অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের ১১ মাস অতিবাহিত হয়েছে। ছাত্র-জনতা অভ্যুত্থানের যে প্রত্যাশা নিয়ে হাজারো মানুষ জীবন দিয়েছে সে প্রত্যাশা কি পূরণ হয়েছে? ১১ মাস পর মানুষ পাওয়া না পাওয়ার হিসাব মেলাতে শুরু করেছে। সর্বত্রই এ প্রশ্ন উঠছে হাসিনা ভারতের ‘নাচের পুতুল’ ছিল; ড. ইউনূস কি মার্কিনিদের ‘নাচের পুতুল’ হয়ে গেছেন? ভারতের সঙ্গে পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের বিতর্কিত দ্বিপাক্ষিক চুক্তিগুলো প্রকাশ না করার নেপথ্যের রহস্য কি? ’৯১ সালে বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমদ, ’৯৬ সালে বিচারপতি হাবিবুর রহমান ও ২০০১ সালে বিচারপতি লতিফুর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকার গঠনের ৯০ দিনের মাথায় নির্বাচন করতে পারলেও ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার ১১ মাসেও নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করতে পারছে না কেন? সোশ্যাল মিডিয়ায় নেটিজেনরা এ নিয়ে তীব্র ভাষায় প্রশ্নবানে জর্জরিত করছেন।
কেউ কেউ বলছেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনা ভারতের স্বার্থরক্ষা করেছেন এখন ড. মুহাম্মদ ইউনূস যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থরক্ষা করছেন। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর দেশের কাণ্ডারী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ভারতের ষড়যন্ত্র থেকে দেশকে তিনি রক্ষা করেছেন। কিন্তু তিনি কি দেশ ও জনগণের স্বার্থরক্ষায় কার্যক্রম চালাচ্ছেন? মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিতর্কিত ব্যক্তি তারপরও তিনি যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থে অনড়, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অনেক বিতির্কিত সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন কিন্তু ভারতের জাতীয় স্বার্থে কোনো ছাড় দিচ্ছেন না। কিন্তু আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব ড. মুহাম্মদ ইউনূস কি দেশের স্বার্থকে প্রাধান্য দিচ্ছেন? আইএমফের ঋণ নিয়ে পাকিস্তানে অর্থনীতির বিপর্যয় ঘটেছে; অথচ বাংলাদেশ সেই ঋণ কঠিন শর্তে নিচ্ছে।
৫ আগস্ট যখন ছাত্র-জনতা ঐকবদ্ধ্যভাবে আওয়ামী লীগের পতন ঘটায় এবং শেখ হাসিনা পালিয়ে ভারতে চলে যান; তখন নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস ছিলেন ফ্রান্সে। বিদেশ থেকে দেশে ফিরে তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার পদ অলঙ্কৃৃত করেন। অতঃপর দেশের মানুষ নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। দীর্ঘ ১৫ বছর ভারতের আদেশ-নির্দেশে দেশ চলেছে; পতিত হাসিনা দিল্লির ইচ্ছামতো রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। দিল্লির শৃঙ্খলে বন্দি মানুষ নিজেদের ভাগ্য নিজেরাই গড়তে জুলাই গণঅভ্যুত্থান আন্দোলনে অংশ নেয়। রক্তে রঞ্জিত হয় ঢাকার রাজপথ। মানুষের প্রত্যাশা ছিল ভোটের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা হবে এবং দেশের সার্বভৌমত্ব সমুন্নতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। কিন্তু গত ১১ মাসে অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রমে মানুষ চরমভাবে হতাশ হয়ে পড়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কেউ কেউ বলছেন, সাদ্দাম হোসেনের পতনের পর ইরাকে যেমন মার্কিনিরা জালাল তালাবানিকে ক্ষমতায় বসায় এবং আফগানিস্তানের মোল্লা ওমরকে ক্ষমতাচ্যুত করে হামিদ কারজাইকে যেভাবে ক্ষমতায় বসানো হয়েছিল; মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অনেকটা সে আদলেই হাসিনা পালানোর পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ক্ষমতায় বসিয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের ১১ মাসের বিভিন্ন কার্যক্রম, সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও কর্মতৎপরতা বিশ্লেষণ করে রাজনৈতিক ভাষ্যকারাগণ এমনই মন্তব্য করছেন।
