রমজানের আগেই নির্বাচন, জাতির মনে প্রশান্তির ছোঁয়া


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : আগস্ট ৬, ২০২৫, ৯:০৩ পূর্বাহ্ণ /
রমজানের আগেই নির্বাচন, জাতির মনে প্রশান্তির ছোঁয়া
  • জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের দিন ঈদের উৎসবের মতো দেখতে চাই :: উৎসব-শৃঙ্খলা-সৌহার্দ্য যেন ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকে :: নির্বাচনী ইশতেহারে যেন তরুণ-নারীরা বাদ না পড়ে’

সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন এই তিনটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব ছিল মন্তব্য করে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, সংস্কারের ক্ষেত্রে আমরা আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পেরেছি। জুলাই-আগস্টের মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় বিচারকাজ দৃঢ়ভাবে এগিয়ে চলেছে। বিচারের আনুষ্ঠানিক শুনানি পর্বও শুরু হয়েছে। ইতিহাসের নির্মম হত্যাকা-ে যারা জড়িত তাদের বিচার এ দেশের মাটিতে হবেই। এবার আমাদের সর্বশেষ দায়িত্ব নির্বাচন অনুষ্ঠান আয়োজনের পালা।

আমরা এবার একটি নির্বাচিত সরকারের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু করব। অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে আমি প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে চিঠি পাঠাব, যেন নির্বাচন কমিশন আগামী রমজানের আগে, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। সকলেই দোয়া করবেন যেন সুন্দরভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠান করে এ দেশের সকল নাগরিক একটি ‘নতুন বাংলাদেশ’ গড়ার কাজে সফলভাবে এগিয়ে যেতে পারে। আমরা সরকারের পক্ষ থেকে এই নির্বাচন যাতে সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ এবং উৎসবমুখরভাবে সম্পন্ন করা যায় সেজন্য সকল প্রকার সাহায্য-সহযোগিতা প্রদান করবো। গতকাল মঙ্গলবার রাতে ৫ আগস্ট ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবসে’ জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।

নির্বাচন আয়োজনে প্রস্তুতির তথ্য তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এবারের নির্বাচন যেন আনন্দ-উৎসব, শান্তি-শৃঙ্খলা, ভোটার উপস্থিতি, সৌহার্দ্য ও আন্তরিকতার দিক থেকে দেশের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকে সেজন্য সকল আয়োজন সম্পন্ন করতে আগামীকাল (আজ) থেকে আমরা সকলেই মানসিক প্রস্তুতি ও প্রাতিষ্ঠানিক আয়োজন শুরু করব।

ড. ইউনূস বলেন, নির্বাচন আসছে। যদি আপনি আপনার নির্বাচনী এলাকা থেকে দূরে বসবাস করেন তবে এখন থেকে নিয়মিত নির্বাচনী এলাকা পরিদর্শন করুন। যাতে সেরা ব্যক্তিকে নির্বাচিত করতে আপনি প্রস্তুত হতে পারেন। যাদের তাজা রক্তের বিনিময়ে আমরা আমাদের এই অতি মূল্যবান অধিকার ফিরে পেলাম, ভোটটা দেবার আগ মুহূর্তে যেন তাদের চেহারা আমাদের চোখে ভেসে ওঠে।

তিনি বলেন, ফেব্রুয়ারি বেশি দূরে নয়। নির্বাচন নিয়ে প্রস্তুতি নিতে নিতেই ভোটের দিন এসে পড়বে। বহু বছর আমরা কেউ ভোট দিতে পারিনি। এবার আমরা সবাই ভোট দেবো। কেউ বাদ যাবে না। সবাই যেন বলতে পারি নতুন বাংলাদেশ গড়ার পথে দেশকে রওনা করার জন্য আমি আমার ভোটটা দিয়েছিলাম। আমার ভোটেই দেশটা সেপথে রওনা হতে পেরেছিল।

নির্বাচনে ভোটারদের সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এবার আমরা প্রবাসী ভোটারদের ভোট দেওয়ার আয়োজন নিশ্চিত করতে চাই। অর্থনৈতিক দিক থেকে সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত বাংলাদেশ যে আবার দ্রুত ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছে তার বড় কারণ হলো আমাদের রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের ঐতিহাসিক অবদান। নির্বাচনে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য নির্বাচন কমিশন প্রস্তুতি নিচ্ছে। নারী ভোটাররা যেন দেশের সর্বত্র নির্দ্বিধায় আনন্দ-উৎসাহ সহকারে তাদের ভোট দিতে পারে এটা নিশ্চিত করতে চাই। এবার যেন কেন্দ্রে কেন্দ্রে নারী ভোটারদের ঢল নামে আমরা সেই লক্ষ্যে সমস্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

