ফাঁসির আসামী কামাল ভারতে নজরদারিতে, ফেরত চেয়ে ভারতকে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : ডিসেম্বর ২, ২০২৫, ৭:৩৩ পূর্বাহ্ণ /
ফাঁসির আসামী কামাল ভারতে নজরদারিতে, ফেরত চেয়ে ভারতকে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি

জুলাই অভুত্থ্যানে গণহত্যা ও মানবতা বিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক সাবেক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামালকে কলকাতায় গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে। একই মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও কামালের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে রেড নোটিশ দেয়ার প্রস্তুিত চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এই দুই আসামীকে বাংলাদশে ফেরত চেয়ে ভারতকে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ।

কলকাতায় বাংলাদেশের কয়েকটি গণমাধ্যমের প্রতিনিধি ও বাংলাদেশের একটি গোয়েন্দা সংস্থা সূত্র জানিয়ছে- শেখ হাসিনাকে দ্রুত ফেরত না দিলেও আসাদুজ্জামান কামালকে ভারত ফেরত দিতে পারে। এছাড়া শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণের জন্য করা বাংলাদেশের অনুরোধটি ভারত পর্যালোচনা করছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বুধবার এ তথ্য জানিয়েছেন। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম আশা প্রকাশ করেছেন, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামী আসাদুজ্জামান খান কামালকে খুব শিগগিরই বাংলাদেশে প্রত্যর্পণ করা হতে পারে। গত শুক্রবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এ তথ্য জানান।

পুলিশ সদর দপ্তর জানিয়েছে, গত বছরের ছাত্র-জনতার জুলাই অভ্যুত্থানে নির্বিচারে হত্যা ও দমনে নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) কর্তৃক হাসিনা ও কামালের মৃত্যুদণ্ডাদেশের পর ইন্টারপোলে নোটিশ জারি প্রক্রিয়াধীন। এরমধ্যে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের মৃত্যুদণ্ডের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়েছে। ফলে আগামী ৩০ দিনের মধ্যে আপিল করতে হবে শেখ হাসিনা ও কামালকে। ধারা ২১(৩) অনুযায়ী, রায় ঘোষণার তারিখ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে আপিল করতে হবে, সময় অতিক্রম হলে কোনো আপিল গ্রহণযোগ্য হবে না। অন্যদিকে ধারা ২১(৪) বলছে, আপিল গ্রহণের তারিখ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে তা নিষ্পত্তি করতে হবে। এছাড়া হাসিনা ও কামালের দণ্ড বাড়ানোর জন্য উচ্চ আদালতে আপিল করবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত অপরাধে তাদের বিরুদ্ধে ঘোষিত পূর্ণাঙ্গ রায় কপি প্রকাশের পর এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে।

গত বছর জুলাই অভ্যুত্থানের পর আসাদুজ্জামান খান কামাল দেশ থেকে পালিয়ে যান। তবে তিনি কোথায় গেছেন তা না জানা গেলেও গত বছর অক্টোবরে একটি গণমাধ্যমে তার ছবি দেখার পর নিশ্চিত হওয়া যায় তিনি ভারতে অবস্থান করছেন। কামালসহ পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আরও কয়েকজনকে কলকাতার একটি পার্কে দেখা গেছে। এ নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর প্রশ্ন উঠে, তারা কীভাবে দেশ ছেড়ে পালালেন? এ বিষয়ে ইমিগ্রেশন পুলিশের কাছে তথ্য নেই বলে জানিয়েছেন পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি)। তখন এসবি থেকে বলা হয়, তারা কীভাবে সেখানে গেছেন, সে বিষয়ে ইমিগ্রেশন পুলিশের কাছে তথ্য নেই। তারা কেউ বৈধ পথে ইমিগ্রেশন ক্রস করেননি। ইমিগ্রেশনে তাদের দেশত্যাগের কোনও তথ্য নেই। পুলিশ ও গোয়েন্দাদের ধারণা- তারা অবৈধ পথে সীমান্ত এলাকা দিয়ে পালিয়ে গেছেন। হেঁটে যেতে পারেন, গাড়িতে যেতে পারেন, স্থলপথেও অবৈধভাবে সীমান্ত পার হতে পারেন। তবে হাসিনার ঘনষ্ঠিজনরা কিভাবে দেশ ত্যাগ করলো তা এখনো সঠিক নয়। কেউ কেউ বলছে- আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঢিলেঢালা তৎপরতায় তারা দেশত্যাগের সুযোগ পেয়েছেন। সরকারের কোনো সংস্থার সুযোগ নিয়েও তারা দেশ ত্যাগের সুযোগ পেতে পারেন।