এটা ঠিক পালানোর আগে বিগত ১৫ বছরে শেখ হাসিনা দেশের অর্থনীতিকে পঙ্গু করে ফেলেছেন। শিল্পকারখানা, ব্যাংক-বীমা সবকিছুতেই বিধ্বস্থ অবস্থা। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর প্রবাসীদের রেমিট্যান্স ছাড়া অর্থনীতির কোনো সূচকেই উন্নতি হয়নি। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ বাড়াতে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সম্মেলন করা হয়েছে প্রচুর অর্থ ব্যয়ে। কিন্তু বিদেশিরা অন্তর্বর্তী সরকারের সময় বিনিয়োগে আগ্রহী নন। বেকারত্ব বাড়ছে হুহু করে। য্দ্ধুরত মিয়ানমারে ট্রানজিট দেয়ার চেষ্টা চলছে। সমুদ্র বন্দর বিদেশিদের দেয়ার পাঁয়তারা চলছে। স্টারলিং আনা হয়েছে বিদেশিদের ব্যবসা দিতে। দেশি মোবাইল অপারেটরদের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে বিদেশি অপারেটরদের স্বার্থরক্ষা করা হচ্ছে। সংস্কারের নামে একদিকে দিনের পর দিন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ চলছে; অন্যদিকে নির্বাচন পেছানোর চেষ্টায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে অস্থির করে তোলা হচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ড. ইউনূস প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণে মানুষ আশাবাদী হলেও উপদেষ্টা পরিষদ ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে বিদেশিদের বসানোয় প্রথম থেকেই বিতর্ক ওঠে। প্রখ্যাত সাংবাদিক এম এ আজিজ জানান, উপদেষ্টাসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে ১৭ জনকে বসানো হয়েছে যারা বিদেশি নাগরিক। দীর্ঘদিন ধরে তারা বিদেশে থেকেছেন এবং দেশ ও দেশের মানুষের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক ছিল না। তাদের হায়ারে এনে গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হয়েছে। ওই ব্যক্তিরা নিজেদের ইচ্ছামতো কাজ করছেন এবং বিভিন্ন গ্রুপের স্বার্থরক্ষা করছেন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে এদের কোনো ভূমিকা ছিল না। ওদের বসানো হয়েছে এবং তারা নিজেদের মতো করে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। দেশ কোনো বিপদে পড়লে এরা বিদেশে চলে যাবেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বিশিষ্টজন বলেছেন, সেন্ট মার্টিন কার স্বার্থে বন্ধ করে রাখা হয়েছে; সমুদ্র বন্দর কার স্বার্থে বিদেশিদের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে এটা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্বরত অনেকেই নিজেদের স্বার্থরক্ষা করছেন, লুটপাট করছেন। ড. ইউনূস প্রায়ই ভারতের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিচ্ছেন অথচ ভারতের সঙ্গে বিগত হাসিনা সরকারের সম্পাদিত চু্িক্তগুলো বাতিলের দাবি কানে নিচ্ছেন না। শুধু তাই নয়, দিল্লির স্বার্থে সম্পাদিত ওই চুক্তিগুলো প্রকাশ করছেন না। শুধু কি তাই ড. ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে তার প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ গ্রুপের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান দ্রুত সরকারি অনুমোদন ও বিশেষ সুবিধা পায়। ঢাকা শহরে গ্রামীণ ইউনিভার্সিটির অনুমোদন, গ্রামীণ এমপ্লয়মেন্ট সার্ভিসেসের জনশক্তি রফতানির লাইসেন্স, গ্রামীণ টেলিকমের ডিজিটাল ওয়ালেট চালুর অনুমতি। এছাড়াও গ্রামীণ ব্যাংকের কর মওকুফ ও সরকারিভাবে ব্যাংকে শেয়ারের পরিমাণ ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা।
