আসমানে কাঁটাঃ পাকিস্তানি আকাশপথ বন্ধে এয়ার ইন্ডিয়ার ক্ষতি হয়েছে ৮২০ কোটি রুপি


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : জুন ৫, ২০২৫, ১১:৫৫ অপরাহ্ণ /
আসমানে কাঁটাঃ পাকিস্তানি আকাশপথ বন্ধে এয়ার ইন্ডিয়ার ক্ষতি হয়েছে ৮২০ কোটি রুপি

ভারতীয় বিমান সংস্থাগুলোর জন্য প্রতিদিনের ক্ষতির পরিমাণ এতটাই বেড়েছে যে তা এখন টিকে থাকার সংগ্রাম হয়ে উঠেছে। 

চার দশক নয়, মাত্র চল্লিশ দিনেই যেন আকাশপথের কূটনৈতিক দ্বন্দ্ব ভারতীয় বিমান সংস্থাগুলোর জন্য রূপ নিয়েছে এক অর্থনৈতিক ঝড়ে। পাকিস্তান তাদের আকাশপথ ভারতীয় উড়োজাহাজের জন্য বন্ধ করে দেওয়ার পর, ভারতীয় বিমান সংস্থাগুলোর জন্য প্রতিদিনের ক্ষতির পরিমাণ এতটাই বেড়েছে যে তা এখন টিকে থাকার সংগ্রাম হয়ে উঠেছে।

পাকিস্তানি দৈনিক এক্সপ্রেস ট্রিবিউন আরও জানিয়েছে, সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়েছে ভারতের জাতীয় বিমান সংস্থা এয়ার ইন্ডিয়া। এই চল্লিশ দিনে প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক ক্ষতি ৮২০ কোটি রুপির বেশি। শুধু বিকল্প পথ ঘুরে উড়তে গিয়ে বাড়তি জ্বালানি, সময় এবং কর্মী ব্যয়ের কারণে প্রতিদিন গড়ে ২০ কোটি রুপি করে ক্ষতি হজম করতে হচ্ছে ।

এত বিশাল অংকের আর্থিক ক্ষতির কথা এবার সরাসরি ভারত সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন এয়ার ইন্ডিয়ার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বা সিইও ক্যাম্পবেল উইলসন। নরেন্দ্র মোদি সরকারের কাছে পাঠানো চিঠিতে তিনি সতর্ক করে বলেছেন, যদি এই নিষেধাজ্ঞা আরও দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে তা সংস্থাকে টিকে থাকা কঠিন করে তুলবে। তিনি আরও বলেন, ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে ঘোষিত ‘বিহান’ নামের পাঁচশালা রূপান্তর পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২৬-২৭ অর্থবছরের মধ্যে লাভজনক হয়ে ওঠার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল এয়ার ইন্ডিয়া। কিন্তু পাকিস্তানি আসমান বন্ধ থাকায় সেই গুড়ে বালি পড়েছে। সে লক্ষ্য বাস্তবায়ন এখন হুমকির মুখে।

উত্তর আমেরিকার আকাশ পথে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। বিশেষ করে উত্তর আমেরিকাগামী ফ্লাইটগুলোকে সবচেয়ে বড় প্রভাবে পড়তে হয়েছে। আগে পাকিস্তানি আকাশপথ ব্যবহার করে এই রুটের ফ্লাইটগুলো তুলনামূলক ভাবে সোজাসুজি যেতে পারত। এখন সেগুলোকে ভিয়েনা কিংবা কোপেনহেগেনে থেমে জ্বালানি নিতে হচ্ছে। ফলে সময় এবং খরচ দুইই বেড়েছে।

উইলসন একে একেবারে তুচ্ছ কোনও ব্যয় নয় উল্লেখ করে বলেন, বিমান চালনা বা অপারেশনের ন্যূনতম খরচ ওঠা অবধি তারা এই ধারা বজায় রাখবেন। পাশাপাশি আর্থিক ক্ষতির প্রভাব যতটা সম্ভব কমিয়ে আনার জন্য আদাপানি খেয়ে চেষ্টা করছেন।

পাকিস্তানে নিষেধাজ্ঞার ধাক্কায় কেবল এয়ার ইন্ডিয়া নয়, ক্ষতির ঠেলায় পড়েছে অন্যান্য সংস্থাও। এই আর্থিক আঘাত শুধু এয়ার ইন্ডিয়া একা অনুভব করছে না। ভারতের অন্যান্য বিমান সংস্থাগুলোও একইভাবে ক্ষতির মুখে পড়ছে। তবে তাদের নির্দিষ্ট ক্ষতির পরিমাণ এখনো প্রকাশ্যে আসেনি। ভারতের অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গেছে,ভারতীয় বিমান খাতে সব মিলিয়ে কয়েক হাজার কোটি রুপির ক্ষতি হয়ে গেছে।

ভারতে এক সিনিয়র অ্যাভিয়েশন কর্মকর্তা ‘একে পূর্ণমাত্রায় ঝড় বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, এটা সাধারণ কোনও অস্থিরতা নয়, ভারতীয় বিমান খাতের জন্য এটা একেবারে পূর্ণমাত্রার ঝড়। ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক উত্তেজনা বৃদ্ধির রাজনৈতিক উত্তেজনার ছায়া ধরেই এই আকাশপথ বন্ধের সিদ্ধান্ত এসেছে। পাকিস্তান চলতি বছরের ২৪ এপ্রিল থেকে ভারতীয় উড়োজাহাজের জন্য আকাশপথ বন্ধ করে দিয়েছে, এবং চল্লিশ দিন পেরিয়ে গেলেও এর কোনও সমাধান এখনও চোখে পড়ছে না।

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, যদি খুব দ্রুত এই সমস্যার কূটনৈতিক সমাধান না আসে, তবে ভারতীয় বিমান সংস্থাগুলোকে হয়ত ফ্লাইট সংখ্যা কমাতে অথবা বিমান ভাড়া বাড়তি বোঝা চাপাতে হতে পারে, যার চরম ভুক্তভোগী হবে সাধারণ যাত্রীরা।

শেষ কথা বলতে হয়, আকাশ কেবল সীমা নয়, বাধাও হয়ে দাঁড়াতে পারে। পাকিস্তানি আকাশপথের নিষেধাজ্ঞা যেন এখন শুধুই ভূখণ্ডগত সীমারেখা নয়, বরং এক বিশাল আর্থিক ব্যয় এবং ভোগান্তির প্রতীক। দীর্ঘ মেয়াদে এই সংকট শুধু বিমান সংস্থার অর্থনৈতিক স্বাস্থ্য নয়, পুরো দক্ষিণ এশিয়ার আকাশপথ নীতিকে নতুন করে চিন্তায় ফেলছে।