পিআর নিয়ে গণ-ঐকমত্য তৈরি হয়েছে, আগামীতে ঐক্যবদ্ধ ইসলামী দলগুলো হবে দেশের প্রধান রাজনৈতিক শক্তি -চরমোনাই পীর


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : জুন ২৯, ২০২৫, ৯:১৫ পূর্বাহ্ণ /
পিআর নিয়ে গণ-ঐকমত্য তৈরি হয়েছে, আগামীতে ঐক্যবদ্ধ ইসলামী দলগুলো হবে দেশের প্রধান রাজনৈতিক শক্তি -চরমোনাই পীর

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ইসলামী আন্দোলনের মহাসমাবেশে বক্তব্য রাখেন চরমোনাই পীর মুফতি রেজাউল করিম – সংগৃহীত

প্রতিবেদকঃ 

আগামীতে ঐক্যবদ্ধ ইসলামী দলগুলো দেশের প্রধান রাজনৈতিক শক্তি হবে বলে মন্তব্য করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম। গতকাল রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সংস্কার, বিচার ও পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন এবং দেশ ও ইসলামবিরোধী সব ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে ইসলামী আন্দোলন আয়োজিত মহাসমাবেশে সভাপতির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।

সমাবেশ উপলক্ষে গতকাল সারাদেশ থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আসেন নেতাকর্মীরা। ভোর হতেই মাঠে অবস্থান নেন তারা। সময় বাড়ার সাথে সাথে মাঠ পূর্ণ হয়ে সমাবেশ আশপাশের রাস্তায় ছড়িয়ে পড়ে। সকাল থেকেই আঞ্চলিক নেতারা সমাবেশে বক্তৃতা করেন। পরে দুপুর ২টায় শুরু হয় মূল সমাবেশ। সমাবেশে পিআর (সংখ্যানুপাতিক) নির্বাচনের দাবির পক্ষে থাকা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন ইসলামী দল, সমমনা অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন ধর্মীয় নেতারা বক্তৃতা করেন। দলগুলোর নেতারা বলেন, আগামী নির্বাচনে সংসদের উভয়কক্ষে অবশ্যই পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন দিতে হবে। যে দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সংসদে তাদের সেই অনুপাতে আসন থাকবে। এ ছাড়া জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন, গণহত্যাকারী ও তাদের দোসরদের বিচার এবং সংস্কার ছাড়া নির্বাচন কোনোভাবেই মানা হবে না।

চরমোনাই পীর বলেন, জুলাইয়ের আকাক্সক্ষা ছিল স্বৈরাচারের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করা। বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গঠন করা। এটা করতে গেলে রাষ্ট্র পরিচালনায় দেশের সব নাগরিকের মতামতের প্রতিফলন নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য পিআর পদ্ধতি-ই একমাত্র সমাধান।

পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের সাথে জড়িতদের বিচার দাবি করে চরমোনাই পীর বলেন, যারা সরাসরি ফৌজদারী অপরাধে জড়িত ছিল, তাদের বিচার করতে হবে। যারা অপরাধে সহায়তা করেছে, তাদেরও বিচার করতে হবে। বিচারের ক্ষেত্রে কিছুটা অগ্রগতি হলেও পতিত সরকারের অধিকাংশ মন্ত্রী-এমপি এবং নেতারা এখনো জেলের বাইরে। অনেকেই দেশের বাইরে থেকে উস্কানি দিয়ে যাচ্ছে। অবিলম্বে ফ্যাসিবাদের সাথে জড়িত সবাইকে শাস্তির আওতায় আনতেই হবে।

দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উল্লেখ করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, রাজনৈতিক চরিত্র, চাঁদাবাজির ক্ষেত্রে অবস্থার এখনো কোনো পরিবর্তন হয়নি। একটি দলের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছে। কারো নাম ধরে সমালোচনা করতে চাই না। তবে পুরোনো রাজনৈতিক অপসংস্কৃতি জিইয়ে রাখার চেষ্টা সহ্য করা হবে না। রাজনীতির নামে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজিকে অবশ্যই প্রতিহত করা হবে, ইনশাআল্লাহ।

মহাসমাবেশে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল অংশ নেন। আরো ছিলেন সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান ও মাওলানা আব্দুল হালিম। মহাসমাবেশে জামায়াতকে দাওয়াত দেয়ায় অধ্যাপক মুজিবুর রহমান ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমিরকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এত বড় সমাবেশে তিনি সব ইসলামী দলসহ অন্যান্য দলের নেতাদের অংশগ্রহণ করাতে পারায় তিনি এখন বীর হয়ে উঠেছেন।

