১১ বছর বয়সি সুমাইয়া তুল জান্নাত। খুলনার লায়ন্স স্কুল সংলগ্ন এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করা এই শিশুটি প্রায় দেড় বছর ধরে কিডনি ও লিভারের ক্যান্সারে আক্রান্ত। ৬টি কেমোথেরাপি দেয়া হলেও সুস্থ না হওয়ায় কেটে ফেলা হয় তার বাম কিডনি।
চলতি বছরের শুরুতে ধরা পড়ে লিভার ক্যান্সার। চিকিৎসকের ভাষ্য প্রয়োজন নিয়মিত কেমোথেরাপি অথবা লিভার প্রতিস্থাপন। কিন্তু অর্থাভাবে থেমে গেছে তার চিকিৎসা। অসুস্থতায় কাতর শুধু সুমাইয়াই নয়, তার ছোট বোন ৩ বছরের রহিমা মুসকানও ভুগছে জটিল হৃদরোগে। গত বছর আগস্টে ওপেন হার্ট সার্জারির পরও তার হৃদযন্ত্রে একটি ছিদ্র রয়ে গেছে।
খুলনার গল্লামারীতে মসজিদুল কুবার কাছে ভাড়া বাসায় বসবাস করেন এই দুই শিশুর বাবা-মা আব্দুর রহিম ও ফারজানা আক্তার। আব্দুর রহিম খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বল্প বেতনের কর্মচারী হিসেবে কাজ করেন। তিনি জানান, ভিটেমাটি বিক্রি করে, ধারদেনা করে এবং সাহায্য-সহযোগিতা নিয়ে গত দেড় বছরে দুই মেয়ের চিকিৎসায় খরচ করেছেন প্রায় ২৫ লাখ টাকা।
কান্নাভেজা কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘চিকিৎসক বলেছেন, বড় মেয়েকে বাঁচাতে লিভার প্রতিস্থাপন করতে হবে। কিন্তু আর কিছুই অবশিষ্ট নেই বিক্রির মতো। আমি এখন সম্পূর্ণ অসহায়।’
সুমাইয়ার মা ফারজানা আক্তার বলেন, ‘আমার মেয়ে এখন সব বুঝতে পারে। ও বলে, “মা আমি বাঁচতে চাই।” ওর সামনে কাঁদি না, গোসলের সময় চোখের জল ফেলি আর আল্লাহর কাছে বলি, আমার মেয়েটার প্রাণ ভিক্ষা দিন।’
প্রতিবেশীরা জানান, এই পরিবার কখনো কারো কাছে হাত পাতেনি। এখন বিপদে পড়ে বাধ্য হয়ে সহায়তা চাইছে। সমাজের হৃদয়বান ও বিত্তবানদের এই অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
আজকের সুমাইয়ার মুখে কষ্টের ছাপ স্পষ্ট। কখনো যে মুখ ছিল হাস্যোজ্জ্বল, এখন তা বিবর্ণ। তবু তার কণ্ঠে শোনা যায় বাঁচার আকুতি। সে বলে, ‘আমি আগে হাজেরা মেমোরিয়াল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণিতে পড়তাম। অনেকদিন স্কুলে যেতে পারছি না। বান্ধবীরা দেখতে আসে, কিন্তু আমি ওদের সঙ্গে খেলতে, স্কুলে যেতে চাই।’
১৬ মাস আগে তুলে রাখা বইখাতা, ড্রয়ারে ভাঁজ করে রাখা পছন্দের জামা আবারও পরার স্বপ্ন দেখে সুমাইয়া। যেন কেউ তাকে ডাকছে, ‘চলো আবার স্কুলে ফিরে যাই।’
আপনার মতামত লিখুন :