সরকার প্রধান বলেন, দেশের মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নেবার কারণে গত ১৫ বছর ধরে নাগরিকবৃন্দ ভোট দিতে পারেনি। এবারের নির্বাচনে আমরা আমাদের বকেয়া আনন্দসহ মহা আনন্দে ভোট দিতে চাই। এবারের নির্বাচনে জীবনে প্রথমবার ভোট দিতে যাবে এরকম ভোটাররা নানা উৎসবের মধ্য দিয়ে ভোটকেন্দ্রে যাবে, তাদের এই দিনটি স্মরণীয় করে রাখার জন্য। এর মধ্যে নতুন নারী ভোটার থাকবে, নতুন পুরুষ ভোটার থাকবে। এর মধ্যে এমন ভোটার থাকবে যারা ১৫ বছর আগে থেকেই ভোট দিতে পারতো কিন্তু জীবনে একবারও ভোট দিতে পারেনি। এর মধ্যে আসবে যারা ১০ বছর আগে, ৫ বছর আগে ভোট দিতে পারত কিন্তু পারেনি। আর আসবে ভাগ্যবান ও ভাগ্যবতীর দল যারা এই প্রথমবার ভোটার হওয়ার যোগ্যতা লাভ করলো এবং সঙ্গে সঙ্গে ভোট দেওয়ার সুযোগও পেয়ে গেল। নির্বাচনের দিনকে আমরা ঈদের উৎসবের মতো করতে চাই। এবারের ভোটের আনন্দ থাকবে সবার মধ্যে। আপনারা সবাই বাচ্চাকাচ্চাদের নিয়ে ভোটকেন্দ্রে যাবেন। নাগরিক অধিকার প্রয়োগের মহা আনন্দ পরবর্তী বংশধরদের কাছে তুলে ধরার জন্য।

সকলকে নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে ড. ইউনূস বলেন, এখন থেকে প্রতিদিন আলাপ করুন, আপনার এলাকায় ভোটদান ব্যবস্থা কেমন হলে সুন্দর হয়, কেমন হলে আনন্দমুখর হয়, সেটা আগে থেকে ঠিক করার জন্য। নতুন বাংলাদেশ গড়ার কাজের ভিত্তি রচনা হবে এবারের নির্বাচনে। তার জন্য প্রস্তুতি নিন।

তিনি বলেন, দেশের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত যতগুলো বড় সংঘাত, সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে তার সবগুলোর নেপথ্যে কারণ ছিল ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচন। ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে কোনো দল যদি গায়ের জোরে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসে তার চূড়ান্ত পরিণতি কী তা জুলাই অভ্যুত্থান আমাদের দেখিয়ে দিয়েছে। আমরা ইতিহাসের কলঙ্কিত কোনো অধ্যায়ের পুনরাবৃত্তি আর করতে চাই না। আপনারা প্রত্যেকেই অবগত আছেন, একটা গোষ্ঠী নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। তারা দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে দেশের বাহিরে বসে এবং ভেতরে থেকে নানা অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। আমাদেরকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে, তারা যেন নির্বাচনকে সংঘাতময় করে তোলার কোনো রকমের সুযোগ না পায়। মাথায় রাখবেন, পরাজিত শক্তি নির্বাচনের আগ পর্যন্ত বারবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করবে। কিন্তু একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সফলভাবে আয়োজন করা গেলে অপশক্তির পরাজয় চূড়ান্ত হবে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয়ে প্রতিনিয়ত পরামর্শ নেবার জন্য আমরা প্রযুক্তির সাহায্য নেব। এজন্য একটি অ্যাপ তৈরির উদ্যোগ নিচ্ছি। দ্রুত এই অ্যাপটি চালু হবে। আপনারা আপনাদের সকল পরামর্শ, সকল মতামত, সকল আশঙ্কা এবং উদ্যোগের কথা এই অ্যাপের মাধ্যমে আমাদেরকে জানাবেন। আমরা তা যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেবো, সমস্যার সমাধানের জন্য ব্যবস্থা নেব।

রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আপনাদের নির্বাচনী ইশতেহারে, প্রতিশ্রুতি-প্রতিজ্ঞা-পরিকল্পনায় কোনোকিছুতেই যেন তরুণরা, নারীরা বাদ না পড়ে। মনে রাখবেন, যে তরুণ-তরুণীরা বাংলাদেশকে বদলে দিয়েছে তারা বিশ্বকেও বদলে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। আপনার দল থেকে তাদেরকে সে সুযোগ দেবার উদ্যোগ নিন।

তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনে সবাই নিরাপদে যার যার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেবে এটা নিয়ে কারো কোনো আপত্তির সুযোগ রাখা যাবে না। আমরা সবাই সবার পছন্দের প্রতি সম্মান দেখাব-এটাই হোক আমাদের প্রতিজ্ঞা।
দায়িত্ব গ্রহণকালের চিত্র তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, যখন এক বছর আগে আমাদের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ১৬ বছর ব্যাপী একটানা ধ্বংসযজ্ঞ এবং লুটপাটে বিধ্বস্ত এক অর্থনীতির দায়িত্ব নিয়েছিলাম, তখন কারোরই মনে হচ্ছিল না এই বিধস্ত অর্থনীতিকে আবার সহজে চালু করা যাবে। মাত্র এক বছরের মধ্যে আমরা এতদূর রাস্তা অতিক্রম করতে পারবো যা চিন্তাই করা যায়নি। অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এখন দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাবার পালা। আমরা এখন অন্তর্বর্তী সরকার থেকে একটি নির্বাচিত সরকারের হাতে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব তুলে দেওয়ার দিকে অগ্রসর হচ্ছি।

তিনি বলেন, আমাদের তিনটি দায়িত্ব ছিল: সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন। জুলাই অভ্যুত্থানের ছাত্র-শ্রমিক-জনতা দেয়ালে দেয়ালে যে প্রত্যাশার কথা লিখে রেখেছিল তার অন্যতম ফোকাস ছিল রাষ্ট্রব্যবস্থার গণতান্ত্রিক সংস্কার। সে লক্ষ্যে আমরা বেশ কয়েকটি সংস্কার কমিশন গঠন করেছিলাম। তাদের মধ্যে প্রধান প্রধান সংস্কার কমিশনগুলো যে সুপারিশ পেশ করেছে সেগুলোর মধ্যে স্বল্প সময়ের মধ্যে আশু বাস্তবায়নযোগ্য বহু সংস্কার আমরা ইতোমধ্যে সম্পন্ন করেছি। এই সংস্কারগুলোর মাধ্যমে অর্থনৈতিক খাত, বিচার ব্যবস্থা ও জনপ্রশাসনে গতিশীলতা আসবে; স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বহুলাংশে বৃদ্ধি পাবে। দুর্নীতি, অনিয়ম ও হয়রানি হ্রাস পাবে। দীর্ঘমেয়াদী সংস্কারকাজ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আমরা জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশন গঠন করেছিলাম। এই কমিশনে ৩০টিরও অধিক রাজনৈতিক দল ও জোট স্বতস্ফুর্তভাবে অংশগ্রহণ করেছে, তাদের মতামত দিয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে ঐকমত্য কমিশন ১৬৬টি সুপারিশ নিয়ে ৩০টির বেশি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রায় দুই মাস ধরে দলগত ও জোটগতভাবে আলোচনা করেছিল। এই প্রক্রিয়ায় যেসব বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সেগুলো বাদ দিয়ে কমিশনের পক্ষ থেকে ১৯টি মৌলিক সংস্কারের বিষয় চিহ্নিত করা হয়।

দ্বিতীয় পর্যায়ে ২৩ দিন ধরে আলোচনা শেষে ১৯টি বিষয়ের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়েছে, যদিও কয়েকটি ক্ষেত্রে কিছু কিছু রাজনৈতিক দলের নোট অব ডিসেন্ট রয়েছে। সংস্কারের ক্ষেত্রে আমরা আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পেরেছি। ঐকমত্য কমিশনের পরিচালনায় দেশের সকল রাজনৈতিক দল মিলে দীর্ঘদিন ধরে প্রতিনিয়ত আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে ‘জুলাই সনদ’ চূড়ান্ত হওয়ার পর্যায়ে এসেছে। জুলাই সনদ একটি ঐতিহাসিক অর্জন। এটা শুধু আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাসে নয়, বৃহত্তর পরিমন্ডলের রাজনৈতিক ইতিহাসেও স্মরণীয় হয়ে থাকবে। দলিলতো স্মরণীয় হয়ে থাকবেই, এটা রচনার প্রক্রিয়াও স্মরণীয় হয়ে থাকবে। জুলাই সনদ বাংলাদেশে সুষ্ঠুভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর, জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বাধীনতা ও সক্ষমতা, নাগরিক অধিকারের সত্যিকারের বাস্তবায়ন, রাষ্ট্রীয় সম্পদ ও সামর্থ্যের ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করবে। আমাদেরকে নিশ্চিত করতে হবে ভবিষ্যতের কোনো সরকারই যেন আর ফ্যাসিস্ট হয়ে উঠতে না পারে। রাষ্ট্রকে এমনভাবে মেরামত করতে হবে যাতে কখনো কোথাও ফ্যাসিবাদের লক্ষণ পাওয়া গেলেই সেটিকে যেন তাৎক্ষণিকভাবে সেখানেই নিমূর্ল করা যায়। আর যেন ১৬ বছরের জন্য অপেক্ষা করতে না হয়। বহু মানুষকে প্রাণ দিতে না হয়। আমাদের যেন আরেকটি গণঅভ্যুত্থানের প্রয়োজন না হয়।

