অব্যাহত অভিযানের পরও বন্ধ হয়নি বিদ্যুৎ চুরি


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : জুলাই ১৭, ২০২৫, ৭:৩৩ পূর্বাহ্ণ /
অব্যাহত অভিযানের পরও বন্ধ হয়নি বিদ্যুৎ চুরি

অব্যাহত অভিযানের পরও গ্রাহক পর্যায়ে বন্ধ হয়নি বিদ্যুৎ চুরি। আবাসিক বাড়িঘর, শিল্প-কারখানা, ফুটপাত- সবখানেই বিদ্যুৎ চুরি চলছে। তবে সারা দেশে একসময়ে যেমন প্রকটভাবে বিদ্যুৎ চুরি হতো, সেটা কমে আসছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে সরকারি কোম্পানি ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি)। এ কোম্পানি গত এক বছরে টাস্কফোর্স অভিযান চালিয়ে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা বিদ্যুৎ চুরির জরিমানা আদায় করেছে।

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত বছর জুলাই থেকে চলতি বছর জুন পর্যন্ত ১৩৫টি অভিযান চালিয়েছে ডিপিডিসির স্পেশাল টাস্কফোর্স। এ সময় তারা ১২৪টি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে; পাঁচজন গ্রাহকের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে; অবৈধ বিদ্যুৎ ব্যবহারের দায়ে ১৩৭টি মালামাল জব্দ করেছে। এক বছরে ১২ লাখেরও বেশি ইউনিট বিদ্যুৎ চুরি হয়েছে বলে টাস্কফোর্স তাদের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে। বিদ্যুৎ চুরির দায়ে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা জরিমানা আদায় করা ছাড়াও ২০২৪ সালের জুলাই থেকে এ বছর জুন পর্যন্ত এক বছরে ১১ কোটি ৩৮ লাখ ৭০ হাজার টাকা বকেয়া বিদ্যুৎ বিল আদায় করেছে টাস্কফোর্স।

বছরের পর বছর নানা ধরনের অভিযান পরিচালনা করা হলেও কেন বিদ্যুৎ চুরি কমানো যাচ্ছে না বা ডিপিডিসির করণীয় কী- জানতে চাইলে বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা) এবং ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক অতিরিক্ত দায়িত্ব নূর আহমেদ আমাদের সময়কে বলেন, গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুৎ চুরি আগে থেকেই ছিল। তবে এগুলো কমিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। আমরা আরও জোরালো অভিযান চালিয়ে যাব, যাতে বিদ্যুৎ চুরি শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা যায়।

ডিপিডিসির টাস্কফোর্স অভিযানের সাফল্য হিসেবে ছয়টি চুরির ঘটনা উল্লেখ করেছে। সেখানে দেখা যায়, জিগাতলায় মেসার্স জীবন আইসক্রিম কারখানায় ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা পেনাল বিল করা হয়েছে। সিদ্ধিরগঞ্জের মেসার্স রায়হান প্যাকেজিংকে ৪৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা, পোস্তগোলার দুলাল খানের আবাসিক স্থাপনায় ৪৫ লাখ ৫০ হাজার, বাংলাবাজার এলাকার মেসার্স মনু সিনেমা হলের বাণিজ্যিক স্থাপনায় ৪১ লাখ ৫২ হাজার টাকা, রমনা দপ্তরের গ্রাহক আব্দুল কাদের ফারুকের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে ২৭ লাখ টাকা, মগবাজারের গ্রাহক মিসেস করিমন নেছার আবাসিক স্থাপনায় ২৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

বিদ্যুৎ চুরি কেন কমছে না জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিপিডিসির একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা আমাদের সময়কে বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং আইনশৃঙ্খলার কিছু অবনতির কারণে সাম্প্রতিক সময়ে বিদ্যুৎ চুরি অনেকটাই বেড়েছে। বিভিন্ন ফুটপাতে আগে বিদ্যুৎ ব্যবহার হতো কোনো নির্দিষ্ট মিটার থেকে, ইদানীং সেটা জোর করে করা হচ্ছে। এ ছাড়া রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে অনেক এলাকায় নিয়মিত অভিযান চালানো বা অ্যাকশন নেওয়া যাচ্ছে না। ফলে চুরি কিছুটা বেড়েছে।

তিনি আরও বলেন, ডিপিডিসিকে সব সময় পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে অভিযান চালাতে হয়। পরিস্থিতি যত স্বাভাবিক হবে ততই বেশি করে অভিযান পরিচালনা করা হবে, তাতে চুরির পরিমাণ কমে যাবে। সবচেয়ে জরুরি হলো, সব গ্রাহকের প্রিপেইড মিটার বসিয়ে দেওয়া। সে কাজ চলছে।

উল্লেখ্য, ডিপিডিসি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি। ২০০৫ সালের ২৫ অক্টোবর ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি) কোম্পানি আইন ১৯৯৪-এর অধীনে গঠিত হয়। অপারেশন শুরু করে ২০০৭ সালের ১৪ মে থেকে। তৎকালীন ডেসা থেকে সব সম্পদ ও দায়-দায়িত্ব গ্রহণ করে ১ জুলাই ২০০৮ থেকে বাণিজ্যিকভাবে অপারেশন শুরু করে। ৬ লাখ ৫৫ হাজার ৯০৮ জন গ্রাহক নিয়ে যাত্রা শুরু হলেও এখন গ্রাহকের সংখ্যা ১৮ লাখ ৭২ হাজার ৩৪২ জন। ডিপিডিসিতে একসময় ডাবল ডিজিটের সিস্টেম লস থাকলেও সেটা এখন সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনা হয়েছে বলে কোম্পানি সূত্রে জানা গেছে।