এইচসসি পরীক্ষাঃ সিংহভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফল বিপর্যয় কিছু প্রতিষ্ঠানে শতভাগ পাশ এবং সংখ্যাধিক জিপিএ-৫ প্রাপ্তির অন্যতম যৌক্তিককারণ-


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : অক্টোবর ২০, ২০২৫, ১১:১৭ অপরাহ্ণ /
এইচসসি পরীক্ষাঃ সিংহভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফল বিপর্যয় কিছু প্রতিষ্ঠানে শতভাগ পাশ এবং সংখ্যাধিক জিপিএ-৫ প্রাপ্তির অন্যতম যৌক্তিককারণ-

আলহাজ্ব মোঃ রবিউল হোসেন

গত ১৬ অক্টোবর ২০২৫ দেশের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। এই ফলাফল প্রকাশের মাধ্যমে প্রমানিত হয়েছে দেশের শিক্ষা ব্যবসা বা শিক্ষা খাত কতটুক সবল আর কতটুকু দুর্বল। প্রমানিত হয়েছে কোন কোন ক্ষেত্রে শিক্ষাব্যাস্থার মান উজ্জ্বল বা সবল আর কোন কোন ক্ষেত্রে শিক্ষাব্যবস্থার মান অনুজ্জ্বল বা দুর্বল।

বলা বাহুল্য যে, আমরা প্রায় দেশের শত ভাগ মানুষই কথায় কথায় বলে থাকি, “শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড”। কথাটির সত্যতা যাচাইয়ে- এ শব্দবন্ধ অবিতর্কিত ভাবে শিরোধার্য হলেও শিক্ষাক্ষেত্রে বৈষম্য নীতির জন্য চলতি বছর এইচএসসি পরীক্ষার ফল বিপর্যয় আবার কোন কোন ক্ষেত্রে ফলাফল প্রায় শত ভাগ উজ্জ্বল’ বা সফল তার যথাযথ যৌগিক বিজ্ঞান ভিত্তিক পর্যালোচনার সময় এসেছে এ মুহুতেই বৈকি।

চলতি বছর উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের খব-রাখবর প্রকাশিত হয়েছে দেশের প্রায় প্রতিটি গণমাধ্যমে গত ১৭ অক্টোবর শুক্রবার ২০২৫ তারিখে। এক্ষেত্রে দেশের জনবহুল একটি পত্রিকা “বাংলাদেশ প্রতিদিন” প্রথমপৃষ্ঠায় যে খবর শিরোনাম করেছে সেই খবর শিরোনামটি হলো- “অর্ধেক শিক্ষার্থীই ফেল”। পাশের হার ৫৮.৮৩ শতাংশ, কমেছে ১৮:৯৫. মোট জিপিএ-৬৯০৯৭, এবার এগিয়ে মেয়েরা। মানবিকের ফলে ধস ইংরেজীতেও বিপর্যয়। পত্রিকার তৃতীয় পৃষ্ঠায় যে খবর বিশ্লেষণ করা হয়েছে সেখায়ে বেশ চমৎকার ভাবে খবরের হেডলাইনে উল্লেখ করা হয়েছে শতভাগ পাসে নেই নামিদামি কলেজ। ২০২ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কেহই পাশ করেনি।

খবরে উল্লেখ করা হয়েছে- চট্টগ্রাম বোর্ডে চট্টগ্রাম কলেজ, মহাসিন কলেজ ও ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজ ভালো ফল করলেও বাকি কলেজ গুলোর ফলাফল বিপর্যয় ঘটেছে।

যশোর বোর্ডে পাশের হার ৫০.২০ শতাংশ। রাজশাহী বোর্ডে পাশের হার ৫৯ দশমিন ৮৬ শতাংশ। সিলেট বোর্ডে পাসের হার-৫১ দশমিক ৮৬ শতাংশ। ২০ বছরের মধ্যে এটি সর্বনিম্ন পাস।

উল্লেখ্য অথচ ক্যাডেটে পাস শতভাগ। দেশের ১২ টি ক্যাডেট কলেজ থেকে ৫৮৯ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৫৮৭ জন জিপিএ-৫ পেয়েছেন। পাসের হার শত ভাগ’ ফৌজদারহাট ক্যাডেটে ৪৮জন, ঝিনাইদাহ ক্যাডেট ৪৭ জন, মির্জাপুর ক্যাডেটে ৪৮ জন, রাজশাহী ক্যাডেটে ৫০ জন, সিলেট ক্যাডেটে ৪৯ জন, রংপুর ক্যাজেট ৪৬জন বরিশাল ক্যাডেটে ৫২ জন, কুমিল্লা ক্যাডেটে ৫৩ জন ও ফেনী গার্লস ক্যাডেটে ৪৮জন জিপিএ ৫ পেয়েছে।

দেশের এইচএসসি পরীক্ষার এ হেনো বিচিত্র ফলাফল দেখে বিজ্ঞ সমাজ। শিক্ষিত সমাজ পত্রিকার পাঠক সমাজ কী বলবেন? জানি অনেকেই নিশ্চয়ই বলবেন, ক্যাডেট কলেজ গুলোতে ভালো ভালো শিক্ষার্থী বাছাই করে নেওয়া হয় তাই এমন রেজাল্ট বা ভালো ফলাফল আর দেশের অধিকাংশ স্কুল, কলেজে গড় ছাত্র-ছাত্রী পড়ানো হয় তাই ফলাফলের প্রায় ৫০% বিপর্যয় এর অন্যতম কারণ।