ড. ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেয়ার পর দেশের মানুষ আশাবাদী ছিল নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূসের নেতৃত্ব জ্ঞান ও পৃথিবীব্যাপী পরিচিতিকে কাজে লাগিয়ে উন্নয়নসহ দেশের আমূল পরিবর্তন হবে। কিন্তু বাস্তবে গত এক বছরে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, খাদ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তা, দক্ষ জনশক্তি তৈরি ও কর্মসংস্থান বাড়ানো, আর্থসামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, রাজস্ব আয় বাড়ানো, ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নয়ন, এলডিসি থেকে উত্তরণ প্রস্তুতি, শিল্পের উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানোসহ কোনো কিছুতেই অগ্রগতি নেই। বরং আগের থেকে অর্থনৈতিক কার্যক্রমে আরো ধীরগতিতে এসেছে। এ অবস্থা বিরাজমান থাকলে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ও এডিবির চুক্তি থেকে দেশ বের হতে পারবে না। সঠিক পদক্ষেপের অভাবে অর্থনীতির বর্তমান গতিও কমে যাচ্ছে। দেশের উন্নয়নে বর্তমান সরকারের পদক্ষেপ নেই বললেই চলে। আর তাই দিন দিন দেশ পিছিয়ে যাচ্ছে। পাকিস্তান ও শ্রীলংকা আইএমএফ’র ঋণে দেউলিয়ার পথে চলে গেছে। চুক্তি করে বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার ষড়যন্ত্রও দেখছেন অনেকে।
এদিকে দীর্ঘদিন থেকে ব্যবসায়ীরা বলে আসছেÑ আওয়ামী লীগ ও ভারত পরিকল্পনা করে দেশের বস্ত্রখাত ধ্বংস করছে। বর্তমান সরকারও তাদের ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে বস্ত্র শিল্পকে গলা চেপে ধরছে। সরকার এক টাকার বিনিয়োগও আনতে পারেনি। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বব্যাপী নিন্দিত হলেও আমেরিকার অর্থনীতির স্বার্থে তিনি কোনো আপোষ করছেন না। এমনকি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরন্দ্রে মোদিকে নিয়ে নানা সমালোচনা থাকলেও দেশ এবং অর্থনীতির স্বার্থে আপোষহীন। অথচ প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস দায়িত্ব গ্রহণের পর তাঁর নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠানগুলো প্রাণ ফিরে পেয়েছে। অন্যান্য ব্যবসায়ী বা প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি হলেও তার যেন কোনো দায় নেই বললেই চলে।
সম্প্রতি চলতি বছরের বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে। তাতে দেখা যায়, তুলা আমদানিতে নতুন করে ২ শতাংশ অগ্রিম আয়কর (এআইটি) আরোপ করা হয়েছে। অথচ সুতা ও বস্ত্রকলগুলো বন্ধ হলে দেশের তৈরি পোশাক শিল্প দেউলিয়া হতে এক বছরের বেশি সময় লাগবে না বলে অভিযোগ করেছেন ব্যবসায়ীরা। অপরদিকে গ্রামীণ অর্থনীতি ও দেশের মানুষের পুষ্টির অন্যতম উৎস পোল্ট্রি শিল্প ধ্বংসের পথে। পোল্ট্রি কেবল খাদ্য নিরাপত্তাই নিশ্চিত করে না-এটি লাখো মানুষের জীবিকার উৎসও। সম্ভাবনাময় এই শিল্পটি বর্তমানে অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে, যা শুধু খামারিদেরই নয়, বরং দেশের প্রতিটি নাগরিকের জন্যই এক অশনিসংকেত। অথচ দেশে বাণিজ্যিকভাবে ব্রয়লার, লেয়ার শিল্পের যাত্রা শুরু হয় প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সময়ে বা আশির দশকে, যা পরবর্তী সময়ে নব্বইয়ের দশকে গতিশীলতা লাভ করে।
এতদিনে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এই খাতকে বৃহত্তম বাণিজ্যিক খাতে পরিণত করার কথা ছিল। কিন্তু দিন দিন যেন পিছিয়ে যাচ্ছে এই শিল্প। তাই এ শিল্পের সংকট কেবল অর্থনীতির নয়, একটি জাতির সম্ভাবনারও চরম ঝুঁকির ইঙ্গিত দেয়। এক্ষেত্রেও বর্তমান সরকারের কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ নেই বললেই চলে। এছাড়া স্থানীয় ইলেকট্রনিক্স উৎপাদন শিল্পকেও বিপাকে ফেলতে যাচ্ছে সরকার। স্থানীয় পর্যায়ে তৈরি হচ্ছে ফ্রিজ ও এসির এমন খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে। এতে ঝুঁকির মুখে পড়েছে দেশীয় শিল্পখাত। এর ফলে স্থানীয় ইলেকট্রনিক্স উৎপাদন শিল্পে দেশীয় শিল্পোদ্যাক্তাদের বিদ্যমান কয়েক হাজার কোটি টাকার বিশাল বিনিয়োগই শুধু নয়; লক্ষাধিক লোকের কর্মসংস্থানও ঝুঁকির সম্মুখীন হবে। বাধাগ্রস্ত হবে সম্পূর্ণ উৎপাদনমুখী দেশীয় ইলেকট্রনিক্স ও প্রযুক্তিপণ্য শিল্প খাতের টেকসই বিকাশ। ইলেকট্রনিক্স খাতে উদ্ভাবনী ও প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতায় বাংলাদেশের অগ্রগতি থমকে যাবে। যেখানে বাংলাদেশ ইলেকট্রনিক্স ও প্রযুক্তিপণ্য দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রফতানি করছে। দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো আগামী দিনে যেখানে গাড়ি উৎপাদনের চিন্তা করছে সেখানে এই খাতটিকে সরকার খাদের কিনারায় ফেলে দিচ্ছে। এদিকে সরকারের পক্ষ থেকে বার বার বলা হচ্ছে হাসিনা ভারত ও আমেরিকার সঙ্গে দেশবিরোধী চুক্তি করেছেÑ বর্তমান সরকার তাও জাতির সামনে তুলে ধরছে না।
অথচ স্বৈরাচার হাসিনা লুটপাট-অর্থপাচার করলেও দেশের উন্নয়নে কিছুটা হলেও অবদান রেখেছে। কথিত আছে- দেশে দেশে আমেরিকা যাদের ক্ষমতায় বসায় তাদের সঙ্গে রাষ্ট্রবিরোধী চুক্তি করে। যদিও শোনা যাচ্ছে- বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর আমেরিকার সঙ্গে দেশবিরোধী চুক্তি করেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সরকারের প্রধান অগ্রাধিকার হওয়া উচিত ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগের পরিবেশ নিশ্চিত করা। কিন্তু হাসিনার মতোই এই সরকার এই জায়গা থেকে দূরে। অথচ দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ভালো না হলে অর্থনীতি ভালো হবে না; অর্থনীতি ভালো না হলে কর্মসংস্থান হবে না। সেটা না হলে দেশে স্থিতিশীলতা আসবে না।
বস্ত্রকলের মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, সরকারের আট মাসে এক টাকার বিনিয়োগও আসেনি। ১৯৭১ সালে খুঁজে খুঁজে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়েছে, আর ২০২৫ সালে শুধু শিল্প নয়, শিল্পোদ্যোক্তাদের মেরে ফেলা হচ্ছে। তিনি বলেন, এটাকে আমরা ষড়যন্ত্র মনে করি। একই সঙ্গে শিল্প বাঁচাতে না পারলে দেশে দুর্ভিক্ষ হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। শওকত আজিজ রাসেল বলেন, আমাদের উপদেষ্টা সাহেবরা মনে হয় উটপাখির মতো হয়ে গেছেন। চারদিকে কী হচ্ছে মনে হয় তাঁরা দেখতে পাচ্ছেন না। প্রতিনিয়ত আমাদের কারখানা লে-অফ হচ্ছে। কিছুদিন পর মানুষ রাস্তায় নামবে। আরো ভয়াবহ পরিস্থিতি হবে। দুর্ভিক্ষের মতো অবস্থা হবে, যদি আপনি শিল্পকে বাঁচাতে না পারেন।
বিটিএমএ সভাপতি বলেন, আমরা তো গ্যাস বিল দিই, তাহলে গ্যাস আসবে না কেন। কারণ আমরা তো গ্যাসের ওপর নির্ভর করেই ইন্ডাস্ট্রি করেছি। এখন ব্যাংক চাচ্ছে ব্যাংকের টাকা দ্রুত ফেরত দাও, কিন্তু কারখানা তো চলে না, আমি কোথা থেকে টাকা এনে দেবো। ব্যাংকঋণের সুদ এত বেশি কেন? আর কত জুলুম হবে আমাদের ওপর। শিল্প না বাঁচাতে পারলে দুর্ভিক্ষ হয়ে যাবে।
