ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর লাগাতার বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় মৃত্যুর মিছিল থামছে না। প্রতিদিনের মতোই একের পর এক হামলায় প্রাণ হারাচ্ছে নারী, শিশু ও বেসামরিক মানুষ। সর্বশেষ হামলার পর গাজায় মোট নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৮ হাজার ২৬ জনে, যার অর্ধেকের বেশি নারী ও শিশু। সোমবার (১৪ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলের সামরিক অভিযান এখন পর্যন্ত ফিলিস্তিনিদের জন্য সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ে পরিণত হয়েছে। সোমবার, ১৪ জুলাই সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানায়, গত রবিবার একদিনেই ইসরায়েলি হামলায় প্রাণ গেছে কমপক্ষে ৯৫ জন ফিলিস্তিনির। এসব হামলা হয়েছে গাজার জনবহুল বাজার, পানিকেন্দ্র ও শরণার্থী শিবিরে। ইসরায়েল দাবি করছে, তারা ‘যোদ্ধাদের’ লক্ষ্যবস্তু করছে, কিন্তু বাস্তবে ক্ষেপণাস্ত্র গিয়ে পড়ছে নিরীহ জনগণের ওপর।
আল জাজিরা জানায়, রবিবার গাজার একটি জনবহুল বাজারে চালানো হামলায় নিহত হন অন্তত ১৭ জন। তাঁদের মধ্যে একজন ছিলেন গাজার সুপরিচিত চিকিৎসক আহমেদ কান্দিল। মধ্য গাজার নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে একটি পানি সংগ্রহস্থলে চালানো আরেকটি হামলায় প্রাণ গেছে অন্তত ১০ জন শিশুর। এ সময় আহত হন আরও অন্তত ১৭ জন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শিশুরা পানি সংগ্রহের লাইনে দাঁড়িয়েছিল, তখনই সেখানেই পড়ে ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র। সেনাবাহিনী দাবি করেছে, তাদের লক্ষ্য ছিল একজন ফিলিস্তিনি যোদ্ধা; কিন্তু ‘কারিগরি ত্রুটির’ কারণে ক্ষেপণাস্ত্র লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। তবে এই দাবির পক্ষে কোনো স্বাধীন উৎস থেকে সত্যতা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি।
গাজায় বর্তমানে পানির তীব্র সংকট চলছে। জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ থাকায় বেশিরভাগ পানিশোধন ও নিষ্কাশন কেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে মানুষকে বাধ্য হয়ে নিরাপত্তাহীন ও ঝুঁকিপূর্ণ পথ পেরিয়ে কিছু নির্দিষ্ট কেন্দ্র থেকে পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতেই শিশুরা যখন লাইনে দাঁড়ায়, তখনই হামলার শিকার হয়।
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, চলমান এই আগ্রাসনে মোট মৃতের সংখ্যা ৫৮,০২৬ জন, যার মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যা ৫০ শতাংশের বেশি। আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১ লাখ ৩৮ হাজার ৫০০ জন।
জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ জানিয়েছে, শুধু জুন মাসেই গাজায় ৫,৮০০-এর বেশি শিশু অপুষ্টিতে আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে ১,০০০ শিশুর অবস্থা আশঙ্কাজনক। রবিবারও অপুষ্টিজনিত কারণে আরও একটি শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
ইউনিসেফ এক বিবৃতিতে বলেছে, “শিশুদের দেহ গলে যাচ্ছে। এটি শুধু একটি পুষ্টি সংকট নয়, এটি শিশুদের বেঁচে থাকার জরুরি অবস্থা।” তথ্যসূত্র : আল-জাজিরা
আপনার মতামত লিখুন :