গোপালগঞ্জ ডেন্টাল কলেজ হাসপাতাল ভবন। ছবি- সংগৃহীত
গোপালগঞ্জে ঠিকাদারের গাফিলতি, গণপূর্ত ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তাদের উদাসীনতায় দফায় দফায় মেয়াদ বাড়িয়েও ৩০ মাসের কাজ ১১ বছরেও গোপালগঞ্জ ডেন্টাল কলেজ হাসপাতালটি স্থাপন করতে পারেনি স্বাস্থ্য অধিদফতর। এ দিকে অবকাঠামো নির্মাণকাজ শেষ না হওয়ায় অনুমোদন পেয়েও ডেন্টাল কলেজের একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করা যাচ্ছে না। তাছাড়া নির্মাণ কাজে ধীরগতির কারণে দঁাঁতের সুচিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন স্থানীয়রা। দ্রুত হাসপাতালটি নির্মাণ করার দাবি জানিয়েছেন তারা।
দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বিশাল জনগোষ্ঠীর দাঁতের চিকিৎসার জন্য কোনো বিশেষায়িত সরকারি ডেন্টাল কলেজ হাসপাতাল নেই। এজন্য ওই এলাকার জনগণের দাঁতের চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণে ২০১৪ সালে গোপালগঞ্জে একটি পূর্ণাঙ্গ ডেন্টাল কলেজ হাসপাতাল স্থাপন প্রকল্প নেয় সরকার।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গোপালগঞ্জ ডেন্টাল কলেজটি সাড়ে সাত একর জায়গার ওপর ঢাকা খুলনা মহাসড়কের গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার ঘোনাপাড়া মোড়ে অবস্থিত। হাসপাতালটি আড়াই বছরের মধ্যে শেষ করার কথা থাকলেও দফায় দফায় মেয়াদ বাড়িয়ে ১১ বছরেও এর স্থাপনের কাজ শেষ করতে পারেনি স্বাস্থ্য অধিদফতর।
৮৮ কোটি ৬৯ লাখ ৯৮ হাজার টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে একনেকে অনুমোদন দেয়া হয়। বাস্তবায়ন মেয়াদ ধরা হয় ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত। নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়ায় মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০১৮ সাল পর্যন্ত। এরপর ২০২০ সালের ডিসেম্বর, ২০২১ সালের ডিসেম্বর, ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়। কিন্তু তাতেও প্রকল্পের কাজ শেষ হয়নি। এ অবস্থায় প্রকল্পের দ্বিতীয় সংশোধনীতে নতুন করে দেড় বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়। পুনরায় প্রকল্পের অবশিষ্ট কার্যক্রম শেষ করতে মেয়াদ ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানোর জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে। এখনো মেয়াদ বৃদ্ধি হয়নি।
বারবার মেয়াদ বাড়ানোর কারণে প্রকল্প বাস্তবায়ন খরচও বাড়ছে প্রায় ৪৫ শতাংশ। প্রথমে গণপূর্ত অধিদফতরের রেট শিডিউল পরিবর্তন ও বিভিন্ন খাতের খরচ বেড়েছে এমন কারণ দেখিয়ে ২০১৮ সালে প্রকল্পের ব্যয় বাড়িয়ে করা হয় ১১২ কোটি ৮১ লাখ ৮২ হাজার টাকা। দ্বিতীয় সংশোধনীতে রাজস্ব খাতের বিভিন্ন আইটেমের দাম বেড়ে যাওয়া, ক্রয় পরামর্শকের নতুন কোড অন্তর্ভুুক্তি এবং ফার্নিচার ও বিভিন্ন যন্ত্রের দাম বেশি দেখিয়ে প্রকল্পের নতুন ব্যয় ধরা হয় ১৩৯ কোটি ৬৮ লাখ ৭৯ হাজার টাকা। অর্থাৎ নির্ধারিত মেয়াদে কাজ করতে না পারায় খরচ বাড়ছে ৫১ কোটি টাকা।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জিকেবিপিএল এন্ড ডিসিএলের (জেভি) সিনিয়র প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার মো: সোহেল রানা বলেন, আমাদের কাজ দ্রুত গতিতে চলছে। এ বছর অক্টোবর থেকে নভেম্বর এর মধ্যে কাজ শেষ করতে পারব।
গোপালগঞ্জ গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী স্বর্ণেন্দু শেখর মন্ডল বলেন, ডেন্টাল কলেজ স্থাপন প্রকল্পে পেছনের দিকে ৪টি ভবনের জমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন হয় ২০২৩ সালের দিকে। জমি অধিগ্রহণে সময় বেশি লাগার কারণে প্রকল্প সাইটের মাটি ভরাট, রাস্তা নির্মাণ ও ভবন ৪টির নির্মাণ কাজ দেরিতে শুরু হওয়ায় সময়মতো প্রকল্পের কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি।
প্রকল্প পরিচালক ডা: মোহাম্মদ ইমতিয়াজ বলেন, ডেন্টাল কলেজ স্থাপন প্রকল্পে জমি অধিগ্রহণেই লেগেছে প্রায় পাঁচ বছর। এ ছাড়া কয়েক দফায় মেয়াদ বাড়াতে কিছু সময় অতিবাহিত হয়েছে। প্রকল্পের অবশিষ্ট কার্যক্রম শেষ করতে মেয়াদ ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :