এ কর্মসূচির মাধ্যমে বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম সব রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক সর্বস্তরের মানুষ এক কাতারে এসে ফিলিস্তিনি জনগণের সাথে সংহতি প্রকাশ করবেন।
হাতে লিখে পোস্টার তৈরি করছেন এক ব্যক্তি
হাতে লিখে পোস্টার তৈরি করছেন এক ব্যক্তি|প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট
টিএসসির মেট্রো স্টেশন বন্ধ থাকবে
কোনো রাজনৈতিক ব্যানার প্ল্যাকার্ড থাকবে না
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় অবৈধ দখলদার ইসরাইলের চলমান গণহত্যা ও জাতিগত নিধনের বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রতিবাদ করবে বাংলাদেশ। প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট বাংলাদেশের উদ্যোগে আজ শনিবার বিকেল ৩টায় ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অভিমুখে ‘মার্চ ফর গাজা’ অনুষ্ঠিত হবে। এ কর্মসূচির মাধ্যমে বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম সব রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক সর্বস্তরের মানুষ এক কাতারে এসে ফিলিস্তিনি জনগণের সাথে সংহতি প্রকাশ করবেন।
এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করবেন। এতে সভাপতিত্ব করবেন সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলেম বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মাওলানা আব্দুল মালেক। এই কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছে বিএনপি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, এবি পার্টি, হেফাজতে ইসলাম, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত আন্দোলনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক সংগঠনের নেতারা।
উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিদের মধ্যে উপস্থিত থাকবেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব শায়খ আল্লামা সাজিদুর রহমান, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির আল্লামা মামুনুল হক, ইসলামী আন্দোলনের নায়েবে আমির সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করিম, এনসিপির নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহ, আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, ইসলামী বক্তা শায়খ মিজানুর রহমান আজহারী ও শায়খ আহমাদুল্লাহ, ক্রিকেটার মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ প্রমুখ।
শাহবাগ থেকে মানিক মিয়া এভিনিউ পর্যন্ত ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিনিয়োগ সম্মেলনের কথা বিবেচনা করে স্থান পরিবর্তন করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এই কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বিকেল তিনটা থেকে কর্মসূচি শুরু হয়ে চলবে মাগরিবের আগ পর্যন্ত।
কর্মসূচি সফলে আয়োজকদের পক্ষ থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অভিমুখে মার্চ ফর গাজায় আগতদের জন্য গেট ও রাস্তা ব্যবহারের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বেলা ২টায় ৫টি পয়েন্ট থেকে মার্চ শুরু করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অভিমুখে রওনা হবে। বাংলামোটর থেকে শুরু হওয়া মার্চ শাহবাগ হয়ে রমনা গেট দিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশ করবে। কাকরাইল মোড় থেকে আরেকটি মার্চ শুরু হয়ে মৎস্য ভবন হয়ে রমনা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট গেট দিয়ে প্রবেশ করবে। জিরো পয়েন্ট থেকে মার্চ শুরু হয়ে দোয়েল চত্বর হয়ে টিএসসি গেট দিয়ে প্রবেশ করবে। বকশীবাজার মোড় থেকে শুরু হওয়া মার্চ শহীদ মিনার হয়ে টিএসসি গেট দিয়ে এবং নীলক্ষেত মোড় থেকে শুরু হওয়া আরেকটি মার্চ ভিসি চত্বর হয়ে টিএসসি গেট দিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশ করবে। এজন্য আগতদের দু’টি বিশেষ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। টিএসসি মেট্রো স্টেশন আজ বন্ধ থাকবে এবং সব পরীক্ষার্থীর জন্য সব রাস্তা বিশেষভাবে উন্মুক্ত থাকবে। পরীক্ষার্থীদেরকে পর্যাপ্ত সময় হাতে নিয়ে বাসা থেকে বের হওয়া এবং যেকোনো প্রয়োজনে স্বেচ্ছাসেবকদের সহযোগিতা নেয়ার অনুরোধ রইল।
এ ছাড়া চারটি সাধারণ দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এগুলো হলো-১. অংশগ্রহণকারীরা নিজ দায়িত্বে ব্যক্তিগত প্রয়োজনীয় সামগ্রী যেমন- পানি, ছাতা, মাস্ক সাথে রাখবেন এবং পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখবেন; ২. যেকোনো পরিস্থিতিতে ধৈর্য ও শৃঙ্খলা বজায় রাখবেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্বেচ্ছাসেবকদের সাথে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবেন; ৩. রাজনৈতিক প্রতীকবিহীন, সৃজনশীল ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড ব্যবহার করুন। শুধুমাত্র বাংলাদেশ ও ফিলিস্তিনের পতাকা বহনের মাধ্যমে সংহতি প্রকাশ করতে অনুরোধ করা হচ্ছে; ৪. দুষ্কৃতিকারীদের অপতৎপরতা প্রতিহত করতে সক্রিয় থাকুন। প্রতিরোধ গঠনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা গ্রহণ করুন।
এই জমায়েত নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক পেজে এক স্ট্যাটাসে জনপ্রিয় ইসলামী আলোচক মাওলানা মিজানুর রহমান আজহারী বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে সম্ভবত এই প্রথম এমন একটি গণজমায়েত হতে যাচ্ছে, যেখানে সব রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক দলমতের মানুষের সম্মিলিত স্রোত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মোহনায় মিলিত হবে ইনশা আল্লাহ। আজহারীর আহ্বান- মানবতার জন্য এ দিন আপনিও আসুন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। কাছের মানুষকে আসতে উদ্বুদ্ধ করুন। সম্ভব হলে সন্তানকেও সাথে আনুন। তারাও জানুক পবিত্র ভূমির মানুষের মর্মন্তুদ দুঃখগাথা। পাশাপাশি আহ্বান করেন বিপুল জমায়েতের সুযোগে কোনো অসাধু চক্র যেন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সে বিষয়েও সর্বোচ্চ সতর্ক থাকুন।
ফেসবুক পেজে এক স্ট্যাটাসে আরেক ইসলামী বক্তা শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, নিজে সংহতি প্রকাশ করুন, অন্যকে উদ্বুদ্ধ করুন। সক্রিয়ভাবে অংশ হয়ে উঠুন ঐতিহাসিক এই আয়োজনের। সবাইকে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়ে সর্বোচ্চ এক মিনিট দৈর্ঘ্যরে ভিডিও তৈরি করুন। এরপর প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্টের গ্রুপে আপনার ভিডিওটি পোস্ট করে নিজের প্রোফাইলে শেয়ার করুন।
কর্মসূচি সফলে বিভিন্ন সংগঠনের আহ্বান : হেফাজতে ইসলাম : দখলদার ইসরাইলের বর্বর আগ্রাসনে ফিলিস্তিনের গাজায় চলমান গণহত্যার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে রাজধানী ঢাকায় আয়োজিত ‘মার্চ ফর গাজা’ শীর্ষক প্রতিবাদ কর্মসূচির প্রতি একাত্মতা ঘোষণা করেছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। গতকাল এক যৌথ বিবৃতিতে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী ও মহাসচিব আল্লামা শায়েখ সাজিদুর রহমান বলেন, গাজায় চলমান ইসরাইলি বর্বরতা ও গণহত্যার প্রতিবাদে আয়োজিত এ কর্মসূচিতে দেশের খ্যাতনামা আলেম, দায়ী, ইসলামী স্কলার, ওয়ায়েজ এবং বিভিন্ন অঙ্গনের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা অংশগ্রহণ করবেন। দল-মত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমে গাজার নিপীড়িত মুসলিম জনগণের প্রতি সংহতি জানানো হবে। আমরা হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সর্বস্তরের নেতাকর্মী এবং দেশবাসীর প্রতি এই কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণের উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।
খেলাফত মজলিস : সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘মার্চ ফর গাজা’ সফলের আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, গাজায় গণহত্যা বন্ধ ও ইসরাইলকে আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের মুখোমুখি করার জন্য আন্তর্জাতিক বিশ্বকে তাদের নৈতিক দায়িত্বপালন করতে হবে। বিশ্বজুড়ে ইসরাইলি পণ্য বয়কট করা এবং মদদদাতা রাষ্ট্রগুলোর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ অব্যাহত রাখতে হবে। বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন অবিলম্বে শুরু করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জোর তৎপরতা দাবি করছি। খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত নির্বাহী বৈঠক থেকে এ আহ্বান জানান হয়।
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস : ‘মার্চ ফর গাজা’ সফল করার আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নেতৃবৃন্দ এক বিবৃতিতে বলেন, গাজায় দীর্ঘদিন ধরে চলমান অবৈধ ইসরাইল কর্তৃক নিপীড়ন, গণহত্যা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী যে প্রতিবাদের জোয়ার উঠেছে, মার্চ ফর গাজা তারই একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আমরা এই কর্মসূচির প্রতি আমাদের পূর্ণ সমর্থন ও সংহতি প্রকাশ করছি।
তাহাফফুজে খতমে নবুওয়ত : দখলদার ইসরাইলের বর্বর আগ্রাসনে ফিলিস্তিনের গাজায় চলমান গণহত্যার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মজলিসে তাহাফফুজে খতমে নবুওয়ত বাংলাদেশ এবং মার্চ ফর গাজা শীর্ষক প্রতিবাদ কর্মসূচির প্রতি পূর্ণ সমর্থন ও একাত্মতা ঘোষণা করেছে। এই কর্মসূচি সফল করে তোলার জন্য আমরা দেশের সব মুসলিম, আলেম-ওলামা, ছাত্র ও জনসাধারণকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণের আহ্বান জানানো হয়।
জাতীয় ওলামা মুভমেন্ট : মার্চ ফর গাজা কর্মসূচির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে জাতীয় ওলামা মুভমেন্টের আমির খান এবং মহাসচিব এক যৌথ বিবৃতিতে মার্চ ফর গাজা কর্মসূচির সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেন।
৭০ ফুট ফিলিস্তিনের পতাকা নিয়ে অংশ নেবে ঢাবি শিক্ষার্থীরা
ঢাবি প্রতিনিধি জানান, গাজায় চলমান মানবিক সঙ্কট ও ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলের আগ্রাসনের প্রতিবাদে আজ ১২ এপ্রিল ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচিতে অংশ নিতে যাচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীরা। ব্যতিক্রমধর্মী এই উদ্যোগে তারা বহন করবে একটি ৭০ ফুটের বিশাল ফিলিস্তিনের পতাকা। যেটি প্রতীকীভাবে ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি সংহতি ও সহানুভূতির বার্তা বহন করবে। কর্মমসূচিতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান।
ঢাবির বিভিন্ন অনুষদের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে আয়োজিত এ কর্মসূচি শুরু হবে আজ সোয়া দুইটায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি চত্বর থেকে জমায়েতের স্থান হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে।
আয়োজকরা জানান, এই পতাকা শুধু কাপড় নয়, এটি আমাদের অবস্থানের প্রতীক। আমরা চাই বিশ্ব জানুক, ফিলিস্তিনের পাশে বাংলাদেশ আছে। কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও মানবাধিকার সংগঠন থেকেও সংহতি জানানোর আহ্বান জানান তারা।
আপনার মতামত লিখুন :