দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণায় জবির আন্দোলন শেষ হলো


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : মে ১৭, ২০২৫, ৭:০৪ পূর্বাহ্ণ /
দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণায় জবির আন্দোলন শেষ হলো

গতকাল বিকেলে রাজধানীর কাকরাইল মোড়ে। ছবি: সংগৃহীত

 তিন দফা দাবিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা তৃতীয় দিনে সড়ক অবরোধ ও গণ–অনশন কর্মসূচি পালন করেন। আবাসন সমস্যার সমাধানসহ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সব দাবি সরকার মেনে নিয়েছে।

গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় এ ঘোষণা দেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজ। এরপর আন্দোলন কর্মসূচি সমাপ্তির ঘোষণা দেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. রইছ উদ্‌দীন।

গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে কাকরাইল মোড়ে আন্দোলনস্থলে যান ইউজিসির চেয়ারম্যান। তিনি অনশনকারী এক শিক্ষার্থীকে পানি পান করিয়ে তাঁদের অনশন ভাঙান। পরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক বলেন, আন্দোলনের মুখে সরকারের পক্ষ থেকে তাঁদের তিন দফা দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে। তিনি চলমান এ আন্দোলনের সমাপ্তি ঘোষণা দেন।

ইউজিসি জানিয়েছে, সরকারের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য পরিচালন বাজেট বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত হয়েছে। বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের প্রথম দাবির বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। একই সঙ্গে আবাসনসংকট নিরসনে খুব দ্রুত অস্থায়ী হল নির্মাণের কাজ শুরু করা হবে। এ ছাড়া দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দ্রুত বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে।

এর আগে টানা তৃতীয় দিনের মতো গতকালও প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা অভিমুখী কাকরাইল মোড় অবরোধ করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি একটি অংশ গতকাল বিকেলে গণ-অনশনে বসে। এর আগে দুপুরে জুমার নামাজের পর বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা মিলে সমাবেশ করেন। অবস্থান কর্মসূচির কারণে গতকালও দিনভর মৎস্য ভবন মোড় থেকে কাকরাইলে যাওয়ার এবং যমুনার সামনের সড়কের উভয় পাশে যান চলাচল বন্ধ ছিল।

ইউজিসির চেয়ারম্যানের বক্তব্যের পর আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক রেজাউল করিম। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালন বাজেট বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বাজেট বৃদ্ধির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের প্রথম দাবির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নতুন ক্যাম্পাসের কাজ দ্রুত বাস্তবায়নে সবকিছু করা হবে বলেও জানান তিনি।

উপাচার্যের বক্তব্যের পর শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রইছ উদ্‌দীন বলেন, ‘দাবিগুলো সুস্পষ্টভাবে বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে। আমরা সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছি। এরপরও যদি কোনো রকমের গড়িমসি বা নয়ছয় হয়, তাহলে আমরা ঘরে বসে থাকব না। এরপর যত বাজেট প্রণীত হবে, সবগুলোতে যাতে ধারাবাহিকতা বজায় থাকে, আমরা সে দাবি জানিয়ে এসেছি। তাঁরাও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।’ দাবি বাস্তবায়ন হওয়ায় সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে আন্দোলনের সমাপ্তি ঘোষণা করেন তিনি।

শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদকের ঘোষণার পর আন্দোলনরত অধিকাংশ শিক্ষক ও শিক্ষার্থী কাকরাইল মোড় ছেড়ে যান। তবে আন্দোলনে অংশ নেওয়া কিছু শিক্ষার্থী দাবি বাস্তবায়নের সুস্পষ্ট রূপরেখা ঘোষণা না আসা পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন।

পরে রাত সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নাসির উদ্দীন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, দাবির বিষয়ে সব দায়ভার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নেবে। আজকে যে ঘোষণা এসেছে, সবাই দেখেছে। এর ব্যত্যয় হলে আবার কঠোর জবাব দেওয়া হবে। এ সময় সেখানে অবস্থান করা শিক্ষার্থীদের পানি ও কলা খাইয়ে অনশন ভাঙান সহকারী অধ্যাপক নাসির উদ্দীন। রাত পৌনে ১২টার দিকে সব শিক্ষার্থী ফিরে যান।

এর আগে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী, গতকাল বিকেল চারটার দিকে গণ-অনশন শুরু করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী ও কয়েকজন শিক্ষক। পাশাপাশি তখন সড়ক অবরোধ করে অবস্থান কর্মসূচি চলমান ছিল।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসনব্যবস্থা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর জন্য আবাসন বৃত্তি ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে কার্যকর করা, বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ বাজেট অনুমোদন করা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ পরবর্তী একনেক সভায় অনুমোদন করে অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়ন করা—এই তিন দাবিতে কিছুদিন ধরে আন্দোলন করে আসছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে তিন দফা বাস্তবায়নের দাবিতে গত বুধবার প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা অভিমুখে লংমার্চ করেন জগন্নাথের শিক্ষার্থীরা। ওই দিন দুপুর ১২টার দিকে তাঁদের লংমার্চ কাকরাইলে পৌঁছালে বাধা দেয় পুলিশ। একপর্যায়ে বাধা পার হয়ে শিক্ষার্থীরা যমুনার দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান ব্যবহার করে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় অর্ধশত শিক্ষক-শিক্ষার্থী আহত হন। এরপর ওই দিন বেলা দুইটা থেকে কাকরাইল মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।