বাংলাদেশ ও মিয়ানমার ঐক্যমতে মানবিক করিডোর চালু’ জাতিসঙ্ঘের আবাসিক কার্যালয়ের তথ্য


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : মে ১, ২০২৫, ৭:২০ পূর্বাহ্ণ /
বাংলাদেশ ও মিয়ানমার ঐক্যমতে মানবিক করিডোর চালু’ জাতিসঙ্ঘের আবাসিক কার্যালয়ের তথ্য

মংডু শহরের নিয়ন্ত্রণ আরাকান আর্মির হাতে -সংগৃহীত

বাংলাদেশ ও মিয়ানমার একমত হলেই মানবিক করিডোর চালু জাতিসঙ্ঘের আবাসিক কার্যালয়ের তথ্য। জাতিসঙ্ঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর (ইউএনআরসি) কার্যালয় থেকে এ কথা বলা হয়েছে।বাংলাদেশ ও মিয়ানমার একমত হলে রাখাইনে মানবিক করিডোর চালু করতে পারে জাতিসঙ্ঘ। উভয় দেশের অনুমতি ছাড়া মানবিক করিডোর তৈরিতে জাতিসঙ্ঘ সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে পারবে না।

গতকাল জাতিসঙ্ঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর (ইউএনআরসি) কার্যালয় থেকে এ কথা বলা হয়েছে।

ইউএনআরসি কার্যালয় জানায়, বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমার সীমান্তের ওপারে কোনো সহায়তা পাঠাতে প্রথমে দুই সরকারের সম্মতি প্রয়োজন। রাখাইনে নাজুক জনগোষ্ঠীকে সীমান্ত অতিক্রম করে সহায়তা দেয়ার জন্য জাতিসঙ্ঘকে সংশ্লিষ্ট সরকারগুলোর অনুমতি নিতে হয়। আন্তঃসীমান্ত সহায়তার ক্ষেত্রে জাতিসঙ্ঘের জন্য এ বাধ্যবাধকতা রয়েছে। অনুমতি ছাড়া মানবিক করিডোর তৈরিতে জাতিসঙ্ঘ সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে পারবে না।

কার্যালয়টি জানায়, রাখাইনে মানবিক পরিস্থিতির অবনতিতে জাতিসঙ্ঘ উদ্বিগ্ন। জাতিসঙ্ঘের সংস্থাসমূহ বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের জন্য সহায়তা অব্যাহত রেখেছে। রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দাতা হিসাবে বাংলাদেশের প্রতি আন্তর্জাতিক সমর্থন জোরদারে জাতিসঙ্ঘ কাজ করে যাবে।

গত রোববার সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেছেন, রাখাইনে সহায়তা পাঠানোর জন্য বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে মানবিক করিডোর তৈরি করতে চায় জাতিসঙ্ঘ। এ বিষয়ে শর্তসাপেক্ষে নীতিগতভাবে সম্মত আছে অন্তর্বর্তী সরকার। যদি শর্তাবলি প্রতিপালিত হয়, তবে অবশ্যই আমরা সহায়তা করবো।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টার এ বক্তব্যের পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক মহলে ইস্যুটি ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের মতো একটি অনির্বাচিত সরকার এ ধরনের জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে পারে কি না- তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিএনপি। তাদের মতে, রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা করে অন্তর্বর্তী সরকারকে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

বিএনপি ছাড়াও জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) অন্যান্য রাজনৈতিক দল মানবিক করিডোর সম্পর্কে নিজ নিজ অবস্থান তুলে ধরেছে।

সম্প্রতি বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের পুরোটাই আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে তৌহিদ হোসেন আরো বলেছেন, বাংলাদেশের সীমান্তের পরিস্থিতি পরিবর্তিত হয়ে গেছে। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। এ সীমান্তে মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। কাজেই আমাদের নিজেদের স্বার্থেই কোনো না কোনো যোগাযোগ স্থাপন করতে হবে। আমরা অবশ্যই আরাকান আর্মির মতো একটি নন-স্টেট অ্যাক্টরের (রাষ্ট্রবহির্ভূত পক্ষ) সাথে আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ করতে পারি না। কিন্তু একেবারে বিচ্ছিন্নও থাকতে পারব না। কাজেই যতটুকু যোগাযোগ করা আমাদের প্রয়োজন, ততটুকু করব।

মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সঙ্ঘাতে বাংলাদেশ জড়িয়ে পড়ছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সঙ্ঘাতে জড়িয়ে পড়ার ব্যাপারটা পরে আসছে। দেশটির অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতির সাথে আমাদের স্বার্থ জড়িত। মিয়ানমারের একটি বিরাট জনগোষ্ঠী আমাদের এখানে আশ্রয় নিয়ে আছে। আমরা তাদের ফেরত পাঠাতে চাই। তাদের ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে আমাদের যা কিছু করা প্রয়োজন সেটা আমাদের করতে হবে।

এ দিকে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, আমরা স্পষ্টভাবে জানাতে চাই, সরকার ‘মানবিক করিডোর’ নিয়ে জাতিসঙ্ঘ বা অন্য কোনো সংস্থার সাথে কোনো আলোচনা করেনি। আমাদের অবস্থান হলো, জাতিসঙ্ঘের নেতৃত্বে রাখাইনে যদি মানবিক সহায়তা প্রদান করা হয়, তবে বাংলাদেশ লজিস্টিক সহায়তা দিতে আগ্রহী থাকবে।

তিনি জানান, জাতিসঙ্ঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) তথ্য অনুযায়ী রাখাইন রাজ্যে তীব্র মানবিক সঙ্কট চলছে। বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় রাখাইনে সহায়তা পাঠানোর বাস্তবসম্মত একমাত্র পথ হলো বাংলাদেশ। তবে, রাখাইনে সহায়তা প্রদানের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। এ বিষয়ে আমরা সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সাথে যোগাযোগ রাখছি। আমরা বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সাথে যথাসময়ে পরামর্শ করব।

জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা এবং অন্যান্য অগ্রাধিকার বিষয়ক হাই রিপ্রেজেনটেটিভ খলিলুর রহমান বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, রাখাইনে জাতিসঙ্ঘের নেতৃত্বে মানবিক সহায়তার উদ্যোগ নেয়া হলে বাংলাদেশ তাতে কারিগরি সহায়তা দিতে আগ্রহী। আমরা বিশ্বাস করি, জাতিসঙ্ঘের সহায়তায় মানবিক সহায়তার মাধ্যমে রাখাইনে স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠিত হবে, যা শরণার্থীদের ফেরার অনুকূল পরিবেশ তৈরি করবে।

প্রসঙ্গত, জাতিসঙ্ঘসহ আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থাগুলো বেশ আগে থেকেই এই মানবিক করিডোর তৈরির আহ্বান জানিয়ে আসছিল। গেল মাসে জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেসের বাংলাদেশ সফরের সময় ইস্যুটি নিয়ে সরকারের সাথে আলোচনা হলেও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবের ওই সফরের অন্যতম লক্ষ্য ছিল রোহিঙ্গাদের প্রতি সমর্থন ও সহমর্মিতা প্রকাশ করা।