সূত্র মতে, দূরদর্শিতার অভাবে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ক্রমেই বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ছে। বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবাহ কমে যাচ্ছে। ঋণের সুদহার বর্তমানে ১৬ শতাংশে, যা বিনিয়োগকে নিরুৎসাহিত করছে। একই সঙ্গে আগের তুলনায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে ঠিক, কিন্তু তা এখনো কাক্সিক্ষত পর্যায়ে আসেনি। সমস্যা আছে। এছাড়া গত ১৬ বছর হাসিনা ফ্যাসিজম কায়েম করায় নির্বাচনের নামে প্রহসন করেছে। বর্তমান সরকারের কাছেও রাজনৈতিক দলগুলো দ্রুত নির্বাচনের তাগিদ দিয়েছেন।
যদিও ইতোমধ্যে নির্বাচনের দিনক্ষণ ১০ ফেব্রুয়ারি বলা হয়েছে। যে কারণে ইতোমধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য আগের থেকে কিছুটা স্থিতিশীলতার পথে। যদিও এখনও অনিশ্চয়তা থাকায় স্বাভাবিক গতি আসছে না। একদিকে উচ্চ সুদ, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাসহ বিভিন্ন অনিশ্চয়তা, এ বাস্তবতায় দেশে এখনও বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হচ্ছে। নতুন করে কেউ বিনিয়োগে আসছেন না। সেই সঙ্গে যারা আগে বিনিয়োগ করেছেন, তারাও বিনিয়োগ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন। অনেকেই ব্যবসা বন্ধ করে দিচ্ছেন।
বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান পরিস্থিতি
বিভিন্ন ক্ষেত্রে অস্থিরতার কারণে বিনিয়োগকারীদের এখন কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। অনেক প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা কমে গেছে। ব্যবসা সম্প্রসারণও থমকে গেছে। বিনিয়োগের ওপর এমন নেতিবাচক প্রভাবের কারণে নতুন কর্মসংস্থানের গতি ধীর।
বিনিয়োগ পরিস্থিতি বুঝতে মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানি অন্যতম নির্দেশক। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য ঋণপত্র বা এলসি খোলা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৩০ শতাংশ কমেছে। একইভাবে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির ঋণপত্র নিষ্পত্তি কমেছে প্রায় ২৫ শতাংশ। এদিকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ ত্রৈমাসিক শ্রমশক্তি জরিপে দেখা গেছে, এক বছরের ব্যবধানে দেশে বেকার বেড়েছে সোয়া ৩ লাখ।
অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, জুলাই অভ্যুত্থানের পর রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ও শ্রমিকদের বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য সুবিধা আদায়ের দাবিতে আন্দোলন-হামলার ঘটনায় কিছু পোশাক কারখানা এবং অন্যান্য ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। উৎপাদনশীল খাতের সঙ্গে জড়িত শ্রমিকদের একটি অংশ বেকার হয়ে পড়েছে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি অন্যতম চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে।
রাজস্ব আয় কাক্সিক্ষত নয়, চাপ সুদ পরিশোধে
চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে রাজস্ব আয় ধরা হয়েছিল ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে কমিয়ে করা হয় ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) গত অর্থবছরে ৩ লাখ ৬৮ হাজার ১৭৭ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছে। ভ্যাট, আয়কর ও শুল্ক-এই তিন প্রধান উৎস থেকে এই অর্থ সংগ্রহ করা হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রা থেকে প্রায় এক লাখ কোটি টাকা কম।
