রাজধানীর ওসমানী মিলনায়তনে জাতীয় হিফজুল কুরআন ও সিরাত প্রতিযোগিতার পুরস্কার তুলে দিচ্ছেন ধর্ম উপদেষ্টা আ. ফ. ম খালিদ হোসেন।
ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছেন, ইমামরা সমাজে অত্যন্ত সম্মানিত ব্যক্তি। নৈতিকতা ও আদর্শিক মূল্যবোধের বিকাশে তাদের অবদান বিশাল। জনগণের সাথে তাদের সংযোগ সরাসরি। তারা সামাজিক শক্তির প্রতিভূ, তাদের ক্ষমতায়িত করা গেলে সমাজ পরিবর্তনের ধারাকে এগিয়ে নেয়া সম্ভব। এজন্য সরকার ইমাম-মুয়াজ্জিনদের স্বাবলম্বী করতে উদ্যোগ নিয়েছে। মসজিদ ব্যবস্থাপনায় নীতিমালা করা হচ্ছে। ইমাম-মুয়াজ্জিনদের বেতনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। পাশাপাশি তাদের ব্যবসায় উৎসাহ দেয়া হচ্ছে।
গতকাল রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত জাতীয় হিফজুল কুরআন ও সিরাত প্রতিযোগিতা এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ইমামদের জাতীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, ইমাম-মুয়াজ্জিন কল্যাণ ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠার (২০০১) পর থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত ৬৩ হাজার ১৯৭ জন ইমাম ও মুয়াজ্জিনের মধ্যে সুদমুক্ত ক্ষুদ্রঋণ ও অনুদান হিসেবে ৩৭ কোটি ৯২ লাখ ৭৩ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৭ কোটি টাকা উদ্যোক্তাদের ঋণ এবং ২০ কোটি ৯১ লাখ টাকা অফেরতযোগ্য এককালীন অনুদান দেয়া হয়েছে। ২০২৪-২৫ সালে বিতরণ করা হয়েছে ৪ কোটি ১১ লাখ টাকা।
তিনি বলেন, ইসলামের অপব্যাখ্যাকে রুখে দেয়া, সঠিক ব্যাখ্যা তুলে ধরা এবং সমাজে শান্তি, সম্প্রীতি ও সহনশীলতা প্রতিষ্ঠার এখন গুরুত্বপূর্ণ সময়। আমরা চাই এক শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ-যেখানে মসজিদ হবে জ্ঞানের কেন্দ্র, ইমাম হবেন নেতৃত্বের দিশারি। প্রতি বছর আমাদের প্রতিযোগীরা আন্তর্জাতিক হিফজ ও কিরাত প্রতিযোগিতায় যে সাফল্য অর্জন করছে, তা গোটা জাতির জন্য গর্বের বিষয়। এটি প্রমাণ করে-আমাদের সন্তানদের মধ্যে কুরআনের আলো জ্বলছে। এখন দরকার এই আলোর ব্যবস্থাপনা-আর সেই কাজেই ইমামদের প্রশিক্ষণ, উৎসাহ ও অংশগ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ। এ বছরের হজ ব্যবস্থাপনা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হওয়ায় উপদেষ্টা পরিষদ থেকে ধর্ম মন্ত্রণালয়কে ধন্যবাদ জানানো হয়েছে। আগামী বছর আমরা আরো সুন্দরভাবে হজ ব্যবস্থাপনা করতে চাই। বিভিন্ন টিমে নাম অন্তর্ভুক্ত করে ডলার কামানোর প্রতিযোগিতা কমাতে চাই। এ ছাড়া সরকারি ব্যবস্থাপনার হাজীর সংখ্যা বাড়াতে চাই। এজন্য ইমামদের ভূমিকা রাখার সুযোগ রয়েছে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন, ধর্মসচিব এ কে এম আফতাব হোসেন প্রামাণিক। সভাপতিত্ব করেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক (সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ) আ: ছালাম খান। অনুষ্ঠানে আরো বক্তৃতা করেন, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বোর্ড অব গভর্নরসের গভর্নর মাওলানা সৈয়দ মোহাম্মদ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানি, ড. মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী, মাওলানা শাহ মো: নেছারুল হক প্রমুখ। দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মুফতি আবদুল মালেক। সম্মেলনে হিফজুল কুরআন ও সিরাত প্রতিযোগিতার জাতীয় পর্যায়ের বিজয়ী তিন গ্রুপের ৯ জন করে প্রতিযোগী এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ইমামদের মধ্যে জাতীয় পর্যায়ে তিনজন শ্রেষ্ঠ ইমাম, বিভাগীয় পর্যায়ে ২৪ জন, জেলা পর্যায়ে ১৯২ জন ইমাম এবং ৬৪ জন শ্রেষ্ঠ খামারি ইমামকে নগদ অর্থ, ক্রেস্ট ও সনদপত্র প্রদান করা হয়। হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতায় প্রথম পুরস্কার দুই লাখ টাকা, দ্বিতীয় ১.৫ লাখ, তৃতীয় এক লাখ টাকা এবং সিরাত প্রতিযোগিতার প্রথম পুরস্কার ৫০ হাজার, দ্বিতীয় ৪৫ হাজার এবং তৃতীয় ৪০ হাজার টাকার চেক দেয়া হয়। এ ছাড়াও শ্রেষ্ঠ ইমাম ও খামারি ইমামদের ক্ষেত্রেও যথা নিয়মে নগদ অর্থ, ক্রেস্ট ও সনদপত্র দেয়া হয়।
আপনার মতামত লিখুন :