ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে ক্ষতিপূরণ চেয়ে জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবের কাছে দাবী করেছে ইরান


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : জুলাই ১, ২০২৫, ৯:২১ পূর্বাহ্ণ /
ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে ক্ষতিপূরণ চেয়ে জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবের কাছে দাবী করেছে ইরান

জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব -সংগৃহীত

  • ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে ক্ষতিপূরণ চেয়ে জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবের কাছে ইরান, আরাঘচি তার চিঠি জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদ ও নিরাপত্তা পরিষদের নথি হিসেবে বিতরণের জন্য মহাসচিবের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইয়্যেদ আব্বাস আরাঘচি জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব এবং নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতির কাছে এক চিঠি পাঠিয়ে ইসরাইল এবং যুক্তরাষ্ট্রকে ইরানের উপর সাম্প্রতিক হামলার মূল উসকানিদাতা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি এসব হামলার দায় স্বীকার করে ওয়াশিংটন ও তেলআবিবের কাছে থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ের বিষয়েও নিরাপত্তা পরিষদের কাছে দাবি জানান।

চিঠিতে আরাঘচি উল্লেখ করেন, ২০২৫ সালের ১৩ জুন থেকে ২৪ জুন পর্যন্ত ইসরাইল ইরানের ওপর যে সামরিক আগ্রাসন চালিয়েছে, তা জাতিসঙ্ঘ সনদের ২(৪) অনুচ্ছেদের সরাসরি লঙ্ঘন; এই হামলায় ইরানের আবাসিক ভবন, বেসামরিক নাগরিক ও অবকাঠামো ইচ্ছাকৃতভাবে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে, যা আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন; হামলার কারণে কয়েকটি হাসপাতাল ও ত্রাণকেন্দ্র আক্রান্ত হয়েছে, যা আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন; এছাড়া কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে হামলা চালিয়ে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবন ব্যাহত করার চেষ্টা করা হয়েছে; ফোরদো, আরাক, নাতাঞ্জ ও ইসফাহান শহরে আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) তত্ত্বাবধানে থাকা পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলা হয়েছে। এসব হামলা জাতিসংঘ সনদ, পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি (এনপিটি) এবং আইএইএ প্রস্তাবের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

তিনি বলেন, এসব একতরফা হামলা আন্তর্জাতিক আইনের একাধিক মৌলিক নীতি ভঙ্গ করেছে, যার মধ্যে আছে আন্তর্জাতিক নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার সংবিধির ৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জীবনধারার অধিকার; জাতিসঙ্ঘ সনদের ২(৪) অনুচ্ছেদ এবং ১৯৭০ সালের জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদের প্রস্তাব ২৬২৫ অনুযায়ী শক্তি প্রয়োগের ওপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা; ১৯৭৪ সালের জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদের প্রস্তাব ৩৩১৪ অনুযায়ী আগ্রাসনের ওপর নিষেধাজ্ঞা; ১৯৭০ সালের জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদের প্রস্তাব ২৬২৫ অনুযায়ী অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার অঙ্গীকার; অন্য দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদানের বাধ্যবাধকতা; জাতিসঙ্ঘ সনদের ১(২) অনুচ্ছেদ এবং আন্তর্জাতিক নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার সংবিধি ও অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার সংবিধির সাধারণ ১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ইরানি জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার।

আরাকচি চিঠিতে আরো উল্লেখ করেন, ২০২৫ সালের জুন মাসে জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন ১৩ জুনের বিবৃতিতে, সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন ১৭ জুনের বিবৃতিতে, ব্রিকস ২৫ জুনের বিবৃতিতে, ইউনাইটেড নেশনস চার্টার ফ্রেন্ডস গ্রুপ ১৪ ও ২৪ জুনের বিবৃতিতে, আরব লিগ ২১ জুনের বিবৃতিতে, গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিল ১৭ জুনের বিবৃতিতে এবং ইসলামিক কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (ওআইসি) ২২ জুনের প্রস্তাবে এই আগ্রাসনকে তীব্র নিন্দা জানিয়ে একে জাতিসঙ্ঘ সনদের গুরুতর লঙ্ঘন বলে ঘোষণা করেছে।

তিনি বলেন, জাতিসঙ্ঘ সনদের ২৪(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় নিরাপত্তা পরিষদের ওপর যে প্রাথমিক দায়িত্ব অর্পিত আছে, তা কার্যকর করতে হবে; জাতিসঙ্ঘ সনদের ৩৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নিরাপত্তা পরিষদকে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করতে হবে যে ইরানের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতার বিরুদ্ধে আগ্রাসন চালিয়েছে ইসরাইল ; ইসরাইল এবং যুক্তরাষ্ট্রকে আগ্রাসনের মূল হোতা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে ক্ষতিপূরণসহ তাদের দায়িত্ব নির্ধারণ করতে হবে; এই অপরাধের দায়ীদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে এবং এ ধরনের জঘন্য অপরাধ ভবিষ্যতে যেন পুনরাবৃত্তি না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে, যাতে নিরাপত্তা পরিষদ আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব পালনে সক্ষম হয়।

আরাঘচি সতর্ক করে বলেন, যারা এই আগ্রাসনের নির্দেশ দিয়েছেন, সেই রাজনৈতিক ও সামরিক নেতারাও প্রচলিত আন্তর্জাতিক আইনের ভিত্তিতে আগ্রাসনের আন্তর্জাতিক অপরাধের জন্য ব্যক্তিগতভাবে দায়ী; এই আগ্রাসন আন্তর্জাতিক আইনের মৌলিক ভিত্তির ওপর সরাসরি আঘাত করেছে এবং এর উপেক্ষা ও এর থেকে উদ্ভূত আইনি পরিণতি এড়িয়ে গেলে জাতিসঙ্ঘ ব্যবস্থার বিশ্বাসযোগ্যতা ধ্বংস হবে, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে আইনের শাসনকে হুমকির মুখে ফেলবে এবং আমাদের অঞ্চল, মধ্যপ্রাচ্যসহ পুরো বিশ্বে ভবিষ্যতে অরাজকতা ও আইনহীনতা সৃষ্টি করবে।

পরিশেষে, আরাকচি তার চিঠি জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদ ও নিরাপত্তা পরিষদের নথি হিসেবে বিতরণের জন্য মহাসচিবের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।