হত্যাসহ ২১ মামলার আসামি পিচ্চি রাজাকে ঘিরে আসছে চাঞ্চল্যকর তথ্য


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : জুন ১৪, ২০২৫, ৯:২৪ অপরাহ্ণ /
হত্যাসহ ২১ মামলার আসামি পিচ্চি রাজাকে ঘিরে আসছে চাঞ্চল্যকর তথ্য

সাবা রিপোর্টঃ বিজিবির হাতে আটক হওয়া হত্যাসহ ২১ মামলার আসামি যশোরের রেলগেট এলাকার পিচ্চি রাজাকে ঘিরে সন্ত্রাসী অপতৎপরতার আরো তথ্য এসেছে। টানা এক যুগ ধরে যশোরে ভয়-ভীতি, হত্যা, ছিনতাই, মাদক ও অস্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালিয়ে যাওয়া পিচ্চি রাজা অবশেষে আটক হওয়ায় রেলগেট এলাকার মানুষ সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। গ্রামের কাগজে ফোন করে অনেক ভুক্তভোগী তার কঠিন শাস্তিও দাবি করেছেন।

বিশেষ করে মাস খানেক আগে একটি হত্যা মামলায় জামিন নিয়ে ডজনখানেক বাড়িতে হামলার ঘটনায় তার বিরুদ্ধে ফুঁসে ওঠে এলাকার মানুষ। আর সেই থেকে মোস্টওয়ান্টেড ছিল এই পিচ্চি রাজা।

তথ্য মিলেছে, ২১ মামলার আসামি পিচ্চি রাজা গত ৬ এপ্রিল এলাকার রজমজান হত্যা মামলায় জামিন পেয়ে চাঁচড়া রেলগেট এলাকায় কমপক্ষে ৬টি স্পটে সন্ত্রাসী অপতৎপরতা চালানোর ঘটনায় তাকে খুঁজছিলো আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা। বিভিন্ন ভুক্তভোগী মহল থেকে অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ৭ এপ্রিল যৌথ বাহিনী ঝটিকা অভিযান চালালেও কৌশলে আটক এড়িয়ে যায় পিচ্চি রাজা। যদিও ওই এলাকা থেকে ৬টি দেশিয় অস্ত্রসহ তার ৪ সহযোগীকে আটক করা হয়। ৬ এপ্রিল জেল হাজত থেকে জামিনে এসে ওই রাতেই পিচ্চি রাজা এবং তার সহযোগীরা রেলগেট কলাবাগান এলাকায় তান্ডব চালায়। তারা কলাবাগান এলাকার ৬টি টিনের বাড়ি ভাংচুর করে। ৩ বাড়ি থেকে মালামাল লুট করে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ ওঠে। এছাড়া পিচ্চি রাজা গং নিহত রমজানের ভাই সবুজ এবং ভাইয়ের স্ত্রী ফারজানাকে মারধর করে বলে পুলিশকে জানায় ভুক্তভোগীরা। এছাড়া কয়েকটি বাড়িতে গিয়ে স্থানীয় লোকজনকে নানামুখি হুমকি দিয়ে ডাকাডাকি করে।

এখানেই শেষ নয়, জেলখানায় থাকার সময় রেলগেট এলাকার কয়েকজনকে ফোন করে চাঁদা স্বরুপ তার পিসিতে টাকা লাগাতে বলে রাজা। ওই টাকা না দেয়ায় অনেকের উপর নাখোশ হয় রাজা। আর জামিন পেয়ে তাদের বাড়ির সামনে গিয়ে আপত্তিকর আচরণ করে। নানা অভিযোগে রেলগেট পশ্চিমপাড়া ও কলাবাগান এলাকায় অভিযান চালানো হয়। কিন্তু ওই দিন সন্ত্রাসী পিচ্চি রাজাকে আটক করতে পারেনি যৌথবাহিনী।

কার্যত রাজার অপরাধজগতের উত্থান হয় এক যুগ আগে, আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী রমজান আলীর হাত ধরে। মাদক কারবারে জড়িত পিতা-মাতার ছায়ায় বেড়ে ওঠা রাজা প্রথমে রেলগেট পশ্চিমপাড়ার চিহ্নিত অপরাধী রমজান ও সাগরের সাথে জোট গড়ে তোলে। ফেনসিডিল, হেরোইন, অস্ত্র, বোমা তৈরি সবই তার অপরাধমূলক কার্যক্রমের অংশ হয়ে ওঠে। ২০১২ সালের দিকে ইজিবাইকচালক শামিমকে শ্বাসরোধে হত্যার মাধ্যমে আলোচনায় আসে তার নাম। এরপর একে একে ছিনতাই, বোমাবাজি, মাদক পাচার, চাঁদাবাজি, হত্যাকান্ড সবখানেই তার নাম উঠে আসে। পিচ্চি রাজাসহ চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের ধরতে যশোরের চাঁচড়া রেলগেট এলাকার অনেকগুলো স্পট ও ক্রাইম পয়েন্টে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার নজরদারি শুরু হয়। যে কারণে সে আত্মগোপনে চলে যায় ৮ এপ্রিলের পরেই। আর বেনাপোল এলাকায় আস্তানা গাড়ে। এরই মধ্যে গত ১২ জুন বেনাপোলের আমড়াখালী বিজিবি চেকপোস্টে অভিযান চালিয়ে পিচ্চি রাজাকে আটক করেন বিজিবির সস্যরা। তার কাছ থেকে মদ ও বার্মিজ ছুরি উদ্ধার করা হয়।

এদিকে সন্ত্রাসী রাজা আটকের খবর ছড়িয়ে পড়লে চাঁচড়া এলাকার মানুষ সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। সবগুলো মামলায় তার শাস্তি দাবি করেছেন তারা।

যশোর কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ আবুল হাসনাত খান জানিয়েছেন, সন্ত্রাসী পিচ্চি রাজার বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্র, দ্রুত বিচার আইনের মামলাসহ ২১টি মামলা রয়েছে। গত ৭ এপ্রিলের অভিযানে রাজা আটক না হলেও দেশিয় অস্ত্র উদ্ধার ও তার ৪ সহযোগী আটক হয়। ওই ঘটনায় থানায় মামলা হয়। ওই মামলায় রাজাকেও পলাতক আসামি করা হয়। এরপর ১২ জুন আটক হয় বিজিবির হাতে।