বিচার সম্পর্কে তিনি বলেন, জুলাই-আগস্টের মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় বিচারকাজ দৃঢ়ভাবে এগিয়ে চলেছে। বিচারের আনুষ্ঠানিক শুনানি পর্বও শুরু হয়েছে। ইতিহাসের নির্মম হত্যাযজ্ঞে যারা জড়িত তাদের বিচার এ দেশের মাটিতে হবেই। বিচার প্রক্রিয়া ও এর ফলাফল ক্রমান্বয়ে মানুষের কাছে প্রকাশিত হতে থাকবে। বিচারের পুরো প্রক্রিয়া দেশবাসীর কাছে স্বচ্ছ ও দৃশ্যমান রাখা হচ্ছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের বিগত ১ বছরের নানা চ্যালেঞ্জ ও উদ্যোগের কথা জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, দায়িত্ব গ্রহণের পর দক্ষিণ ও উত্তরাঞ্চলে বন্যা, নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির আশঙ্কা ছিল। তবে যথাযথ পদক্ষেপ, নজরদারি ও মধ্যস্বত্ব ভোগিদের দৌরাত্ম্য কমানোর ফলে এটি এড়ানো গেছে। মূল্যস্ফীতির নিয়ন্ত্রণ ছিল সবচাইতে বড় চ্যালেঞ্জ। ভঙ্গুর অর্থনীতি ও বন্যার কারণে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছিল প্রায় ১৪ পার্সেন্ট। এখন সেটা অর্ধেকে নেমে এসেছে। ডিসেম্বরের মধ্যে এটি ৬ শতাংশে নেমে আসবে। গত অর্থবছর ব্যাংকিং চ্যানেলে রেকর্ড তিন হাজার ৩৩ কোটি ডলার প্রবাসী আয় দেশে এসেছে। রপ্তানি আয় প্রায় ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। আগের বকেয়া দায় পরিশোধের পরও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ছে।

বন্দর ব্যবস্থাপনা নিয়ে তিনি বলেন, বর্তমান সরকার চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবস্থাপনাকে নতুন করে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছে। সরকার সম্প্রতি বাংলাদেশ নৌবাহিনী পরিচালিত ড্রাই ডক লিমিটেডকে নিউ মুরিং টার্মিনাল কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের দায়িত্ব দিয়েছে। তারা কাজ শুরু করা মাত্রই কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। প্রথম দুই সপ্তাহে দেখা গেছে আগের তুলনায় প্রতিদিন গড়ে ২২৫টি বেশি কনটেইনার হ্যান্ডলিং হচ্ছে। এ বন্দরকে আধুনিকভাবে গড়ে তোলা গেলে তা শুধু বাংলাদেশের অর্থনীতিতেই ভূমিকা রাখবে না, নেপাল, ভূটানসহ পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। বিনিময়ে তারাও উপকৃত হবে, আমরাও উপকৃত হবো।

তিনি আরো জানান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্বগ্রহণকালে প্রতিটি গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান, অফিস, আদালত বিধ্বস্ত অবস্থায় ছিল। এজন্য প্রথম এবং প্রাথমিক কাজ ছিল এই প্রতিষ্ঠানগুলো সংস্কার এবং পুনঃনির্মাণে হাত দেওয়া, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পুনর্গঠন, অর্থনীতি পুনরুদ্ধার, আইন-আদালত, নির্বাচন কমিশন-সহ যাবতীয় গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে সচল করা এবং নাগরিকদের নিকট দায়বদ্ধ করে তোলা। জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবসে সকল নাগরিকের কাছে সরকার প্রধান আহ্বান জানান, আসুন, “নতুন বাংলাদেশ” গড়ার প্রথম বড় পরীক্ষায় সফলভাবে উত্তীর্ণ হই।