

স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় রাজবাড়ীর বিনোদপুর লোকোশেড এলাকায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একটি ক্যাম্প ছিল। পাক সেনারা শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে অসংখ্য মানুষকে ধরে এনে হত্যা করে লোকোশেডের পুকুরে ফেলে দিত। সে সময় রাজবাড়ী বেশ কয়েকটি ট্রেন চলাচল করত। যাত্রীবাহী ট্রেন রাজবাড়ী রেলওয়ে স্টেশনে থামলে পাক সেনা ও তাদের দোসররা ট্রেন থেকে সন্দেহভাজন যাত্রীদের ক্যাম্পে ধরে নিয়ে আসত। তাদের নির্মম নির্যাতনের পর লোকোশেড পুকুরে ফেলে দিত পাক সেনারা।
মুক্তিযুদ্ধ বাঙালির শ্রেষ্ঠ অর্জন হলেও অযত্ন আর অবহেলায় পড়ে আছে রাজবাড়ীর লোকোশেড বধ্যভূমি। সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে দিনদিন নষ্ট হচ্ছে অবকাঠামোগুলো। সারা বছর অযত্ন আর অবহেলায় পড়ে থাকে এসব। বিজয় দিবসসহ বিভিন্ন জাতীয় অনুষ্ঠানের আগে এসব স্থাপনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়।
সাধারণ মানুষ ও মুক্তিযোদ্ধাদের গণহত্যার স্মৃতি স্মরণে ১৯৯৮ সালে বধ্যভূমির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। ২০০৪ সালে বিভিন্ন পর্যায়ে কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর বধ্যভূমিটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়।
সম্প্রতি সরেজমিনে জেলা শহরের বিনোদপুর বধ্যভূমিতে গিয়ে দেখা যায়, বধ্যভূমিতে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভটির ভিতরে আগাছা রয়েছে। রেলিংয়ের ওপর দিয়ে কাঁথা, লেপসহ কাপড় শুকানো হচ্ছে। এ ছাড়া অবাধে গরু-ছাগল বিচরণ করছে। বধ্যভূমি এলাকায় স্মৃতিস্তম্ভে ১১টি সোলার স্ট্রিট লাইট স্থাপন করা হলেও ছয়টি লাইট নষ্ট হয়ে গেছে। দীর্ঘদিন ধরে এসব লাইট নষ্ট থাকলেও প্রতিস্থাপনের কোনো উদ্যোগ নেই। জানতে চাইলে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু তালেব বলেন, ১৪ ডিসেম্বর থেকে বধ্যভূমিতে শ্রদ্ধা নিবেদনসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান করা হবে। সারা বছর বধ্যভূমি অযত্ন অবহেলায় থাকে এটা আমরা জানি। ডিসেম্বর মাস এলে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়। আশা করছি, দ্রুত সময়ের মধ্যেই বধ্যভূমিসহ মুক্তিযুদ্ধের সব স্মৃতিস্তম্ভ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও রং করা হবে। তবে সারা বছর বধ্যভূমি এলাকা পরিষ্কার থাকলে ভালো হয়।
রাজবাড়ী সরকারি কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জোবায়ের শেখ বলেন, রাজবাড়ীতে মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে লোকোশেড বধ্যভূমি, এরেন্দা দত্তবাড়ী স্মৃতিসৌধ, মালিয়াটে স্মৃতিস্তম্ভসহ পাংশা উপজেলা মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধ রয়েছে। এগুলো সারা বছর অযত্ন অবহেলায় পড়ে থাকে। স্থাপনার অনেক জিনিস চুরি হয়ে গেছে। আমাদের জন্য এটা দুঃখজনক। রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক সুলতানা আক্তার বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে রাজবাড়ীর লোকোশেড বধ্যভূমিতে পরিষ্কারের কাজ করা হবে। আমরা যথাযথ মর্যাদায় শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ও বিজয় দিবসে সেখানে শ্রদ্ধা নিবেদন করব।
আপনার মতামত লিখুন :