গ্যাস সংকট নিরসনে নানা মূখী উদ্যোগ গ্রহন করছে পেট্রোবাংলা। দেশীয় গ্যাসের অনুসন্ধান ও উৎপাদন কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। ৫০ কূপ খনন প্রকল্পের পাশাপাশি ১০০ কূপ খনন প্রকল্পের কার্যক্রম দ্রুত এগিয়ে চলছে। পেট্রোবাংলার সূত্র থেকে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
জ্বালানী বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে গ্যাসের উৎপাদন কমতে কমতে ১৫ বছর আগের জায়গায় চলে গেছে। গ্যাস অনুসন্ধান জোরদারের কোনো বিকল্প নেই। গ্যাস চুরি ও অপচয় কমাতে হবে। সঞ্চালন ও বিতরণ মিলে কারিগরি ক্ষতি প্রায় ১০ শতাংশ, যা অনেক বেশি। সঞ্চালন লাইনে কারিগরি ক্ষতি কোনোভাবেই ২ শতাংশ হওয়ার কথা নয়। এটা ভালো করে দেখা উচিত।
পেট্রোবাংলার পরিচালক (অপরেশন অ্যান্ড মাইন্স) প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম জানান, ১০০ কূপ প্রকল্পের আওতায় ৬৯টি অনুসন্ধান ও উন্নয়ন কূপ খনন করা হবে। এর মাধ্যমে দৈনিক গ্যাস উৎপাদন আরও ৯৮৫ মিলিয়ন বাড়বে। আর ৩১ ওয়ার্কওভার (কাজ সমাপ্তির পর) থেকে ৪০০ থেকে ৫০০ মিলিয়ন উৎপাদন বাড়বে। ১০০ কূপ থেকে ১৯টি কূপ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চূড়ান্ত করা হয়েছে। ২০২৬ সালের মধ্যে শেষ হলে ওই ১৯টি কূপ থেকে ২৭৭ মিলিয়ন গ্যাস উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
পেট্রোবাংলার পরিচালক (পিএসসি) মো. শোয়েব বলেন, স্থলভাগে গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য তৈরি পিএসসির খসড়া জ্বালানি বিভাগে পাঠানো হয়েছে। পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা গেছে, সিস্টেম লস কমানোর জন্য উদ্যোগ নিয়েছে সংস্থাটি। কোম্পানিগুলোকে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি অবৈধ সংযোগ উচ্ছেদ করার জন্য ৪ জন ডেডিকেটেড নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কাজ করছে। তারা প্রতিদিনই অভিযান পরিচালনা করছে। যার সুফল পাওয়া শুরু হয়েছে।
পেট্রোবাংলা বলছে, গ্যাস অপচয়ের জন্য দায়ী হচ্ছে পুরোনো, জরাজীর্ণ পাইপলাইন; গ্যাস সরবরাহ লাইনের গ্যাসস্টেশন রাইজারে লিকেজ (ছিদ্র); তৃতীয় পক্ষের উন্নয়নকাজে পাইপলাইন ছিদ্র হওয়া এবং আবাসিক খাতে প্রচুর অবৈধ সংযোগ। তবে এসব অপচয় রোধে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানায় পেট্রোবাংলা। এর মধ্যে রয়েছে গ্যাস সরবরাহব্যবস্থায় মিটারিং ব্যবস্থাপনা কার্যকর করা; লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে কারিগরি ক্ষতি নিয়ন্ত্রণে রাখা; অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও উচ্ছেদ কার্যক্রম জোরদার করা এবং আবাসিক গ্রাহকদের প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনা।
জানা গেছে, কারিগরি ক্ষতির (সিস্টেম লস) নামে গ্যাস অপচয় বাড়ছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে গ্যাস বিতরণ লাইনে অপচয় হয়েছে গড়ে ৬ দশমিক ২৮ শতাংশ গ্যাস। এতে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৩ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা। আর গত অর্থবছরের (২০২৪-২৫) মার্চ পর্যন্ত অপচয় হয়েছে ৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ। এতে আর্থিক ক্ষতি ৩ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা। এর বাইরে সঞ্চালন লাইনে অপচয় হয়েছে ২ শতাংশ।
দেশের গ্যাস খাতের চিত্র নিয়ে জ¦ালানি বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক ইজাজ হোসেন বলেন, দেশে গ্যাসের উৎপাদন কমতে কমতে ১৫ বছর আগের জায়গায় চলে গেছে। গ্যাস অনুসন্ধান জোরদারের কোনো বিকল্প নেই। গ্যাস চুরি ও অপচয় কমাতে হবে। সঞ্চালন ও বিতরণ মিলে কারিগরি ক্ষতি প্রায় ১০ শতাংশ, যা অনেক বেশি। সঞ্চালন লাইনে কারিগরি ক্ষতি কোনোভাবেই ২ শতাংশ হওয়ার কথা নয়। এটা ভালো করে দেখা উচিত।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান প্রকৌশলী রেজানুর রহমান বলেছেন, দেশীয় গ্যাসের অনুসন্ধান ও উৎপাদন কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। ৫০ কূপ খনন প্রকল্পের পাশাপাশি ১০০ কূপ খনন প্রকল্পের কার্যক্রম দ্রুত এগিয়ে চলছে।
তিনি বলেন, ২৮ জুলাই আমরা নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেছি ল্যান্ডবেজড এলএনজি টার্মিনাল ও এলপিজি বোটলিং প্লাণ্টের জায়গার বিষয়ে। আরেকটি বৈঠকে বিষয়টি চূড়ান্ত হবে। দ্রুত সময়ের মধ্যে আপনারা এর অগ্রগতি দেখতে পাবেন। তবে বিষয়টি অনেক সময় সাপেক্ষ।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান আরও বলেন, উন্নয়ন কর্মকান্ড বাড়ানোর জন্য দুটি নতুন রিগ কেনা হচ্ছে। একটি রিগ ক্রয়ের প্রস্তাব খুব দ্রুতই একনেকে উঠবে। আরেকটির প্রাক সমীক্ষা চলমান রয়েছে। এগুলো হলে কূপ খনন কার্যক্রম আরও দ্রুততর করতে পারবো। ডিসেম্বর মাসের মধ্যে পুরো ভোলা জেলার সিসমিক সার্ভে করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আমরা আশা করছি সেখানেও আমাদের মজুদ বৃদ্ধি পাবে।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান মো. রেজানুর রহমান বলেন, সঞ্চালন লাইনে কারিগরি ক্ষতির বিষয়টি গভীরভাবে দেখা হচ্ছে। অবৈধ সংযোগ বন্ধে পেট্রোবাংলা তৎপর আছে, খোঁজ পেলেই বিচ্ছিন্ন করা হবে।
আপনার মতামত লিখুন :