নেতানিয়াহু আমেরিকার দ্বারস্থ হয়েছেন কি নিরাপত্তা ঝুঁকি মোকাবিলায়?


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : জুন ২২, ২০২৫, ২:০৯ অপরাহ্ণ /
নেতানিয়াহু আমেরিকার দ্বারস্থ হয়েছেন কি নিরাপত্তা ঝুঁকি মোকাবিলায়?

২০০২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে দেওয়া সাক্ষ্যে তিনি বলেন, ইরাকের হাতে পরমাণু অস্ত্র চলে এলে তা ইসরায়েলসহ গোটা বিশ্বের জন্য হবে মারাত্মক বিপদ। তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে আহ্বান জানান ইরাকের বিরুদ্ধে সামরিক ব্যবস্থা নিতে। এরপরই ইরাকে সামরিক অভিযান শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র, যদিও পরে নিশ্চিত হওয়া যায়, সাদ্দাম হোসেনের হাতে কোনো পরমাণু অস্ত্র ছিল না।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দীর্ঘদিন ধরেই মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা এবং নিজ দেশের অস্তিত্ব রক্ষার প্রশ্নে সরব ভূমিকা পালন করে আসছে। বিশেষ করে পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে যেসব দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, তাদের প্রতি বরাবরই কঠোর অবস্থান নিয়েছেন তিনি। আর এই ক্ষেত্রে তার কৌশল স্পষ্ট—যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা চাওয়া।

নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক জীবনের বিভিন্ন পর্যায়েই দেখা গেছে, তিনি আমেরিকার দ্বারস্থ হয়েছেন নিরাপত্তা ঝুঁকি মোকাবিলায়।

২০০২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে দেওয়া সাক্ষ্যে তিনি বলেন, ইরাকের হাতে পরমাণু অস্ত্র চলে এলে তা ইসরায়েলসহ গোটা বিশ্বের জন্য হবে মারাত্মক বিপদ। তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে আহ্বান জানান ইরাকের বিরুদ্ধে সামরিক ব্যবস্থা নিতে। এরপরই ইরাকে সামরিক অভিযান শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র, যদিও পরে নিশ্চিত হওয়া যায়, সাদ্দাম হোসেনের হাতে কোনো পরমাণু অস্ত্র ছিল না।

আজকের প্রেক্ষাপটেও ঠিক একই ধাঁচের পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে নেতানিয়াহুকে। এবারের লক্ষ্য ইরান। তার দাবি—ইরান যদি পরমাণু শক্তি অর্জন করে, তা ইসরায়েলের অস্তিত্বের জন্য হবে সরাসরি হুমকি। তিনি ইরানকে আখ্যা দিয়েছেন ‘বিশ্বের শীর্ষ সন্ত্রাসবাদী রাষ্ট্র’ হিসেবে এবং বলেন, তাদের হাতে যদি পরমাণু অস্ত্র যায়, কেউই নিরাপদ থাকবে না।

২০২৫ সালে ইসরায়েল ‘অপারেশন দ্য রাইজিং লায়ন’ নামে ইরানের বিরুদ্ধে হামলা শুরু করে। ১৩ জুন শুরু হওয়া এই অভিযানে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও টার্গেট করা হয়। জবাবে ইরানও শুরু করে পাল্টা হামলা।

এদিকে, সমালোচকরা বলছেন, ইসরায়েলের নিজস্ব পারমাণবিক কর্মসূচি থাকলেও সেটি তারা কখনো স্বীকার করে না। অথচ অন্য কোনো দেশ মধ্যপ্রাচ্যে পারমাণবিক শক্তি অর্জনের চেষ্টা করলেই, নেতানিয়াহু সেটিকে বৃহৎ হুমকি হিসেবে দেখান এবং মার্কিন হস্তক্ষেপ দাবি করেন।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, নেতানিয়াহুর এই কৌশল শুধু নিরাপত্তার জন্য নয়, এটি তার রাজনৈতিক অস্ত্রও। বাইরের শত্রুর বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করে তিনি দেশের অভ্যন্তরেও নিজের অবস্থান শক্ত করতে চান। একইসঙ্গে আমেরিকার সহযোগিতা চাওয়ার মধ্য দিয়ে কূটনৈতিক প্রভাবও ধরে রাখতে সচেষ্ট তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরায়েলের শক্তিশালী লবিং গ্রুপ এবং দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সম্পর্কও এই সহায়তা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আর নেতানিয়াহু এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে প্রতিবারই নিজের রাজনৈতিক ও কৌশলগত লক্ষ্য অর্জনের চেষ্টা করেন।

সব মিলিয়ে, মধ্যপ্রাচ্যের পরমাণু রাজনীতিতে নেতানিয়াহুর অবস্থান বরাবরই কঠোর এবং তার সমাধান একটাই—যুক্তরাষ্ট্র।