কলকাতায় বাংলাদেশের একটি টেলিভিশনের প্রতিনিধি জানান, সচরাচার তো নয়ই- বাংলাদেশ থেকে আসা এসব নেতাদের খুব একটা দেখা মেলে না। কামালসহ আরও যারা আছেন তারা গোপন স্থানে রয়েছে। গণমাধ্যম এড়িয়ে তো থাকছেনই স্থানীয়দের সাথেও সাক্ষাৎ করছেন না। তবে বাংলাদেশ সম্প্রতি এক মামলায় ফাঁসির রায় দেয়ার পর দেশটির গোয়েন্দা জরদারিতে রয়েছেন বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে আসা ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক কয়েকজন মন্ত্রী-এমপি। এরমধ্যে আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হওয়ায় তাকে বিশেষ নজরদারিতে রাখা হয়েছে বলে গোয়েন্দা সূত্র থেকে জানতে পেরেছেন স্থানীয় একাধিক গণমাধ্যমের সাংবাদিক।

সেখানকার একজন সাংবাদিক বলেন, দণ্ডপ্রাপ্তরা ভারত থেকে যাতে অন্য কোথাও পালাতে না পারে সেজন্য সরকার নজরদারিতে রাখার ব্যবস্তা নিয়েছে। যেহেতু বাংলাদেশে হত্যা মামলায় কামালের বিরুদ্ধে ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত তাই সরকারের বিভিন্ন দফতর নড়েচড়ে বসেছে। আর বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিষয়টি সম্পূর্ণ আলাদা। এটি দুই দেশের সরকারের উচ্চ পর্যায়ের বিষয়। শেখ হাসিনাকে হয়তো ভারত খুব সহজেই বাংলাদেশে প্রত্যর্পণ করবে না, তবে ফেরত যদি কাউকে পাঠাতেই হয় সে তালিকায় কামালের নাম থাকতে পারে।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম তার ফেসবুক পোস্টে লেখেন,‘আমি নিশ্চিত যে শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং জুলাই মাসের গণহত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে অভিযুক্ত আওয়ামীলীগ নেতাদের বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থার আওতায় আনা হবে। ভারত ইতোমধ্যে জানিয়েছে, জুলাই গণহত্যা মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণের অনুরোধ তারা পরীক্ষা করছে। তিনি আরও বলেন,‘আমরা জানি হাসিনার প্রতি সহানুভূতিশীল ব্যক্তিরা আছেন। তবুও আমি নিশ্চিত-‘ঢাকার কসাই’ খ্যাত আসাদুজ্জামান খাঁন কামালকে খুব শিগগিরই বিচারের মুখোমুখি করার জন্য বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনা হবে।

শেখ হাসিনার প্রায় ১৬ বছরের শাসনামলে সংঘটিত অপরাধগুলোর বিষয়ে যত তদন্ত এগোবে, ততই গণহত্যা ও গুমের ঘটনায় কামালের ভূমিকা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের নজরে আসবে। আরও বলেন,‘কামাল বা অন্যান্য আওয়ামী লীগ নেতা যত অর্থই ব্যয় করুন না কেন, জবাবদিহিতা এড়ানো সম্ভব হবে না। আমরা যদি একটি জাতি হিসেবে জুলাই গণহত্যার শিকারদের এবং হাসিনা আমলে সংঘটিত সব মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচার নিশ্চিত করতে দৃঢ় থাকি, তাহলে দায়ীদের পলায়ন ক্রমেই কঠিন হয়ে উঠবে। এটি কামালকে দিয়ে শুরু হবে-তারপর’।

এরআগে ভারতের একটি মিডিয়ায় কামালের দেওয়া এক সাক্ষাৎকারের প্রসঙ্গ টেনেপতিত স্বৈরাচার সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে বাংলাদেশের কসাই (বুচার অব বাংলাদেশ) বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেছেন, দেশের ছোট ছোট বাচ্চা, শিক্ষার্থী, শ্রমিক, কৃষক, রিকশাওলাকে নির্দয়ভাবে খুন করা হয়েছে, তার অন্যতম কসাই তিনি। কামাল বাংলাদেশের কসাই (বুচার অব বাংলাদেশ)। যে সব মিডিয়া তার নিউজ করে তাকে কাভারেজ দিচ্ছে, তাদের মানটা বুঝা যায়। মিডিয়ায় তার সাক্ষাৎকার প্রচারকে বড় রকমের আন্তর্জাতিক প্রোপাগান্ডা ক্যাম্পেইন বলে উল্লেখ করেন শফিকুল আলম। তিনি বলেন, পৃথিবীর কেউ কোনো কসাইকে প্লাটফর্ম (মিডিয়া কাভারেজ) দেয় না।