কথাটি পূর্ন সত্য না হলেও আংশিক সত্য। দেশের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার বৈষম্য নীতির কারণেই বেশির ভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফল বিপর্যয় ঘটেছে। দেশের ক্যাডেট কলেজ বা সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের রাজনীতি, হরতাল ইত্যাদি না থাকায় তাদের পাঠদান, পাঠগ্রহণে বিঘ্ন না ঘটায় শিক্ষা ক্ষেত্রে জবাবদিহিতা নিয়মিত থাকার কারণে ফলাফল বিপর্যর এর কোন সুযোগ না থাকায় তাদের ফলাফল আজ সর্ব উচ্চো।

দেশের বেশিরভাগ বেসরকারী স্কুল-কলেজে যেখানে রাজনীতির সঙ্গেই শিক্ষার্থীরা যুক্ত, এমনকি শিক্ষকরাও শিক্ষার্থী কর্তৃক লাঞ্চিত যে সকল ক্ষেত্রে ফল বিপর্যয় তো হওয়ারই কথা।

জুলাই আন্দোলনের পর অটো পাস। তারপরও ঢিলেঢালা খাতা দেখার প্রবণতার পর হঠাৎ কড়াকড়িতে খাতা মূল্যায়নে পাশের হার ও মান বৃদ্ধির অন্তরায়ের অত্যতম কারণ কী না তা যথাযথ কর্তৃপক্ষ, শিক্ষা বিভাগকেও এমুহুর্তে ভেবে দেখতে হবে এবং পদক্ষেপ নিতে হবে।

পদক্ষেপ নিতে হবে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষক-কর্মচারী আন্দোলনকে যৌক্তিক মর্যাদাদানের বিষয়টিও যা এ মহেুর্তে বিবেচনায় আনতে হবে।

শিক্ষার সর্বস্তরের (বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে) মান ফেরাতে দক্ষশিক্ষক-শিক্ষা, বিশেষ করে সর্ববিষয় কম বেশি অভিজ্ঞ দক্ষ অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ নিয়োগ সুনিশ্চিত করতে হবে। দুর্বল শিক্ষক শিক্ষিকাদের সবল করতে শিক্ষাগ্রহণ ও পাঠদান ব্যবস্থায় ওয়ার্ম আপ রাখতে দক্ষ, যোগ্য আন্তরিক নিবেদতি প্রাণ এমন মানসিকতার ব্যক্তিত্বদেরকে স্কুল কলেজের ম্যানেজিং কমিটি বিনির্মানে নীতিমালা থাকা বা প্রস্তুতকরাটাও এ মুহুর্তে খুব জরুরি কী না তাও ভেবে দেখতে হবে।

খোঁজ নিলে দেখা যাবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এমন কিছু কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে সেখানকার শিক্ষক, শিক্ষিকাগণ পাঠদানে আন্তরিক অর্থাৎ শ্রেণীকক্ষে পাঠদান সুনিশ্চিত করতে যথাযথ ভাবে উপকরণের ব্যবহার পাঠদানে বক্তৃতা পদ্ধতির পরিবর্তে প্রশ্নউত্তর পদ্ধতি বা একিভূত শিক্ষদান পদ্ধতি অনুস্মরণ: প্রতিষ্ঠানে শৃংখলা বজায় রাখতে অধ্যক্ষ, ম্যানেজিং কমিটি তৎপর ও আন্তরিক সে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কিন্তু তেমন ফল বিপযয় ঘটেনি।

দেশের ১২টি ক্যাডেট কলেজ (সুনিয়ন্ত্রিত সরকারি ভাবে)) ছাড়াও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বেশ কিছু বেসরকারি স্কুল কলেজের পরীক্ষার ফলাফল সন্তুষ্ট জনক এমন ধরনের ২/৩টি কলেজের উদাহরন:

* যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলাধীন শেখ আকিজ উদ্দিন গ্রুপ কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত শেখ আকিজ উদ্দিন স্কুল এন্ড কলেজে এবার পরীক্ষার্থী ছিলেন ১২৬ জন। মোট পাশের সংখ্যা ১২২। জিপিএ ৫ পেয়েছেন ৩৭ জন। পাশের হার ৯৬.৮৩। অকৃতকার্য ৪ জন।

* যশোর ক্যান্টনমেন্ট কলেজের ফলাফলও সন্তুষ্টজনক বলে সূত্র জানিয়েছে।

* যশোরের শার্শা উপজেলায়- শার্শা কলেজে এবার পরীক্ষার্থী ছিলেন ৩২১ জন। কৃতকার্য হয়েছেন ২৩৫ জন। জিপিএ ৫ পেয়েছেন ২৯জন। পাশের হার ৭৩.২১। কিন্তু কেন এমন ব্যতিক্রম ফলাফল?

জানাগেছে এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, অধ্যক্ষ, ম্যানেজিং কমিটির আন্তরিকতা, সঠিক পাঠদান কাযক্রম, একাধিক পরীক্ষা গ্রহন ছাড়াও রাজনীতিমুক্ত শিক্ষাঅঙ্গনেরই প্রাপ্তি এবারের ২০২৫ সালের এইচ.এস.সি পরীক্ষায় উদাহরনযোগ্য ব্যতিক্রমধর্মী এমন কোন কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ফলাফল বৈকি। নাভারন ডিগ্রী কলেজ, শার্শা সরকারি মহিলা কলেজ, বাগআঁচড়া ডা: আফিল উদ্দীন ডিগ্রী কলেজ তেমন ভালো ফলাফল দেখাতে না পারলেও পাশের হারে তারা ৫০-৬০% এর উর্ধ্বে। জিপিএ-৫ নগন্য সংখ্যক। এমনচিত্র দেশব্যাপী।