পাঠ্যবইয়ে যুক্ত হচ্ছে আওয়ামীলীগের দুর্নীতি, বাকশাল ও জিয়ার শাসন


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : নভেম্বর ২৪, ২০২৫, ৪:৩৬ অপরাহ্ণ /
পাঠ্যবইয়ে যুক্ত হচ্ছে আওয়ামীলীগের দুর্নীতি, বাকশাল ও জিয়ার শাসন

২০২৬ শিক্ষাবর্ষের মাধ্যমিক স্তরের বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় পাঠ্যপুস্তকে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। স্বাধীন বাংলাদেশে রাজনৈতিক ইতিহাস ও রাষ্ট্রশাসনের ধারাবাহিকতা তুলে ধরতে বইটিতে যোগ করা হয়েছে “স্বাধীন বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থান” নামে নতুন একটি অধ্যায়। এতে আওয়ামী লীগ সরকারের অনিয়ম-দুর্নীতি থেকে শুরু করে বাকশাল, জিয়া–উর রহমানের শাসন ও বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা—সবকিছুই তুলনামূলক নিরপেক্ষভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

নতুন অধ্যায়ে উল্লেখ করা হয়েছে যে ২০০৮ সালে ক্ষমতায় ফিরে শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার ধীরে ধীরে কর্তৃত্ববাদী শাসনের দিকে এগোতে থাকে। বিরোধী দল দমন, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে দলীয়করণ, বিচার বিভাগ ও প্রশাসনে প্রভাব বিস্তার এবং ব্যাপক দুর্নীতির উদাহরণ পাঠ্যপুস্তকে যুক্ত হয়েছে।

২০১১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলকে রাষ্ট্রীয় সংকটের সূচনা হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। সেই সাথে ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তোলা হয়েছে।অর্থনীতির প্রসঙ্গে অভ্যুত্থান-পরবর্তী কমিশনের প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, গত ১৬ বছরে বাংলাদেশ থেকে গড়ে বছরে ১৬ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে—যা ‘চোরতন্ত্র’-এর এক সুস্পষ্ট উদাহরণ।

এসব অনিয়মের ফলে দেশের অর্থনীতি ভঙ্গুর হয়ে ওঠে বলে পাঠ্যবইয়ে উল্লেখ রয়েছে। এছাড়া বইটিতে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরা হয়েছে ১৯৭৫ সালের বাকশাল প্রতিষ্ঠা। মুজিব হত্যা, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং একদলীয় রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।

পাশাপাশি সংযোজন করা হয়েছে জিয়া-উর রহমানের শাসনকাল, যেখানে উল্লেখ করা হয়েছে তাঁর রাজনৈতিক পুনর্বিন্যাস, বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রবর্তন, দল গঠন, প্রশাসনিক কাঠামো পুনর্গঠন এবং রাষ্ট্রপরিচালনায় সামরিক ও বেসামরিক ভারসাম্য তৈরির প্রচেষ্টা।

এরশাদের পতন, ৯০-এর গণআন্দোলন এবং ১৯৯১ সালে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে গণতান্ত্রিক সরকারের পুনঃপ্রতিষ্ঠার কথাও স্থান পেয়েছে।

নতুন অধ্যায়টিতে সাম্প্রতিক ইতিহাসও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। বিশেষ করে ২০২৪ সালের জুলাইয়ের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান, শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, শতাধিক প্রাণহানি এবং অবশেষে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন অত্যন্ত স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে।

বইটি বলছে—জুলাইয়ের অভ্যুত্থান প্রমাণ করেছে, জনগণের ন্যায্য দাবিকে উপেক্ষা করে কোনো দমননীতি শেষ পর্যন্ত টিকে থাকতে পারে না।

নতুন বিষয়বস্তু যুক্ত হওয়ায় শিক্ষক, গবেষক এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। তাদের মতে, এই পরিবর্তন দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসকে আরও বাস্তব, ভারসাম্যপূর্ণ এবং নথিভুক্ত আকারে শিক্ষার্থীদের সামনে তুলে ধরবে।