অরোরা তাসনিমঃ তায়কোয়ানডো ফেডারেশনের বিতর্কিত সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল ইসলাম রানা ও তার ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের বিরুদ্ধে পুনরায় থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন ফেডারেশনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য আরিফ রাব্বানি। অভিযোগের তালিকায় আছে প্রাণনাশের হুমকি, অপহরণ, মানসিক নির্যাতন, এমনকি দুর্নীতি ও জালিয়াতির বিস্তর অভিযোগ।
জানা গেছে, ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের শুদ্ধি অভিযানে সার্চ কমিটির আহ্বানে সাড়া দিয়ে নতুন এডহক কমিটির জন্য প্রস্তাব দিতে গেলে আরিফ রাব্বানি হন ভয়াবহ হয়রানির শিকার। রানার-ঘনিষ্ঠ মোসলেম মিয়া, সুস্মিতা খান, নূরুল ইসলাম, নূরুদ্দিন, নিরমল, পলাশ মিয়া, রেজা খন্দকারসহ অনেকে মোবাইল ফোনে হুমকি দিতে থাকেন। হুমকীর ভাষা ছিল অশ্লীল, হুমকি ছিল “তুলে নিয়ে যাবে” এমন প্রকাশ্য চ্যালেঞ্জ, এছাড়াও মুঠোফেনের ওপার থেকে একজন সেনাবাহিনীর পরিচয়ে বলেন- “অস্ত্র জমা দিছি, ট্রেনিং জমা দেই নাই” । গত ৯ এপ্রিল পল্টন থানায় জিডি করতে গেলে থানার গেট থেকেই মোসলেম বাহিনী তাকে কৌশলে ফকিরাপুলে নিয়ে যায়, যেখানে উপস্থিত ছিলেন রানা নিজেও।
সেখানেই রাব্বানির উপর চালানো হয় মানসিক নির্যাতন এবং শারীরিক হুমকি। পরদিন ১০ এপ্রিল পল্টন থানায় দায়ের করা জিডি নং ৪৬৮-এ তিনি বিস্তারিতভাবে এসব উল্লেখ করেন। তদন্তের দায়িত্বে রয়েছেন এসআই মেহেদী হাসান। এরপরে রানা বাহিনীর বিরুদ্ধে ‘ক্রাইম চার্ট’ পুলিশের নজরে
নজরে উঠে এসেছে একাধিক অপরাধের তালিকা: রানার ধর্মান্তরিত না হয়েও মুসলিম নাম ব্যবহার, স্বাক্ষর জালিয়াতি, নারী খেলোয়াড়দের ব্ল্যাকমেইল, আন্তর্জাতিক সংস্থার ভুয়া লোগো ব্যবহার, জাল শিক্ষা সনদ, মানবপাচার ও মানি লন্ডারিং, ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনে ছাত্র ও জনতার বিরুদ্ধে তায়কোয়ানডো ক্যাডার ব্যবহার
এন.এস.সির বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, রানা বর্তমানে ফেডারেশনে তার নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে পাপেট কমিটি পাশ করানোর জন্য মরিয়া। তার সঙ্গী মোসলেম মিয়া দাবি করেছেন, ৫০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে ‘নগর ভবনের সমন্বয়ক পরিচয়ের’ মোয়াজ্জেম ও মোজাম্মেল এবং ক্রীড়া পরিষদের চেয়ারম্যানের একান্ত সচিব সাইফুল ইসলামের মাধ্যমে কমিটি পাশ করানোর চেষ্টা করছেন রানা। ২০ এপ্রিলের মধ্যে কমিটি গঠনের বাধ্যবাধকতা থাকায়, এই সময়কেই পেছনের দরজা খোলার সুযোগ হিসেবে দেখছেন রানা।
দীর্ঘদিনের ‘চক্রবুহ্যে’ তায়কোয়ানদো ফেডারেশনে রানা ও তার সহযোগীরা গত ৮ থেকে ২০ বছর ধরে একই পদে বহাল থেকে একক কর্তৃত্ব বজায় রেখেছেন। যার ফলে তায়কোয়ানদো ফেডারেশনের স্বচ্ছতা ও বিকাশ প্রায় বন্ধ হয়ে পড়েছে। এছাড়াও মাহমুদুল ইসলাম রানার বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা পড়েছে— যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে, বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনে (BOA), দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক), ওয়ার্ল্ড তায়কোয়ানডো (WT), কুকিওন (Kukkiwon), এশিয়ান তায়কোয়ানডো ইউনিয়ন (ATU), আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি (IOC)-তে
ক্রীড়া বিশেষজ্ঞদের মতামত, তায়কোয়ানডো ফেডারেশনের এই ‘ক্যাডার সিন্ডিকেট’ ভাঙার মাধ্যমে যেমন ক্রীড়াঙ্গনে শুদ্ধি আনা সম্ভব, তেমনি এটা হবে দেশের প্রশাসনিক শুদ্ধির একটি পরীক্ষাও। তাদের মতে, তায়কোয়ানডোর ছায়ায় গড়ে ওঠা মোসলেম, সুস্মিতা, পলাশ, নূরুল বাহিনীর সহিংস সাম্রাজ্য এখনই ভাঙা না হলে ভবিষ্যতে এই খেলার অস্তিত্বই হুমকির মুখে পড়বে।
প্রচার সম্পাদক-ঢাকা প্রেসক্লাব
আপনার মতামত লিখুন :