দেশি-বিদেশি উৎসে এখন সরকারের মোট ঋণ প্রায় সাড়ে ১৮ লাখ কোটি টাকা। নতুন বাজেট বাস্তবায়ন করতে দেশি ও বিদেশি মিলে ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকার ঋণের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে শুধু সুদ পরিশোধেই সরকারের ব্যয় ধরা হচ্ছে ১ লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের বাজেটে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা এনবিআরকে আদায় করতে হবে। এনবিআরবহির্ভূত কর এবং কর ব্যতীত রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ৬৫ হাজার কোটি টাকা।
ওয়ার্ল্ডস পোলট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন-বাংলাদেশ শাখা (ওয়াপসা-বাংলাদেশ) সভাপতি মসিউর রহমান বলেছেন, পোল্ট্রি শিল্পকে আধুনিকায়ন করতে যন্ত্রাংশ আমদানি করতে হয়। এক্ষেত্রে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ডিউটি দিতে হচ্ছে। এছাড়া করপোরেট কর ১৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৭ দশমিক ৫ শতাংশে যাওয়া একটি বিরাট ধাক্কা হবে। এ ধাক্কা আগামী দু’বছর পর বোঝা যাবে। বিশেষ করে পোল্ট্র্রি ফিডের দাম গত ৬ মাসে তিন থেকে চার টাকা কেজিতে কমানো হয়েছে। করপোরেট কর বাড়ানোর ফলে ফিডের মূল্য আগের স্থানে চলে যাওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে।
তিনি বলেন, আয়কর, যন্ত্রাংশ আমদানিসহ অন্যান্য বিষয়ে সুবিধা না থাকলে এ খাতে নতুন বিনিয়োগকারী আসবে না। অগ্রিম আয়কর (এআইটি) আগে যা ছিল সেটি দিতে কষ্ট হচ্ছে। এখন নতুন করে এআইটি বাড়ানো হয়েছে, যা অসম্ভব ব্যাপার। জানা গেছে, পোল্ট্রি খাতে টার্নওভার ট্যাক্স শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১ শতাংশ করা হয়েছে। এটি শূন্য দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা দরকার বলে মনে করছে পোল্ট্র্রি খাতের উদ্যোক্তারা।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেন, রাজস্ব আহরণ, বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান তৈরি না হওয়াসহ বর্তমানে দেশের সার্বিক অর্থনীতি বিপর্যস্ত। এ থেকে উত্তরণে চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত করে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন তিনি।
এদিকে আওয়ামী সরকার পতনের ১১ মাস পরও পরিবর্তনের কোনো ছোঁয়া লাগেনি টেলিযোগাযোগ খাতে। শীর্ষ দু-একটি পদে পরিবর্তন ছাড়া বাকিরা এখনো বহাল তবিয়তে। এই খাতের শ্বেতপত্র প্রকাশ কিংবা সংস্কার নিয়ে কোনো সুখবর নেই এই দীর্ঘ সময়েও। বরং যা হচ্ছে তা দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোকে লাভবান করার। বিশেষ করে মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোন, রবি আজিয়াটা ও বাংলালিংক এই তিন প্রতিষ্ঠানকে সব ধরনের সুযোগ প্রদান করতেই সবচেয়ে বেশি সচেষ্ট টেলিযোগাযোগ দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব।
দেড় দশকের বেশি সময় পর দেশের টেলিযোগাযোগ খাতের নেটওয়ার্ক ও লাইসেন্সিং ব্যবস্থাপনা সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এরই অংশ হিসেবে ‘টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক ও লাইসেন্সিং ব্যবস্থার সংস্কার নীতিমালা’ এর খসড়া প্রকাশ করেছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ। যেখানে লাইসেন্সিং কাঠামোয় আনা হয়েছে ব্যাপক পরিবর্তন। ছেঁটে ফেলা হচ্ছে টেলিকম শিল্পের ভ্যালু চেইনে থাকা অনেক দেশি প্রতিষ্ঠানকে। বাড়তি সুবিধা দেয়া হচ্ছে বিদেশি অপারেটরদের। যার ফলে একদিকে যেমন সরকারের রাজস্ব আয়ে লাগবে বড় ধাক্কা, অন্যদিকে মুনাফা বেড়ে যাবে বিদেশি কোম্পানিগুলোর। তবে এতে গ্রাহক পর্যায়ে পৌঁছাবে না কোনো সুফল। উল্টো চাকরি হারাবেন হাজারেরও বেশি দক্ষ প্রযুক্তি কর্মী।
