মার্কিন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের স্বীকারোক্তিঃ ৭০ শতাংশ ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রই ইসরাইলে সফল ভাবে আঘাত হেনেছে


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : জুলাই ২৬, ২০২৫, ১:১৮ অপরাহ্ণ /
মার্কিন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের স্বীকারোক্তিঃ ৭০ শতাংশ ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রই ইসরাইলে সফল ভাবে আঘাত হেনেছে

ইসরাইলে ইরানের ক্ষেপনাস্ত্র হামলা -সংগৃহীত

জিনসা নামে পরিচিত সংস্থাটি স্পষ্ট ভাষায় বলেছে, ১২ দিনের ইরান-ইসরাইল যুদ্ধে ইরানের ছোড়া ৫৭৪টি ক্ষেপণাস্ত্রের মধ্যে মাত্র ২০১টি থামাতে পেরেছে ইসরাইল ও তার মিত্ররা। ইসরাইলের সেন্সরশিপ আর নিষেধাজ্ঞার জটিল পাঁকচক্র ভেদ করে এক বিস্ময়কর তথ্য উঠে এসেছে আমেরিকায় অবস্থিত একটি ইহুদি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদনে।

‘জিউইশ ইনস্টিটিউট ফর ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাফেয়ার্স’ সংক্ষেপে জিনসা নামে পরিচিত সংস্থাটি স্পষ্ট ভাষায় বলেছে, ১২ দিনের ইরান-ইসরাইল যুদ্ধে ইরানের ছোড়া ৫৭৪টি ক্ষেপণাস্ত্রের মধ্যে মাত্র ২০১টি থামাতে পেরেছে ইসরাইল ও তার মিত্ররা। অর্থাৎ প্রায় ৭০ শতাংশ ক্ষেপণাস্ত্রই লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে।

এই তথ্য প্রকাশ করেছে ইরানের অনলাইন সংবাদ মাধ্যম হামশাহরি কায়হান। ইরানি সংবাদ সংস্থাটি আরো জানায়, যদিও ইসরাইলের সরকারি ও সামরিক মহল বারবার দাবি করেছে যে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রের খুব কমই আঘাত হেনেছে—অনুমান করা হচ্ছিল তা ১০ শতাংশেরও কম—তবে জিনসার গবেষণা এর পুরো ভিন্ন চিত্র তুলে ধরেছে। জিনসার প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল মিলে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে ব্যবহার করেছে মার্কিন নির্মিত থাড, ইসরাইলের অ্যারো-২ এবং অ্যারো-৩ ক্ষেপণাস্ত্র বিধ্বংসী সিস্টেম। কিন্তু এত বড় প্রযুক্তি ব্যবস্থাপনা থাকা সত্ত্বেও তারা ঠেকাতে পেরেছে মোটে ২০১টি ক্ষেপণাস্ত্র। বাকি ক্ষেপণাস্ত্রগুলো আঘাত হেনেছে ইসরাইলের বিভিন্ন স্থানে।

এই সময়ের মধ্যে শুধু থাড ইন্টারসেপ্টরই বা ক্ষেপণাস্ত্র বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে ৯২টি। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রের মোট মজুদের ১৪ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রের মোট থাড ইন্টারসেপ্টর ছিল ৬৩২টি। এই মজুতের এত বড় একটি অংশ মাত্র ১২ দিনে ব্যবহার হয়ে গেছে। এর মধ্য দিয়ে ওয়াশিংটনের মিত্র-সমর্থনের সক্ষমতা তুলে ধরার পাশাপাশি মার্কিন মজুদের নির্ভরযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে।

জিনসার পররাষ্ট্রনীতি পরিচালক অ্যারি সিকোরল বলেন, “ব্যাপক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ব্যবহার সত্ত্বেও ইসরায়েল মাত্র ২০১টি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে পেরেছে। এটা প্রযুক্তিগত দিক থেকে কিছুটা সফলতা হলেও বৃহৎ পরিসরে দেখতে গেলে তা প্রতিরোধ ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতাও ফুটিয়ে তুলেছে।” তিনি আরো বলেন, “যদি এ ধরনের বহুমুখী যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র—দু’জনের প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য হুমকি হয়ে উঠবে।” সিকোরল আরও সতর্ক করে বলেন, এই ১২ দিনের যুদ্ধ বিশ্বকে বার্তা দিয়েছে। বিশেষ করে ইরান, রাশিয়া ও চীন এবং—যুক্তরাষ্ট্রকে অবিলম্বে তার মজুদ পুনর্গঠন শুরু করতে হবে।

জিনসার বিশ্লেষকরা আরো উল্লেখ করেন যে, ক্ষেপণাস্ত্র বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির গতি অত্যন্ত ধীর, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের লকহিড মার্টিন যে থাড ইন্টারসেপ্টর তৈরি করে, তার উৎপাদন প্রক্রিয়া অত্যন্ত সময়সাপেক্ষ। তাদের অনুমান, পূর্ণ মজুদ পুনর্গঠন করতে ৩ থেকে ৮ বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। প্রযুক্তিগত দিক থেকেও জিনসা এক জটিল বাস্তবতাও তুলে ধরেছে। জিনসা জানায়, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র যে হারে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করছে, তা দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের ক্ষেত্রে এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাগুলোর কার্যকারিতা নিয়েও প্রশ্ন তুলছে।

মার্কিন সেনাবাহিনীর হিসেব অনুযায়ী, প্রতিটি থাড ইন্টারসেপ্টরের দাম প্রায় ১২.৭ মিলিয়ন ডলার। ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র ১১টি নতুন ইন্টারসেপ্টর পেয়েছে, এবং বছরের শেষ নাগাদ আর ১২টি পাওয়ার কথা রয়েছে। এই সাপ্লাই লাইন এত ধীর যে বর্তমান যুদ্ধ পরিস্থিতিতে তা উদ্বেগজনক। যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী দৈনিক ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল এক বিশ্লেষণে জানায়, “যদি ইরান আর কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়ত, তবে ইসরাইলের অ্যারো-৩ প্রতিরক্ষা সিস্টেমের পুরো মজুদই নিঃশেষ হয়ে যেত।”

এই যুদ্ধে মার্কিন সামরিক জোগান ব্যবস্থার বড় ফাঁকফোকর প্রকাশ পেয়েছে। এ থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায় ভবিষ্যতের আধুনিক ও বৃহৎ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা প্রতিরোধে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তুতি কতটা অপ্রতুল।

মার্কিন সেনাবাহিনীর মুখপত্র স্টার্স অ্যান্ড স্ট্রাইপস নিজস্ব প্রতিবেদনে জানায়, “ইসরায়েলকে রক্ষা করতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্র থাড ক্ষেপণাস্ত্রের ১৪ শতাংশ ব্যবহার করেছে। এই ঘাটতি পুরণ করতে ৩ থেকে ৮ বছর পর্যন্ত সময় লাগবে। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রকে এর জন্য বড়সড় সামরিক মূল্য দিতে হচ্ছে।” এই বাস্তবতা কেবল ইসরাইল নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকেই একটা কঠিন প্রশ্নের সামনে দাঁড় করিয়েছে। যদি যুদ্ধ আরও দীর্ঘ হতো, আরও কয়েকশ ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হতো—তবে কী হতো যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের প্রতিরক্ষার পরিণতি?

এই প্রশ্ন এখন আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের টেবিলে।