নির্বাচনে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিতে ফ্যাসিস্ট পেশাদার অপরাধী দমন জরুরী


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : নভেম্বর ৯, ২০২৫, ৯:৩৩ অপরাহ্ণ /
নির্বাচনে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিতে ফ্যাসিস্ট পেশাদার অপরাধী দমন জরুরী

অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে দেশবাসী আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির আশা করলেও ঘটেছে তার উল্টো।রাজধানী সহ সারাদেশের আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটেছে। ঢাকার অনেক এলাকায় এখন সন্ধ্যার পর মানুষ বাইরে বের হতে ভয় পায়। এ অবস্থায় কোনো কোনো এলাকায় চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাইয়ে অতিষ্ঠ মানুষ নিজেরাই পাহারাার ব্যবস্থা করেছেন। চট্টগ্রাম নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার চালিতাতলীর খন্দকারপাড়া এলাকায় জনসংযোগকালে দুর্বৃত্তদের গুলিতে একজনের মৃত্যু হয়।

গত শনিবার রাতে রাজশাহীর মোহনপুরে অটোরিকশাচালক গলায় ছুরিকাঘাত নিয়ে প্রায় তিন কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে একটি বাজারে পৌঁছান। তবে সেখানে গিয়ে তিনি কিছু বলতে পারেননি। পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

এদিকে নির্বাচন সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতি করতে সব বাহিনী সমন্বিতভাবে কাজ করতে মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে পুলিশ সদর দফতর থেকে। স্থানীয় নাগরিক সমাজের সঙ্গে আলোচনা করে পরিস্থিতি উন্নয়নের জন্য পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটকে নির্দেশনা দেয়া হয়। ফ্যাসিস্ট- পেশাদার অপরাধী দমন করতে পুলিশ ও র‌্যাবসহ অন্যান্য বাহিনীর সদস্যদের সেনাবাহিনীর সাথে সমন্বয় করে দায়িত্ব পালন করা জরুরি বলে মনে করছেন অপরাধ বিশেষজ্ঞরা। একাধিক সেনা কর্মকর্তা ও সদস্য ইনকিলাবকে বলেন, সেনা বাহিনী সব সময় মাঠে থাকবে না। পুলিশ এবং র‌্যাবের সক্ষমতা অনেকটা বৃদ্ধি পেয়েছে। ধীরে ধীরে পুলিশ-র‌্যাবসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর সক্ষমতা আরও বৃদ্ধি পাবে। মূলত সেনাবাহিনীর সদস্যরা বাইরে থাকতে থাকতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। আগামী নির্বাচনটাও সেনাবাহিনীর জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তাই সেনাবাহিনীর যে সক্ষমতা আছে তার সবটুকুই অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্যই অপেক্ষায় আছে। সুন্দর একটি পরিবেশে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সেনাবাহিনী ব্যারাকে ফিরতে চায়। সেনা কর্মকর্তারা বলেন, এত দিন দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য সেনাবাহিনীকে মাঠে থাকতে হয়েছে। এরই মধ্যে দেশে নির্বাচনী হাওয়া বইছে। শিগগিরই তফসিল ঘোষণা হবে।আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করাই মূল উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য সেনাবাহিনীর।

সেনাবাহিনী সূত্র জানায়, গত ১৫ মাস যেসব সদস্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে রাজধানীসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে দায়িত্ব পালন করে আসছেন তারা দেশের জনগণের নিরাপত্তা এবং অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঠেকাতে কাজ করেছেন। কিন্তু সামনে নির্বাচনের মাঠে অন্তত এক লাখ সেনাসদস্য নির্বাচনের সময় দায়িত্ব পালনের পরিকল্পনা রয়েছে। এ জন্য সবাইকেই নির্বাচনী প্রশিক্ষণ দেওয়া প্রয়োজন। আপাতত অর্ধেকের মতো সেনাসদস্যকে ব্যারাকে ফেরানো হয়েছে। তাদের প্রশিক্ষণের পর বাকিদেরও ফিরিয়ে নেওয়া হবে। তবে যারা প্রশিক্ষণ নিয়েছেন তাদের ফের মাঠে পাঠানো হবে। পর্যায়ক্রমে সবাইকে প্রশিক্ষণ নিতে হবে।

গত বুধবার ঢাকা সেনানিবাসের মেস আলফায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সেনা সদর দফতরের আর্মি ট্রেনিং অ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ডের (জিওসি আর্টডক) লে. জেনারেল মোঃ মাইনুর রহমান বলেন, দেশের জনগণের মতো সেনাবাহিনীও একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর নির্বাচন প্রত্যাশা করছে। নির্বাচনের পর দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সেনাবাহিনী ব্যারাকে ফিরে যাবে বলেও জানান তিনি।

বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, নির্বাচন সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে। জুলাইঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর রাতারাতি ভেঙে পড়ে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। একদিকে মব সৃষ্টি, মাজার ভাঙা, ছিনতাই-চাঁদাবাজির মতো অপরাধ বেড়ে যাওয়া, অন্যদিকে মনোবল ভেঙে পড়া পুলিশের নিষ্ক্রিয়তাসহ সব মিলিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। একটি ইসলামী দল সারাদেশে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টির মাধ্যমে নির্বাচন বানচাল করতে চায়। আগামী ১৩ নভেম্বর গণ-অভ্যুত্থানে পালিয়ে যাওয়া ফ্যাসিবাদের পক্ষ থেকে আন্দোলন বা ব্লকেডের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এমন অবস্থায় ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কথা রয়েছে। তাই কঠোর অবস্থানে নিয়ে ফ্যাসিস্ট ও পেশাদার অপরাধীদের দমন করতে হবে সরকারকে।

সূত্রগুলো বলছে, ‘ক্রাউড কন্ট্রোল’ করতে গিয়ে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে মাঠে নামছে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। প্রধান সড়ক অবরোধের কারণে সৃষ্টি হচ্ছে জনদুর্ভোগ। কিন্তু দ্রুততার সঙ্গে বিক্ষোভ বা অবরোধ নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে নিরুপায় পুলিশকে ডাকতে হচ্ছে সেনাবাহিনীর সদস্যদের। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, পুলিশকে ভীষণ ঠান্ডা মাথায় কাজ করতে হচ্ছে। এমনিতেই অতীত কর্মকাণ্ডের কারণে পুলিশের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে আছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পুলিশের বিতর্কিত ভূমিকার কারণে পুলিশ সদস্যদের মধ্যেও হতাশা রয়েছে। এছাড়া পুলিশের ডাকে সাড়া দিতে চাইছে না সাধারণ মানুষ। পুলিশের প্রতি সাধারণ মানুষের ভয়ও ভেঙে গেছে। ফলে যেকোনো ক্রাউড কন্ট্রোল করতে কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে।

রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে গণতান্ত্রিক চর্চার অভাবেই সহিংসতা ঘটনা বাড়ছে বলে মনে করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, দলের ভেতরে গণতান্ত্রিক চর্চার অভাব থেকেই সহিংসতা বাড়ছে। নেতৃত্ব ধরে রাখতে পেশিশক্তির প্রয়োগ এখন রাজনৈতিক নিয়মে পরিণত হয়েছে। দল ও রাষ্ট্রে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত না হলে এ সহিংসতা কমবে না, বরং ভোটের আগে আরও বাড়তে পারে। র‌্যাবের মহাপরিচালক এ কে এম শহিদুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখা বড় চ্যালেঞ্জ। নির্বাচন সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নত করতে সব বাহিনী সমন্বিতভাবে কাজ করছে। একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর নির্বাচনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে র‌্যাবের। পুলিশ সদর দপ্তরের মুখপাত্র এআইজি এ এইচ এম শাহাদাৎ হোসাইন ইনকিলাবকে বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখতে প্রয়োজনীয় নজরদারি ও আগাম তথ্যের ভিত্তিতে গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। অবৈধ কর্মকাণ্ড, নাশকতা বা সংঘর্ষের চেষ্টা হলে তাৎক্ষণিক আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটকে স্থানীয় নাগরিক সমাজের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে পরিস্থিতি উন্নয়নে কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ডিএমপির একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, ক্রাউড কন্ট্রোল করার জন্য নিয়মিত ফোর্সদের মনোবল বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। অনেক স্থানেই ফোর্সরা সিনিয়রদের নির্দেশনা সঠিকভাবে পালন করতে চাইছেন না। ক্রাউড কন্ট্রোল করতে হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর হতে হয়। কেউ নিজ থেকে কঠোরতা দেখাতে চাইছেন না। একইসঙ্গে কোনো ঘটনায় একটু কঠোর হলেই সাধারণ মানুষ জোটবদ্ধ হয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার শুরু করে দিচ্ছে। এতে ফোর্স-সদস্যদের মনোবল আরও ভেঙে যাচ্ছে। পুলিশকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে, যাতে কেউ অহেতুক রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বলি না হয়—এটা নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে পুলিশ দায়িত্ব নিয়ে আইন প্রয়োগ করতে পারবে।