ডাকসু নির্বাচন নিয়ে বিশ্লেষণঃ শিবিরের জয় ‘চাঁদাবাজি দখলদারিত্বের জবাব’-মাহমুদুর রহমান মান্না


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৫, ১০:৫৬ পূর্বাহ্ণ /
ডাকসু নির্বাচন নিয়ে বিশ্লেষণঃ শিবিরের জয় ‘চাঁদাবাজি দখলদারিত্বের জবাব’-মাহমুদুর রহমান মান্না

মাহমুদুর রহমান মান্না

তরুণরা চাঁদাবাজি ও দখলদারিত্ব দেখতে চায় না বলেই ডাকসুতে ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্যানেল জয় পেয়েছে বলে মনে করছেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। গতকাল বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় বিভিন্ন দেশের উদাহরণ টেনে ডাকসুর সাবেক ভিপি মান্না বলেন, ‘অপমানিত’ ছাত্রসমাজ ‘নতুন’ কিছু করে দেখিয়েছে। ছয় বছর পর মঙ্গলবার আয়োজিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ-ডাকসু ভোটে অভাবনীয় জয় পায় ছাত্রশিবির।

জাসদ ছাত্রলীগ থেকে দুইবার ডাকসুর ভিপি পদে জয়লাভ করা মান্না বলেন, গতকাল যে ডাকসু নির্বাচন হয়েছে, তাতে মানুষ মনে করবে ভালো নির্বাচন তো সম্ভব। এই জন্য শিক্ষার্থীদের ধন্যবাদ দেন তিনি।

‘জানি এই নির্বাচনের ফলাফল অনেকের জন্য রীতিমতো হতবাক, কেউ কেউ অবশ্য বলছেন যে এটার মধ্যে জাল-জালিয়াতি আছে; কিন্তু তারপরে ফলাফলটা ঘোষণা হয়েছে এবং যারা কালকে বিকেল বা সন্ধ্যা থেকে বিক্ষোভ করছিলেন তারা এখন আপাতত প্রশমিত বলে মনে হচ্ছে।’

নেপালের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ‘জেন-জি ইতিহাস রচনা করে দিয়েছে। এই জেন-জি পুরা আফ্রিকাতে, ল্যাটিন আমেরিকাতে ইতিহাস তৈরি করেছে। উগান্ডাতে জেন-জির একটা বক্তব্য পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। তারা বলেছে, এই অপমানজনক জীবনযাপন করতে আমরা বিরক্ত। এবারে কিছু সাহস দেখাতে চাই।

‘আচ্ছা মিলিয়ে দেখেন, এই গেস্টরুম কালচার, বড় ভাইদের সালাম করা, প্রোটোকল দেয়া, ভর্তি পরীক্ষা না হলেও তারপরে ভর্তি হতে পারবে, পরীক্ষা দিতে না দেয়া- সব দেখে অপমানিত ছাত্রসমাজ। তারা মনে করেছে, এই জীবনের মধ্যে আমরা সাহস দেখাব।’

ডাকসু নির্বাচনের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘এই প্রজন্ম এক বছর পরে মনে করছে, এই দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতি আমরা দেখতে চাই না, এই যে মিথ্যাচার, এই যে এক বছর যেটা দেখলাম চাঁদাবাজি, দখলদারিত্বের রাজনীতি এবং ক্ষমতায় যাওয়ার আগেই ক্ষমতায়িত হয়ে গেছে- এ রকম হাবভাব করা, এই রাজনীতি দেখতে চাই না। অতএব তারা নতুন কিছু করতে চায়।’

ডাকসু নির্বাচন জাতীয় রাজনীতিতে কোনো প্রভাব ফেলবে না বলে মনে করেন মান্না। তিনি বলেন, ‘আমি খুব জনপ্রিয় ছিলাম ছাত্রদের মধ্যে; কিন্তু আমার রাজনৈতিক দলে হয়নি। আমি তো ক্ষমতায় যাইনি, আমার পার্টি তো ক্ষমতায় যেতে পারেনি। অতএব ডাকসুতে জিতলেই যে তারা জাতীয় রাজনীতি বিরাট কিছু করে ফেলবে সেরকম নয়।

‘কিন্তু তারপরেও মনে করে দেখেন, মাহমুদ রহমান মান্নার সেই সংগঠন ছিল না। কিন্তু এবার যারা জিতেছেন তাদের তো সংগঠন আছে। তারা সেটাকে রূপান্তর করতে পারবেন।’

বাংলাদেশে নেপালের মতো প্রতি-অভ্যুত্থানের জমিন তৈরি হয়েছে বলেও মনে করছেন মান্না।

নেপালে সোমবার থেকে শুরু হওয়া সহিংস বিক্ষোভে কেপি শর্মা ওলির সরকারের পতন ঘটে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ করে দেয়ার জেরে সেখানে তরুণরা রাস্তায় নেমে আসে। বামপন্থীদের আন্দোলনের পথ ধরে প্রায় ১৭ বছর আগে নেপালে রাজতন্ত্র বিলুপ্ত হয়। এখন আবার সেখানে রাজতন্ত্র ফেরানোর দাবি ওঠেছে।

আলোচনা সভায় বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘ডাকসু নির্বাচন থেকে, সমগ্র বাংলাদেশকে বিবেচনা করার কোনো কারণ নাই। এখানে ৪০ হাজার ভোটার, ৩০-৩২ হাজার ভোট দিয়েছেন, এটা সমুদ্রের মধ্যে একটা বিন্দু। কিন্তু এই বিন্দুরও একটা রাজনৈতিক অধিকার আছে, এটা নিশ্চয় বিবেচনার পথে আমরা রাখব।

‘এ ধরনের আরো দুই-তিনটা বিশ্ববিদ্যালয় যদি একই ধরনের ফলাফল হয় তাতেও বিচলিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। সারা বাংলাদেশে ১২ কোটি ৬০ লাখ ভোটার।’

সাইফুল হকের মতে, নেপালে বামপন্থীদের প্রধান যে অঙ্গীকার ছিল সমাজের শ্রেণী বৈষম্য তারা বিলোপ করবেন, দুর্নীতি উচ্ছেদ করবেন, একটা মানবিক সাম্যভিত্তিক সমাজের দিকে যাবেন, সে পথে তারা হাঁটতে পারেননি। তিনিও মনে করেন, নেপালে এই অভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে আবার রাজতন্ত্র ফিরে আসার জমিন তৈরি হচ্ছে। গণতন্ত্র মঞ্চ আয়োজিত ‘বর্তমান রাজনীতি ও করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সভাপতি হাসনাত কাইয়ুম।

অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডি’র সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়ক কাজী আবুল হাসান রুবেল এবং জনশক্তি পার্টির মহাসচিব ডক্টর আবু ইউসুফ সেলিম।