অভিভাষণে প্রধান বিচারপতি, বিগত বছরে বিচার বিভাগের ওপর নগ্ন হস্তক্ষেপ হয়েছে


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : সেপ্টেম্বর ২২, ২০২৪, ৫:৫৯ পূর্বাহ্ণ /
অভিভাষণে প্রধান বিচারপতি, বিগত বছরে বিচার বিভাগের ওপর নগ্ন হস্তক্ষেপ হয়েছে

বিগত বছরগুলোতে বিচার বিভাগের ওপর নগ্ন হস্তক্ষেপ হয়েছে। বিচার বিভাগকে ব্যবহার করা হয়েছে শঠতা, নিপীড়ন ও বঞ্চনার হাতিয়ার হিসাবে। এ মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ।

তিনি বলেন, বিচারকদের নিয়োগ,বদলি, পদোন্নতিতে আইনমন্ত্রণালয়ের কর্তৃত্ বিলোপ করা না গেলে বিচার বিভাগ নির্বাহী বিভাগ থেকে স্বাধীন হবে না। অধস্তন আদালতের বিচারকদের পদোন্নতি ও বদলিতে আইন মন্ত্রণালয়ের কর্তৃত্ব বিলোপ করতে হবে। বিচার বিভাগের জন্য করতে হবে সুপ্রিমকোর্টের অধীনে পৃথক সচিবালয়। গতকাল শনিবার সুপ্রিমকোর্টের ইনার গার্ডেনে অধস্তন আদালতের বিচারকদের উদ্দেশ্যে দেয়া অভিভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।

এ সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অন্তর্বর্তীকালিন সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল ও অ্যাটর্নি জেনারেল মো: আসাদুজ্জামান বিশেষ অতিথি হিসেবে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। সামনে সমাসীন ছিলেন সারাদেশের বিভিন্ন আদালতে কর্মরত বিবিভন্ন পর্যায়ের অন্তত: ২ হাজার বিচারক। অভিভাষণে স্বাগত বক্তব্য দেন সুপ্রিমকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল আজিজ আহমদ ভুঁঞা।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে ছাত্র-জনতার আন্দলোনে শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। অনুষ্ঠানে বিচারকদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন নওগাঁর চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বিশ্বনাথ মণ্ডল ও খুলনা জেলা ও দায়রা জজ মাহমুদা খাতুন। অভিভাষণ অনুষ্ঠানে সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগের বিচারপতি, সুপ্রিম কোর্ট রেজিস্ট্রির কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।

প্রধান বিচারপতি বক্তব্যে আরো বলেন, স্বাধীন ও শক্তিশালী বিচার বিভাগের জন্য মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করতে হবে। বিচার বিভাগের জন্য সুপ্রিম কোর্টে পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেন, বিচারকদের প্রকৃত স্বাধীনতা নিশ্চিত হবে না যতদিন বিচার বিভাগ নিয়ে দ্বৈত শাসন বিলোপ না হয়। অধস্তন আদালতের বিচারকদের পদোন্নতি ও বদলিতে আইন মন্ত্রণালয়ের কর্তৃত্ব বিলোপ করতে হবে। বিচার বিভাগের জন্য করতে হবে সুপ্রিমকোর্টের অধীনে পৃথক সচিবালয়। পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠার জন্য শিগগিরই মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হবে।

প্রধান বিচারপতি বলেন, শাসনের আইন নয়, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করাই বিচার বিভাগের মূল দায়িত্ব। বিচারকদের বদলি, পদায়ন ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য নীতিমালা করা হবে। বিগত বছরগুলোতে বিচার বিভাগের ওপর নগ্ন হস্তক্ষেপ হয়েছে উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, শঠতা, নিপীড়ন ও বঞ্চনার হাতিয়ার হিসাবে বিচার বিভাগকে ব্যবহার করা হয়েছে। ন্যায় বিচারের মূল্যবোধকে বিনষ্ট ও বিকৃত করা হয়েছে। শঠতা, বঞ্চনা, নিপীড়ন ও নির্যাতনের হাতিয়ার হিসাবে বিচার বিভাগকে ব্যবহারের চেষ্টা করা হয়েছে। এতে বিচার বিভাগের ওপর মানুষের আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে। অথচ বিচার বিভাগের সবচেয়ে বড় শক্তির জায়গা হচ্ছে মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস। তাই নতুন এই বাংলাদেশে আমরা এমন একটি বিচার বিভাগ গড়তে চাই যেটি বিচার এবং সততা ও অধিকারবোধের নিশ্চয়তার একটি নিরাপদ দূর্গে পরিণত হবে।

বিচার বিভাগে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করে প্রধান বিচারপতি বলেন, সুপ্রিমকোর্টসহ সারাদেশের আদালতে দুর্নীতিকে কোনো প্রশয় দেয়া হবে না। কোনো জেলা জজ যদি তার অধীনের আদালতে দুর্নীতি নির্মূলে ব্যর্থ হন সেটা তার অযোগ্যতা হিসেবে বিবেচিত হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় ড. আসিফ নজরুল বলেন, বিচার বিভাগ ব্যবহার করে মানুষকে হয়রানি করার সংস্কৃতি থেকে হয়ে আসতে হবে। শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে বিচার বিভাগ থেকে অনেক অবিচার হয়েছে।বিচার বিভাগ থেকে যেন আর কোনো অবিচার না হয় সেটা নিশ্চিত করতে হবে। এমন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠা করতে হবে যেখানে মানুষ ন্যায় বিচার পায়। গায়েবি মামলা দিয়ে মানুষকে হয়রানি এই অন্তর্বর্তীকালিন সরকার সমর্থন করে না। ঢালাও ভাবে মামলা দিয়ে হয়রানি করার সংস্কৃতি থেকে বের হতে হবে। এ ক্ষেত্রে বিচারকদের দেখতে হবে অযথা নাগরিকরা যেন হয়রানি না হয়। অন্তর্বর্তীকালিন সরকার মেধা, যোগ্যতা ও সততাকে মূল্যায়ন করে উল্লেখ করে আসিফ নজরুল বলেন,বর্তমান প্রধান বিচারপতি নিয়োগ তার বড় প্রমাণ ।