ট শাসক ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ক্ষমতায় ফিরে এসেছেন!
৫) আমেরিকা কখনও দুর্নীতিবাজ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফিরে আসতে দেবে না! কারণ হাসিনা যখন ক্ষমতায় ছিলেন তখন প্রতিটি বিষয়ে আমেরিকার বিরোধিতা করেছিলেন!
তবে, এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে ভারত যদি তার মন পরিবর্তন করে এবং বিচারের জন্য হাসিনাকে বাংলাদেশে হস্তান্তর করে, তবে সেটা ভিন্ন বিষয়!কিন্তু হাসিনা নিজের ইচ্ছায় বিচারের জন্য কখনো বাংলাদেশে আসবে না! হাসিনা এখন রাজনৈতিকভাবে মৃত!
আপনার মতামত লিখুন :