‘আয়া সোফিয়া’ দর্শনার্থীদের জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) নিরাপত্তা ব্যবস্থা চালু করলো


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : জুলাই ২৬, ২০২৫, ১১:৫৩ অপরাহ্ণ /
‘আয়া সোফিয়া’ দর্শনার্থীদের জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) নিরাপত্তা ব্যবস্থা চালু করলো

ইস্তাম্বুল বিজয়ের পর হায়া সোফিয়াকে মসজিদে রূপান্তর করা হয়। ১৯৩৪ সালে তুর্কি মন্ত্রিসভার আদেশে এটি জাদুঘরে রূপান্তরিত হয়। এরপর দীর্ঘ ৮৬ বছর পর, ২০২০ সালের ১০ জুলাই রাষ্ট্রপতির আদেশে এটি পুনরায় মসজিদ হিসেবে ইবাদতের জন্য খুলে দেওয়া হয়। তারপর থেকেই স্থাপত্য, ইতিহাস এবং নিরাপত্তা রক্ষায় প্রযুক্তিনির্ভর নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।

পনেরো শতাব্দীর ইতিহাসের সাক্ষী হায়া সোফিয়া আজ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) প্রযুক্তি দিয়ে সজ্জিত। এর মাধ্যমে দর্শনার্থীদের অভিজ্ঞতা যেমন সমৃদ্ধ হচ্ছে, তেমনি নিশ্চিত হচ্ছে পবিত্রতা ও ঐতিহাসিক স্বাতন্ত্র্যের সুরক্ষা।

ইস্তাম্বুল বিজয়ের পর হায়া সোফিয়াকে মসজিদে রূপান্তর করা হয়। ১৯৩৪ সালে তুর্কি মন্ত্রিসভার আদেশে এটি জাদুঘরে রূপান্তরিত হয়। এরপর দীর্ঘ ৮৬ বছর পর, ২০২০ সালের ১০ জুলাই রাষ্ট্রপতির আদেশে এটি পুনরায় মসজিদ হিসেবে ইবাদতের জন্য খুলে দেওয়া হয়। তারপর থেকেই স্থাপত্য, ইতিহাস এবং নিরাপত্তা রক্ষায় প্রযুক্তিনির্ভর নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।

তুরস্কের সংস্কৃতি ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ ভাক্‌ফ অধিদপ্তর স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক দর্শনার্থীদের জন্য নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যময় পরিবেশ নিশ্চিত করতে এবং মসজিদের কাঠামোগত অখণ্ডতা বজায় রাখতে একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

ইস্তাম্বুল ভাক্‌ফ প্রথম অঞ্চলের উপপরিচালক লেভেন্ট চেতিন জানান, “হায়া সোফিয়াকে ইবাদতের জন্য পুনরায় চালু করা হয়েছে পাঁচ বছর আগে। বর্তমানে এখানে প্রায় ৩০০ জন কর্মী নিরাপত্তা, পরিচ্ছন্নতা ও দর্শনার্থী ব্যবস্থাপনায় কাজ করছেন।”

তিনি আরও বলেন, ২০২০ সালের ১৫ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হওয়া পূর্ণাঙ্গ দর্শনার্থী ব্যবস্থাপনার আওতায় গ্যালারি ফ্লোর দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়াও স্থাপত্য, মোজাইক ও অন্যান্য ঐতিহাসিক নিদর্শন রক্ষায় উন্নত নিরাপত্তা ব্যবস্থা যুক্ত করা হয়েছে। দর্শনার্থী ও নামাজিদের প্রবেশপথ পৃথক হওয়ায় আর দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় না।

চেতিন যোগ করেন, “এখন মসজিদে প্রবেশ ও প্রস্থান আগের তুলনায় অনেক সহজ হয়েছে। দর্শনার্থীরাও গ্যালারির ঐতিহাসিক শিল্পকর্মগুলো আরও নিবিড়ভাবে উপভোগ করতে পারছেন।”

২০২৪ সালের ১৫ জানুয়ারি চালু হওয়া নতুন অডিও গাইড ব্যবস্থায় ২৩টি ভাষায় ব্যাখ্যা পাওয়া যাচ্ছে। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “মোজাইক, উসমানীয় পাঠাগার ও মুয়াজ্জিন মিম্বারসহ বিভিন্ন ঐতিহাসিক উপাদান সম্পর্কে দর্শনার্থীরা নিজেদের মোবাইল হেডফোন বা যেকোনো হেডফোনে তথ্য শুনতে পারছেন।”

এর ফলে দর্শনার্থীরা নিজেদের মাতৃভাষায় বিস্তারিত ও মানসম্মত তথ্য পেয়ে যেমন উপকৃত হচ্ছেন, তেমনি মুসল্লিরাও পাচ্ছেন এক মনোযোগী ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ইবাদতের সুযোগ।

চেতিনের ভাষায়, “দর্শনার্থীদের প্রতিক্রিয়াও অত্যন্ত ইতিবাচক। ভিড় কমে যাওয়ায় মসজিদের পরিবেশ আরও প্রশান্ত ও সম্মানজনক মনে হয়।”

নিরাপত্তা ব্যবস্থায় যুক্ত করা হয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-সমর্থিত নতুন প্রযুক্তি। তিনি জানান, “এই সিস্টেম সম্ভাব্য হুমকি শনাক্ত করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সতর্কবার্তা দিতে পারে এবং নিরাপত্তাকর্মীদের তাৎক্ষণিক সহায়তা করে। ক্যামেরার সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে, ফলে আগেভাগেই যেকোনো ঝুঁকি শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে।”

তিনি আরও বলেন, “কেউ যদি মসজিদের নিষিদ্ধ অংশে প্রবেশের চেষ্টা করেন, তাহলে সিস্টেম স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংশ্লিষ্ট কর্মীদের স্ক্রিনে বার্তা পাঠায়। এতে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা সম্ভব হয়, যা মসজিদের গঠন রক্ষায় অত্যন্ত কার্যকর।”

পুনরুদ্ধার কার্যক্রম সম্পর্কেও বিস্তারিত তুলে ধরেন চেতিন। তিনি জানান, “আমরা ইতোমধ্যে সমাধি, সিবিয়ান মক্তব (উসমানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়) এবং মুবাককিথানা (সময় পরিমাপক কক্ষ) পুনরুদ্ধার করেছি।”

ডিজিটাল টুইন তৈরির অংশ হিসেবে বৈজ্ঞানিক পরিষদ মসজিদের মূল গম্বুজ ও পার্শ্ব গম্বুজের কাঠামোগত স্থিতিশীলতা নিয়ে হস্তক্ষেপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাঁর ভাষায়, “গম্বুজে এবং পার্শ্ব গম্বুজে কাজ শুরু হয়েছে। সুলতান দ্বিতীয় বায়েজিদের মিনার পুনরুদ্ধার প্রকল্প প্রায় শেষ পর্যায়ে। ধাপে ধাপে আমাদের সব পুনরুদ্ধার কার্যক্রম এগিয়ে চলছে।”

সূত্র: ডেইলি সাবাহ, তুরস্ক