প্রস্তাবিত এ নীতিমালায় প্রতিষ্ঠানগুলোর বিদেশি মালিকানার সীমাও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে এএনএসপি লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠানে সর্বোচ্চ ৮০ শতাংশ বিদেশি মালিকানা থাকতে পারবে। এনআইসিএসপি লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৫৫ শতাংশ বিদেশি মালিকানার সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে তা ৮০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। আইসিএসপি লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে বিদেশি মালিকানার সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে সর্বোচ্চ ৪৯ শতাংশ। বর্তমানে শুধু আইসিএক্স খাত থেকে সরকার প্রতি বছর ৩শ’ কোটি টাকা রাজস্ব আয় করে। প্রস্তাবিত পদ্ধতিতে আইসিএক্স বিলুপ্তির পর এই আয় স্থানান্তরিত হয়ে মোবাইল অপারেটরদের পকেটে যাবে। বিপরীতে রাষ্ট্র পাবে মাত্র ১৬ থেকে ১৭ কোটি টাকা।
আইসিএক্স অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মুস্তাফিজুর রহমান বললেন, বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানকে আমাদের দেশীয় সম্পদ তুলে দেয়ার জন্য বিটিআরসি যেভাবে উঠেপড়ে লেগেছে তার ফলে কী হবে? আমাদের যারা দেশীয় উদ্যোক্তা রয়েছেন, দেশীয় প্রকৌশলী যারা আছেন, সম্পদ যা আছে সেটা চলে যাবে। একইভাবে আন্তর্জাতিক কল পরিচালনা খাতের আয়ের রাজস্বেও হোঁচট খাবে বাংলাদেশ। বর্তমানে আইজিডব্লিউ থেকে সরকার সরাসরি রাজস্ব পায় শত কোটি টাকার বেশি। স্থানীয় ২৩টি আইজিডব্লিউ বাতিল করা হলে কোনো সুফল পাবে না গ্রাহক। বরং শত কোটি টাকার রাজস্ব বিলীন হবে বিদেশি অপারেটদের ঘরে।
ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আইএসপিএবি) সভাপতি এম এ হাকিম বলেন, খসড়া নীতিমালায় কিছু শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, সেগুলো যদি প্রয়োগ করা হয় তাহলে দেশীয় উদ্যোক্তারা আগামী ছয় মাস থেকে এক বছর টিকে থাকবে। বহুজাতিক যেসব প্রতিষ্ঠান আছে বিশেষ করে টেলিকম অপারেটররা একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করবে।
এদিকে গত মার্চে স্যাটেলাইট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান স্টারলিংককে বাংলাদেশে সেবাদানের সুযোগ দেয়া হয়েছে। তবে যে প্রক্রিয়ায় এই সুযোগ দেয়া হয়েছে তা নিয়ে বিতর্ক চলছে স্থানীয় উদ্যোক্তাদের মধ্যে। সেবাদান শুরু করলেও এখনো প্রতিষ্ঠানটিকে কোনো নীতিমালার আওতায় আনা হয়নি। এমনকি তাদের সেবার যে মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে তাও নিজেদের ইচ্ছেমতো।
আবার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই গ্রাহক স্বার্থের জন্য কথার ফুলঝুড়ি ছড়িয়েছেন বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব। ঘোষণা দিয়েছেন ইন্টারনেটের মূল্য কমানোর। উল্টো গত ৫ আগস্টের পর তা বেড়েছে। সেবার মান নেমেছে তলানিতে। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের মূল্য কমানো ও গতি বৃদ্ধির ঘোষণা ঘটা করে দিলেও তার কোনো সুফল পৌঁছেনি গ্রাহক পর্যায়েই। দেশের হাইটেক পার্কগুলোতেও বিগত ১১ মাসে আসেনি কোনো নতুন বিনিয়োগ।
আপনার মতামত লিখুন :