জামায়াতের আমির ডা: শফিকুর রহমান ও পীর সাহেব চরমোনাই একসাথে বসার কারণেই ঐক্য গড়ে উঠেছে। আগামীতে এভাবে আরো বড় সমাবেশ হবে জানিয়ে তিনি বলেন, আগামী ১৯ জুলাই একই স্থানে জামায়াতের জন সমাবেশেও অনেক ইসলামী দলের নেতারা অংশ নেবেন। এভাবে সিসাঢালা প্রাচীরের মতো ঐক্যবদ্ধ হয়ে আগামীতে ইসলামকে বিজয়ী করতে হবে। আগামী নির্বাচনে কুরআনকে জাতীয় সংসদে নিতে হবে। পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবিতে তিনি বলেন, এ পদ্ধতিতে নির্বাচনের মাধ্যমেই সব ভোটারের মূল্যায়ন করা সম্ভব। এ সময় তিনি স্লোগান দেন-‘সব মতবাদ দেখা শেষ, ইসলামের বাংলাদেশ’।

সমাবেশে জামায়াতে ইসলামী সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি ছাড়া আগামী নির্বাচন দেশের মানুষ মানবে না। এ নিয়ে গ্রামে গ্রামে ঐক্য তৈরি হয়েছে। দৃশ্যমান সংস্কার সম্পন্ন করতে হবে। যারা বলেন ক্ষমতায় গেলে সংস্কার করবেন, তারা কিভাবে বুঝলেন তারা ক্ষমতায় যাবেন?’

মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কিছু কিছু আচরণ জনগণের মধ্যে সন্দেহ তৈরি করেছে। নির্বাচনের আগে নিজেদের নিরপেক্ষতা প্রমাণ করতে হবে। লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে। ভিন্ন মত থাকা সত্ত্বেও আজকে আমরা এক হয়েছি। এর মাধ্যমে ইসলামের ঐক্যের সম্ভাবনা তৈরি করেছে। পীর সাহেব চরমোনাইয়ের এ উদ্যোগ ইতিহাসের স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। জুলাই বিপ্লবকে কোনোভাবেই ব্যর্থ হতে দেবো না। খুনিদের দৃশ্যমান বিচার নিশ্চিত করতে হবে। গণ-অভ্যুত্থানে আহত ও নিহতদের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। জুলাই ঘোষণা অবিলম্বে বাস্তবায়ন করতে হবে। সরকারের ভেতরে কোনো ফ্যাসিবাদী থাকতে দেয়া হবে না।

সমাবেশে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির শায়েখ চরমোনাই মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম বলেন, বাংলাদেশের মানুষ কোনো দুর্নীতিবাজ ও চাঁদাবাজকে ক্ষমতায় যেতে দেবে না। একটি সর্বদলীয় সংসদ গঠন করতে পিআর হচ্ছে সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি। বিএনপিরও তা মেনে নেয়া উচিত। ক্ষমতায় গেলে সংস্কার করা হবে বিএনপির এমন বক্তব্যের প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, বিএনপিকে ক্ষমতায় যাওয়ার গ্যারান্টি কে দিয়েছে? আগামীতে ইসলামী শক্তি ক্ষমতায় আসবে।

সমাবেশে খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমাদ আবদুল কাদের, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা জালাল উদ্দীন আহমেদ, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মাওলানা সাখাওয়াত হোসেন রাজি, নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব মাওলানা মূসা বিন ইজহার, খেলাফত আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা ইউসুফ সাদিক হক্কানি, এবি পার্টির সভাপতি মজিবুর রহমান মঞ্জু, গণ-অধিকার পরিষদের সভাপতি নূরুল হক নূর, এনসিপির সদস্যসচিব মুহাম্মদ আখতার হোসাইন ও উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নির্মল রোজারিও, বোধিজ্ঞান ভাবনাকেন্দ্রের সভাপতি দয়াল কুমার বড়ুয়া, জাতীয় হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিকসহ ইসলামী আন্দোলনের যেসব নেতা বক্তৃতা করেছেন সবাই পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন দেয়ার দাবি জানান। মহাসমাবেশে ইসলামী আন্দোলনের যুগ্ম মহাসচিব ও মুখপাত্র মাওলানা গাজী আতাউর রহমান ১৬ দফা ঘোষণাপত্র পাঠ করেন।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নেতাদের মধ্যে বক্তৃতা করেন নায়েবে আমির মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ মাদানী, মুহাদ্দিস আব্দুল হক আজাদ, মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুস আহমদ, যুগ্ম মহাসচিব ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম, মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ, মাওলানা মুহাম্মদ ইমতিয়াজ আলম, মুফতি এছহাক মুহাম্মদ আবুল খায়ের, মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম, কেএম আতিকুর রহমান। মহাসমাবেশ পরিচালনা করেন দলের সাংগঠনিক সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) শাহ ইফতেখার তারিক ও সহপ্রচার সম্পাদক মাওলানা কেএম শরীয়াতুল্লাহ।