ইয়ারলুং জাংবো নদীতে ৬০ গিগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বাঁধ নির্মাণকাজের উদ্বোধন চীনের


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : জুলাই ২০, ২০২৫, ৮:৩৭ পূর্বাহ্ণ /
ইয়ারলুং জাংবো নদীতে ৬০ গিগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বাঁধ নির্মাণকাজের উদ্বোধন চীনের

ব্রহ্মপুত্র নদীতে বিশ্বের বৃহত্তম বাঁধের নির্মাণকাজ শুরুর ঘোষণা দিয়েছে চীন। গতকাল শনিবার চীনা প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং এ ঘোষণা দেন। চীনা সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, এদিন তিব্বতের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের ইয়ারলুং জাংবো নদীতে ৬০ গিগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন এ পানিবিদ্যুৎ বাঁধ নির্মাণকাজের উদ্বোধন করা হয়েছে। চীনের ইয়ারলুং জাংবো নদীই ভারত ও বাংলাদেশে ব্রহ্মপুত্র নামে পরিচিত, যার ওপর এই অঞ্চলের কোটি কোটি মানুষের জীবন-জীবিকা নির্ভরশীল।

চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, তিব্বতের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের নিংচি এলাকার মিডগ কাউন্টিতে নির্মিত হচ্ছে এই মেগা বাঁধ। গত ২০২০ সালের নভেম্বরে চীন এ প্রকল্পের পরিকল্পনার কথা প্রকাশ করে এবং ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে এর অনুমোদন দেয়। এরপর থেকেই নির্মাণকাজ শুরু করার তোড়জোড় চলছিল, যা এখন আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে।

চীনের সরকারি বার্তা সংস্থা সিনহুয়ার মতে, প্রকল্পটি শুধু তিব্বতের বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণে নয়, বরং উৎপাদিত বিদ্যুৎ চীনের অন্যান্য অংশেও সরবরাহ করা হবে। প্রকল্পে ৫টি পৃথক পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে, যার জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১.২ ট্রিলিয়ন ইউয়ান (১৬৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার)। বিশাল এই প্রকল্প শেষ হলে এটি চীনের ইয়াংসি নদীতে নির্মিত ‘থ্রি গর্জেস ড্যাম’-কেও ছাড়িয়ে যেতে পারে।

তবে এই প্রকল্প নিয়ে শুরু থেকেই গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভারত ও বাংলাদেশসহ নদীর নি¤œপ্রবাহে অবস্থিত দেশগুলো। নদীর উজানে বাঁধ নির্মাণের ফলে পানির প্রবাহে রুদ্ধতা সৃষ্টি হতে পারে, যা নি¤œভূমিতে বসবাসকারী কোটি কোটি মানুষের জন্য ভয়াবহ পরিবেশগত ও অর্থনৈতিক সংকট ডেকে আনতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ভারত সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা এ বিষয়ে চীনের কাছে তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছে এবং প্রকল্পটির অগ্রগতি নজরদারির আওতায় রেখেছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ব্রহ্মপুত্রের নি¤œপ্রবাহে থাকা দেশগুলোর স্বার্থ যাতে ব্যাহত না হয়, তা নিশ্চিত করতে চীনকে বলা হয়েছে। জবাবে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, এই প্রকল্পের ফলে কোনও ধরনের নেতিবাচক প্রভাব নি¤œপ্রবাহে পড়বে না, এবং তারা প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখবে।

তবে পরিবেশবিদ এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলো চীনের এই প্রকল্পের কড়া সমালোচনা করেছে। তাদের মতে, তিব্বতের মতো সংবেদনশীল ও হিমবাহ-নির্ভর অঞ্চলে এমন প্রকল্প পরিবেশের ওপর বিপর্যয় ডেকে আনবে। তারা সতর্ক করেছেন, ব্রহ্মপুত্রের মতো গুরুত্বপূর্ণ নদীর উৎস মুখে বাধা সৃষ্টি করা হলে তা শুধু পরিবেশ নয়, রাজনৈতিক সম্পর্কেও দীর্ঘমেয়াদী উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে।

তিব্বত মালভূমি আয়তনে প্রায় ২৫ লাখ বর্গকিলোমিটার। এটি বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মিঠাপানির উৎস এলাকা এবং দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বেশ কয়েকটি নদীর জন্মভূমি। এখানকার হিমবাহ ও ঝর্ণা থেকে উৎপন্ন পানি ভারত, বাংলাদেশ, চীন ও ভুটানের প্রায় ১৮০ কোটি মানুষকে খাবার পানি ও সেচের সুবিধা দিয়ে থাকে। এ বাস্তবতায় চীনের এই বাঁধ নির্মাণ পুরো অঞ্চলের পানিস্বত্ব ও পরিবেশগত ভারসাম্যের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা বাড়ছে।বাংলাদেশ খাবার ডেলিভারি

চীনের এই উদ্যোগ শুধু বিদ্যুৎ উৎপাদনের কৌশলগত পরিকল্পনার অংশ নয়, এটি দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক ভূ-রাজনীতি ও নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে নতুন করে নাড়িয়ে দিতে পারে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। এখন দেখার বিষয়, এই মেগা প্রকল্পের বাস্তবায়ন কীভাবে এগোয় এবং এর অভিঘাত কী রূপ নেয় ভারত, বাংলাদেশসহ সমগ্র অঞ্চলের জন্য। এ বিষয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এখনও কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি।