ঈমানের জন্য আক্বিদা ও শরিয়তকে সঠিকভাবে অনুসরণ করতে হবে। আক্বিদা ও শরিয়তের সমন্বয়েই ঈমান। শরিয়তের বিধানের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থাকতে হবে। তবেই ঈমান মজবুত হবে। মু’মিন হওয়ার জন্য শরিয়তের শিক্ষাকে আঁকড়ে ধরতে হবে। আল্লাহর সব বিধান (শরিয়ত) মেনে চলার মধ্যেই সমস্ত কল্যাণ নিহীত। শরিয়তের মধ্যে আবদ্ধ না হতে পারলে মু’মিন হওয়া যাবে না। আল্লাহর কোনো বিধানকেই অস্বীকার ও অবহেলা করা যাবে না।
গতকাল জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ানে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মুফতি আব্দুল মালেক এসব কথা বলেন। খতিব বলেন, আল্লাহ জীবনদান করেছেন তুমি কত সুন্দর আমল করতে পারো ছালাত, হায়াত ও মউত কার জন্য একমাত্র আল্লাহর জন্যই। তিনি বলেন, কুরবানীর বড় শিক্ষা হচ্ছে তাওহিদ।
খতিব বলেন, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এলেমের শিক্ষা শেষ হবে না। একের প্রতি অপরের হক কি তা জানতে হবে। নারী অধিকারের নামে নারীবাদীরা জাতিকে ধোকা দিচ্ছে। নারী অধিকার আদায়ের দাবি নিয়ে যারা শ্লোগান দিয়ে রাস্তায় নামছে তারা পথভ্রষ্ট। এরা মানবতার শত্রু ইসলামের শত্রু। এদের কাছ থেকে নারী অধিকার শিক্ষার কিছু নেই। নারীদের এবং সমাজকে ধ্বংস করার নীল নকশা নিয়ে এরা মাঠে নামছে। ইসলামই নারীদের ন্যায্য অধিকার দিয়েছে। ঘরে ঘরে শরিয়তের শিক্ষা চালু করতে হবে।
টঙ্গী পূর্ব আরিচপুর সরকার বাড়ি ঈদগাহ মসজিদুল আকসার খতিব মাওলানা রিয়াদুল ইসলাম মল্লিক জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ানে বলেন, হাজীদের জন্য বাইতুল্লাহ কেন্দ্রিক অনেকগুলো নিদর্শন এর মধ্যে মাকামে ইবরাহীম ও হাজরে আসওয়াদ দুটি জান্নাতি পাথর নিয়ে আজকের আলোচনা। হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম পবিত্র কা‘বা ঘর পুনঃনির্মাণের সময় যে পাথরে দাঁড়িয়ে কাজ করেছিলেন, সে পাথরটিকে বলা হয় ‘মাকামে ইবরাহীম’। তাওয়াফ-পরবর্তী ওয়াজিব দুই রাকাত নামায এই মাকামে ইবরাহীমের পেছনে পড়া সুন্নত। আল্লাহ তা‘আলা কুরআন কারীমে ইরশাদ করেন, তোমরা ‘মাকামে ইবরাহীম’কে সালাতের স্থান হিসেবে গ্রহণ করো। (সূরা বাকারা-১২৫) হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে উমর (রা.) বললেন, আপনি যদি মাকামে ইবরাহীমকে নামাযের স্থান বানাতেন! তারপরে আল্লাহ তা‘আলা উক্ত আয়াত নাযিল করেন। (সহিহ বুখারী, হাদিস নং-৪০২) রাসূলুল্লাহ (সা.) বিদায় হজ্বের সময় তাওয়াফের পরে এই মাকামে ইবরাহীমের পেছনে কা‘বার দিকে মুখ করে এভাবে দাঁড়িয়ে নামায পড়েছেন যে, তাঁর এবং কা‘বা শরীফের মাঝে মাকামে ইবরাহীম ছিল। (সহিহ বুখারী, হাদিস-৩৯৫) তাওয়াফের পরে দুই রাকাত নামায আদায় করা ওয়াজিব। এ দুই রাকাত মাকামে ইবরাহীমের পেছনে আদায় করা সবচেয়ে উত্তম। যদি কোনো কারণে তা সম্ভব না হয়, তাহলে মসজিদে হারামের যেকোনো জায়গায় আদায় করলেই হবে। তাও যদি সম্ভব না হয়, তাহলে হারামের এলাকার ভেতরে আদায় করে নেবে। হারামের সীমানার বাইরে আদায় করা মাকরূহে তানযীহী।
পবিত্র কাবা মুসলমানদের আবেগ-অনুভূতি ও ইবাদতের প্রধান কেন্দ্র। এই ঘরের দেয়ালে স্থাপন করা মর্যাদাপূর্ণ একটি পাথরের নাম হাজরে আসওয়াদ। শরিয়তের বিধান অনুযায়ী হাজিরা তাওয়াফ করার সময় এতে সরাসরি বা ইশারার মাধ্যমে চুম্বন দিয়ে থাকেন। বিশুদ্ধ সূত্রে আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, হাজরে আসওয়াদ জান্নাতের পাথর। প্রথমে এটি দুধের চেয়েও অধিক সাদা ছিল। পরে মানুষের গুনাহ তাকে কালো করে দিয়েছে। (তিরমিজি, হাদিস-৮৭৮) কাবা পুনঃনির্মাণের সময় নবী ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ পুত্রকে একটি পাথর আনতে বললেন, নবী ইসমাঈল আলাইহিস সালাম একটি পাথর নিয়ে এলেন, কিন্তু পাথরটি ইবরাহিম আলাইহিস সালামের পছন্দ হলো না। তিনি এর থেকে আরো সুন্দর পাথর খুঁজতে বললেন। বাবার আদেশ মতো ইসমাঈল আলাইহি সালাম বিভিন্ন পাহাড়ে গিয়ে আরো সুন্দর পাথর খুঁজতে লাগলেন। এ সময় হঠাৎ আবু কুবাইস পাহাড় থেকে একটি আওয়াজ হলো ‘হে ইসমাঈল! আপনার একটি গচ্ছিত সম্পদ আমার কাছে রয়েছে। সম্পদটি নিয়ে আমাকে দায়মুক্ত করুন’। আওয়াজ শুনে হজরত ইসমাঈল আলাইহিস সালাম পাহাড়ের ভেতরে গিয়ে হাজরে আসওয়াদ খুঁজে বের করলেন এবং তা কাবা শরীফের দেয়ালে রাখলেন। এভাবেই হাজরে আসওয়াদ আবার তার স্থান ফিরে পেলো। (সূরা বাকারা-আয়াত, ১২৭)
আপনার মতামত লিখুন :